নেপালকে উড়িয়ে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ

সাফ অনূর্ধ্ব-২০ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ

ক্রীড়া প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার , ২৯ আগস্ট, ২০২৪ at ৪:৪৯ পূর্বাহ্ণ

এইতো মাত্র কদিন হলো। গত ২৫ আগস্ট পাকিস্তানকে পাকিস্তানের মাটিতে টেস্ট ম্যাচে হারিয়ে ইতিহাস গড়েছিল বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। সে আনন্দের রেশ কাটতে না কাটতে এবার আরো একবার আনন্দে ভাসাল অনূর্ধ্ব২০ দলের ফুটবলাররা। দেশের পরিবর্তিত পরিস্তিতে চারদিকে যখন বন্যার পানিতে ভাসছে দেশ তখনই বাংলার যুব ফুটবলাররা যেন স্বস্তির পরশ বুলিয়ে দিল দেশের মানুষের ওপর। ভারতের মতো শক্তিধর দলকে হারিয়ে ফাইনালে জায়গা নেওয়া বাংলাদেশ ফাইনালে নেপালকে এক রকম উড়িয়েই দিল। অথচ এই দলটির কাছে গ্রুপ পর্বের খেলায় হেরেছিল বাংলাদেশের যুবারা। কিন্তু ফাইনালে এসে সে হারের প্রতিশোধ নেওয়ার পাশাপাশি শিরোপা জয়ের আনন্দে মাতল বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব২০ ফুটবল দল। নেপালের ললিতপুরের আনফা কমপ্লেক্সে গতকাল বুধবার ৪১ গোলে স্বাগতিক নেপাল অনূর্ধ্ব২০ দলকে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশের যুবারা। বয়সভিত্তিক এই প্রতিযোগিতায় প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হলো বাংলাদেশ।

চ্যাম্পিয়নদের পক্ষে দুটি গোল করেন মিরাজুল ইসলাম। একটি করে গোল করেছেন রাব্বী হোসেন রাহুল ও পিয়াস আহমেদ নোভা। ২০২২ সালে অনূর্ধ্ব২০ ক্যাটাগরির আসরে ভারতের বিপক্ষে হেরে রানার্সআপ হয়েছিল বাংলাদেশ। এবার সেমিফাইনালে সেই ভারতকে টাইব্রেকারে ৪৩ গোলে হারিয়ে ফাইনালের মঞ্চে উঠে আসে বাড়তি আত্মবিশ্বাস নিয়ে।

খেলার শুরু থেকে আক্রমণ করে খেলতে থাকে বাংলাদেশ। পাল্টা আক্রমণে যায় স্বাগতিক নেপালও। আর তাতেই জমে ওঠে ম্যাচ। কিন্তু সময় গড়ানোর সাথে সাথে আধিপত্য বাড়তে থাকে নেপালের। সে সুবাধে অষ্টম মিনিটে প্রথম কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়েছিল সেমিফাইনালে টাইব্রেকারে ভারতের বিপক্ষে দুটি সেভ করা গোলরক্ষক আসিফ হোসেন। বঙের বেশ খানিকটা দূর থেকে নিরাজন ধামীর দূরপাল্লার শট অনেকটা লাফিয়ে আঙুলের টোকায় ক্রসবারের উপর দিয়ে বের করে দেন আসিফ। ১৬ মিনিটে গোল পেতে পারতো নেপাল। সতীর্থের থ্রু পাস অফসাইডের ফাঁদ ভেঙে ধরে বঙে ঢুকে পড়েছিলেন সমীর তামাং। তবে রাজীব হোসেন ছুটে গিয়ে দারুণভাবে ক্লিয়ার করেন। অথচ গোলরক্ষককে একা পেয়েও শট নিতে পারেননি সমীর। ৩০ মিনিটে আবার নিরাজনের শট । এবার অল্পের জন্য পোস্টের বাইরে দিয়ে চলে যায়। প্রথমার্ধের শেষ দিকে মিরাজুলের দৃষ্টিনন্দন এক গোলে বদলে যায় ম্যাচের দৃশ্যপট। বঙের একটু ওপরে ফাউলের শিকার হন এই ফরোয়ার্ড। ফ্রি কিক পায় বাংলাদেশ। মিরাজুলের বুলেট গতির শট ঝাঁপিয়ে পড়া জয়রথ শিখের গ্লাভস ফাঁকি দিয়ে পোস্টের ভেতরের দিকে লেগে জালে জড়ায়। এগিয়ে যাওয়ার আনন্দ নিয়ে বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।

দ্বিতীয়ার্ধে আরো উজ্জীবিত ফুটবল খেলতে থাকে বাংলাদেশ। ৫৫ মিনিটে দ্বিতীয় গোল পেয়ে যায় বাংলাদেশ। আসাদুল ইসলাম সাকিবের লং পাসে দূরের পোস্টে থাকা আসাদুল মোল্লার হেড পাস থেকে হেডেই লক্ষ্যভেদ করেন মিরাজুল। ম্যাচের ভাগ্য হেলে পড়ে বাংলাদেশের দিকে। ৭০ মিনিটের গোলে বাংলাদেশের জয় অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যায়। বঙের ভেতর থেকে মিরাজুলের ছোট পাস ধরে জায়গা বানিয়ে ডান পায়ের বাঁকানো শটে লক্ষ্যভেদ করেন রাব্বী হোসেন রাহুল। ৮১ মিনিটে বাংলাদেশের রক্ষণভাগ আর গোলরক্ষকের ভুলে গোল হজম করে বাংলাদেশ। সতীর্থের কাছ থেকে পাওয়া বলে সমীরের দারুন হেড বল জড়ায় জালে। ব্যবধান কমে দাঁড়ায় ৩১। নির্ধারিত সময় শেষে, ১০ মিনিটের যোগ করা সময়েও নেপাল আর খুঁজে পায়নি পথ। বরং যোগ করা সময়ের পঞ্চম মিনিটে রাব্বীর আড়াআড়ি পাসে নোভার শট গোলরক্ষককে ফাঁকি দেওয়ার পর নেপালের এক ডিফেন্ডার ক্লিয়ার করেন। কিন্তু তার আগেই বল পেরিয়ে যায় গোললাইন। এক হালি গোল আদায় করে নেয় বাংলাদেশ। আর সে সাথে প্রথমবারের মতো সাফ অনূর্ধ্ব২০ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয়ের আনন্দে মাতে বাংলাদেশ দল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতেল খালাস করে ফেরার পথে ট্রেনের ওয়াগন লাইনচ্যুত
পরবর্তী নিবন্ধচাক্তাইয়ে পণ্যবাহী ট্রাকে চাঁদাবাজিতে জড়িতদের গ্রেপ্তারে আল্টিমেটাম