দক্ষিণ এশিয়ান ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে খুব কম সময় ভারতের সাথে পেরে উঠে বাংলাদেশ। সেটা সিনিয়র হোক কিংবা জুনিয়র। তবে বাংলাদেশের যুবকরা এবার সাফ অনূর্ধ্ব–২০ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে বিদায় করে দিল ভারতকে। ধারার বিপরীতে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।
দ্বিতীয়ার্ধে ভারতের টানা আক্রমণের মুখে জমাট রক্ষণের সঙ্গে গোলরক্ষক মেহেদী হাসান শ্রাবণও গড়লেন প্রবল প্রতিরোধ। কিন্তু আঘাত পেয়ে শ্রাবণ মাঠ ছাড়ার পরই গোল হজম করল বাংলাদেশ। ম্যাচের ভাগ্য গড়াল টাইব্রেকারে। সেখানে বদলি গোলরক্ষক আসিফ হোসেনের দুর্দান্ত নৈপুণ্যে ভারতকে হারিয়ে সাফ অনূর্ধ্ব–২০ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠল বাংলাদেশ।
নেপালের ললিতপুরের আনফা কমপ্লেক্সে গতকাল সোমবার দ্বিতীয় সেমিফাইনালে টাইব্রেকারে ভারতকে ৪–৩ গোলে হারায় বাংলাদেশ। নির্ধারিত সময়ের খেলা শেষ হয়েছিল ১–১ সমতায়। টাইব্রেকারের শুরুতেই আলো ছড়ান আসিফ। থাংলাংসুন গাঙ্গতের প্রথম শট ডান দিকে ঝাঁপিয়ে আটকে দেন। এরপর চার শটে বাংলাদেশের পিয়াস আহমেদ নোভা, মইনুল ইসলাম মইন, শাকিল আহাদ তপু ও আশরাফুল হক আসিফ লক্ষ্যভেদ করেন। ভারতের তিন জন জালের দেখা পাওয়ার পর আকাশ তিরকে আসেন পঞ্চম ও শেষ শট নিতে। আসিফ তা ফেরানোর সাথে সাথেই বাঁধনহারা উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে বাংলাদেশ।
বয়সভিত্তিক এই প্রতিযোগিতাটি এ পর্যন্ত অনূর্ধ্ব–১৮, ১৯ ও ২০ এই তিন ক্যাটাগরিতে হয়েছে। ২০২২ সালে অনূর্ধ্ব–২০ ক্যাটাগরিতে ভারতের কাছে হেরে রানার্সআপ হয়েছিল বাংলাদেশ। এবার তাদের হারিয়েই ফাইনালে উঠল দল।
শুরু থেকে রক্ষণ জমাট রেখে পাল্টা আক্রমণের ছকে খেলতে থাকে বাংলাদেশ। ভারত মেলে ধরে আক্রমণাত্মক ফুটবলের পসরা। তবে তাদের সব প্রচেষ্টাই মুখ থুবড়ে পড়তে থাকে বাংলাদেশের রক্ষণে। পোস্টের নিচে মেহেদী হাসান শ্রাবন ছিলেন দারুণ আত্মবিশ্বাসী। ত্রয়োদশ মিনিটে সতীর্থের থ্রু পাস ধরে গয়ারির জোরালো শট কোনোমতে পা বাড়িয়ে আটকে দেন শ্রাবণ। ১৬ মিনিটে বল নিয়ে বঙে ঢুকে পড়া গয়ারির শট নেওয়ার আগেই নিখুঁত স্লাইডে ক্লিয়ার করেন কামাচাই মারমা। একটু পর আরেকটি প্রচেষ্টা রুখে দেন শ্রাবণ। ২৫ মিনিটের পর থেকে বাংলাদেশ একটু উপরে উঠে খেলার চেষ্টা করতে থাকে। ৩৫ মিনিটে পাওয়া সুযোগটি কাজে লাগিয়ে এগিয়েও যায় দল। বাম দিক থেকে রাব্বি হোসেন রাহুলের জোরালো আড়াআড়ি ক্রস গোলরক্ষকের গ্লাভস ছুঁয়ে চলে যায় আসাদুল মোল্লার পায়ে। নিখুঁত টোকায় জাল খুঁজে নেন এই তরুণ।
দ্বিতীয়ার্ধে বলের নিয়ন্ত্রণ রেখে খেলার চেষ্টা করতে থাকে বাংলাদেশ। ৫০ মিনিটে কয়েক সতীর্থের পা ঘুরে বল পান পিয়াস আহমেদ নোভা। এই ফরোয়ার্ডের শট ফেরান ভারতের গোলরক্ষক। এরপরই একের পর এক আক্রমণে বাংলাদেশের রক্ষণ কাঁপিয়ে দেয় ভারত। মাংলেনথাং কিপজেনের বাঁ পায়ের শট পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে যাওয়ার পর ৫৪ মিনিটে ভারতের হতাশা আরও বাড়ে। সতীর্থের লম্বা পাস ধরে শ্রাবণকে একা পেয়ে গিয়েছিলেন করু সিং থিংগুজাম, কিন্তু তার দূরের পোস্ট দিয়ে লক্ষ্যভেদের চেষ্টা বেরিয়ে যায় বাইরে দিয়ে। এরপর কেলভিন সিংয়ের শটও যায় অল্পের জন্য ক্রসবারের উপর দিয়ে। ৬১ মিনিটে থাংলাংসুন গাঙ্গতের দূরূহ কোণ থেকে নেওয়া শট পোস্টের বাইরের দিকে লেগে বেরিয়ে যায়। চার মিনিট পর গোললাইন সেভে বাংলাদেশের ত্রাতা কামাচাই মারমা। গয়ারির চিপ পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে আসা শ্রাবণকে ফাঁকি দিয়ে ছুটছিল জালের দিকে। গোলমুখ থেকে শেষ মুহূর্তের প্রচেষ্টায় ফেরান কামাচাই। গয়ারিকে আটকাতে এসেই তার সাথে সংঘর্ষে ব্যথা পেয়ে মাঠ ছাড়েন শ্রাবন। বদলি নামেন আসিফ হোসেন। একটু পরই গোল হজম করে বসে বাংলাদেশ। বঙের ভেতর থেকে নিচু শটে লক্ষ্যভেদ করেন রিকি মিতে হোবাম। দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন কামাচাই মারমা। ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানে আসিফ বীরত্বে সেমি–ফাইনালের বৈতরণী পেরিয়ে ফাইনালের মঞ্চে ওঠে বাংলাদেশ। আগামীকাল বুধবার শিরোপা লড়াইয়ে স্বাগতিক নেপালের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।