ফেনীতে প্রবল বন্যার মধ্যে কয়েক জায়গায় লাশ ভেসে আসতে দেখেছেন স্থানীয় জনতা। এর মধ্যে দুটি লাশ কলার ভেলায় করে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই দুটি লাশের সঙ্গে চিরকুট দেওয়া হয়েছে। চিঠির ভাষ্য, বন্যার মধ্যে মাটি না পেয়ে কলার ভেলায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়। কেউ পেলে লাশ যেন কবর দেওয়া হয়–সেজন্য অনুরোধ করা হয়েছে। তবে ফেনীর জেলা প্রশাসক মুসাম্মৎ শাহীনা আক্তার গত রোববার সন্ধ্যায় এক ব্রিফিংয়ে বলেছেন, জেলা প্রশাসনের কাছে বন্যায় একজনের মৃত্যুর তথ্য রয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
২০ আগস্ট দুপুর থেকে ফেনীতে বন্যা শুরু হয়। পরদিন ২১ অগাস্ট দুপুর থেকে তা ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। জেলার পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলা শুরুতে বন্যা কবলিত হলেও যা পরে ফেনী সদর, সোনাগাজী ও দাগনভূঞা ছড়িয়ে পড়ে। বন্যায় জেলায় প্রায় ১০ লাখ লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে গত শনিবার রাতে ফেনী শহরের মিজান রোডে সোনালী ব্যাংকের সামনে হাঁটু পানিতে একটি মরদেহ ভেলায় ভাসতে দেখেন স্থানীয়রা। পরে সেখানে লোকজন ভিড় জমান। পরে কয়েকজন মানুষ সেই লাশটির জানাজা ও দাফনের জন্য নিয়ে যায়। কিন্তু কোথায় সেটি দাফন করা হয়েছে তা আর জানা যায়নি। পরদিন রোববার ফেনী সদর উপজেলার লালপোল এলাকার উত্তর গোবিন্দপুর গ্রামে বন্যায় ভেসে আসে এক শিশুর লাশ। তা দেখে স্থানীয়রা সেখানে যান। উত্তর গোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা পপি মজুমদার বলেন, রোববার সকালে ডোবায় আনুমানিক পাঁচ বছরের এক শিশুর মরদেহ ভেসে থাকতে দেখেন আমার স্বামী। পরে তিনি লোকজনকে খবর দেন। তারপর কয়েকজন ধরাধরি করে মরদেহটি এনে সড়কের পাশে এনে রাখেন। শিশুটির শরীরের ভেতর পানি ঢুকে একদম ফুলে গেছে। পরে শিশুটির মুখের ওপর গামছা দিয়ে রাখেন জয়নাল মিয়া নামে একজন। জয়নাল মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, শিশুটির চোখ দুটো ফুলে সাদা হয়ে গেছে। শরীরের অবস্থা খুবই খারাপ ছিলো। তিনি দাবি করেন, শনিবার দুপুরে সুমন চন্দ্র নামে এক ব্যক্তি ওইস্থানে আরও একটি লাশ পেয়েছিলেন। পরে স্থানীয় ব্যক্তিদের লাশটি বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
ফেনী জেলা জামায়াতে ইসলামীর প্রচার সম্পাদক আ ন ম আব্দুর রহিম বন্যার মধ্যে দুটি লাশের তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, সদরের মৌটবী ইউনিয়নের সাতসতী গ্রামের নুরুল আলম শনিবার মারা যান। পরে তার মরদেহ পরিবারের সদস্যরা কলার ভেলায় ভাসিয়ে দেন। একই দিন তিনি সদরের কালীদহ রেললাইনের পাশে একটি অর্ধগলিত মরদেহ ভাসতে দেখেছেন।
ওমান প্রবাসী মাসুদ খান এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন তার বাবা আলীম উল্লাহ (৭৩) মারা যাওয়ার পর লাশ কলার ভেলায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি সদর উপজেলার মোটবী ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাতসতী গ্রামের নাছির ভূঁইয়া বাড়ির বাসিন্দা। পরিবারের সদস্যরা জানান, বৃদ্ধ আলীম উল্লাহ (৭৩) বেশ কয়েকদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। শুক্রবার ভোরে তিনি মারা যান। তখন পুরো গ্রাম পানিতে তলিয়ে ছিলো। আলীম উল্লাকে কবর দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা করা যায়নি। শনিবার স্বজনরা মরদেহ কলাগাছের ভেলায় ভাসিয়ে দেয়। সঙ্গে একটি চিরকুটে তাকে দাফনের অনুরোধ করা হয়। সেখানে ঠিকানাও দেওয়া হয়।
লাশ ভেসে আসার আরও কিছু তথ্য ফেসবুক পোস্টে দিয়েছেন অনেকে। তবে তাদের তথ্য যাচাই করা যায়নি।