দেশকে আবার গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ফেরাতে দ্রুত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান রেখেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা এবং উপদেষ্টা পরিষদের কাছে আমাদের অনুরোধ, এদেশের জনগণের স্টেকহোল্ডার হলো পলিটিক্যাল পার্টিগুলো। যদি গণতন্ত্র চান, পলিটিক্যাল পার্টিগুলোর সাথে কথা বলুন।
গত ৫ আগাস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর এখন মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন সরকার দেশ চালানোর ভার নিয়েছে। এ সরকারকে সমর্থন দিলেও দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় কথা বলছিলেন বিএনপি নেতা হাফিজ। খবর বিডিনিউজের।
গত রোববার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস তার সরকারের কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরে বলেন, কখন নির্বাচন হবে সেটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, আমাদের সিদ্ধান্ত নয়। দেশবাসীকে ঠিক করতে হবে আপনারা কখন আমাদের ছেড়ে দেবেন।
আলোচনা শুরুর তাগিদ দিয়ে হাফিজ অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বলেন, সংসদে প্রতিনিধিত্ব আছে এই ধরনের রাজনৈতিক দল অতীতে প্রতিনিধিত্ব পেয়েছে, তাদের সাথে দ্রুত আলাপ করুন। কীভাবে গণতন্ত্র উত্তরণ করা যায় রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলাপ করে তাদের কাছ থেকে সুপারিশ গ্রহণ করুন।
গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করতে অল্প সময়ের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, একটি যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন দিয়ে জনগণের প্রতিনিধিদের দায়িত্বভার গ্রহণ করার সুযোগ করে দেন। রোডম্যাপ ঘোষণা করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়।
ছাত্র–জনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে পতিত স্বৈরাচারের প্রতিবিপ্লব রুখতে প্রধান উপদেষ্টাকে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ। সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, আমরা চাই বিপ্লব যেন পথ হারিয়ে না ফেলে। বিপ্লবের মর্মকথা উপলব্ধি করে প্রতিবিপ্লবকে নস্যাৎ করার জন্য যা কিছু করা প্রয়োজন তাই করুন। এখনো রাষ্ট্র সমাজের শরীরে শেখ হাসিনার বশংবদরাই বসে আছে।
প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে তিনি বলেন, মুহাম্মদ ইউনূস, আপনি আমাদের গৌরব, আপনি শক্ত হন, নিজেকে দুর্বল ভাববেন না। বাংলাদেশের জনতা আপনাদের সাথে আছে। সুতরাং কোনো দুর্বৃত্ত যাতে বাংলাদেশ অধিকার করতে না পারে সেজন্য আপনারা ভূমিকা রাখবেন।
আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শেখ হাসিনার সরকারের আমলে গঠন করা নির্বাচন কমিশনের বিলুপ্তি চেয়েছেন হাফিজ। তিনি বলেন, এরা তো জনগণের নির্বাচন কমিশন কমিশন না। এই নির্বাচন কমিশন দিনের ভোট রাতে করেছে, একদিন আগে করেছে। নির্বাচনের দিন প্রধান নির্বাচন কমিশন ঘুমায়। তিনি বলেছেন যে, দুপুরবেলা দেখলাম যে, চব্বিশ শতাংশ ভোট পড়েছে একটা নির্বাচনে, যখন একটা ঘুম দিলাম, ঘুম থেকে উঠে দেখি ৫৫ শতাংশ হয়ে গেছে। যে দেশে নির্বাচনের দিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ঘুমায়, তাহলে এদেশে কিভাবে গণতন্ত্র আসবে?
হাফিজ বলেন, আমরা গণতন্ত্র চাই। আমরা প্রতিবেশী দেশের শাসন চাই না, আমরা অন্য কোনো শক্তিরও শাসন চাই না। আমরা জনগনের শাসন চাই।
হাফিজ বলেন, যদি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ বিএনপিকে দায়িত্ব দেয় আমরা পুরো জাতিকে মিলিটারি ট্রেনিং দিয়ে সৈনিকে পরিণত করব। কোনো প্রতিবেশী দেশ যাতে আমাদের দিকে রক্তচক্ষু না দেখাতে পারে, আমরা যাতে আগ্রাসনের শিকার না হই সেজন্য আমরা সিটিজেন আর্মি গড়ে তুলব। ছাত্ররা বছরে দুই মাস বেসিক সামরিক ট্রেনিং নিয়ে তারপর আবার ছুটি শেষ হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা শুরু করবে।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা আকরাম খাঁ হলে জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দলের উদ্যোগে সংগঠনটির প্রয়াত আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম মাহতাবের স্মরণে এই আলোচনা সভা হয়। ১২ আগস্ট ঢাকায় মারা যান রফিকুল ইসলাম মাহতাব।