মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সামরিক জান্তা কতৃর্ক রোহিঙ্গাদের দমন-পীড়নের সাত বছর পূর্ন হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে কক্সবাজারের উখিয়া- টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।এছাড়া মসজিদ -মাদ্রাসা গুলোতে বিশেষ মোনাজাত করেছেন। রোহিঙ্গারা দ্রত মিয়ানমারের ফিরতে যেতে চায়। এখানে থাকার কোন পরিবেশ নেই বলে দাবী করেছেন।মিয়ানমারের সামরিক জান্তারা আগের অবস্থান থেকে ফিরে আসতে শুরু করেছে।
সমাবেশ গুলোতে বৃষ্টি উপেক্ষা কর হাজার হাজার নারী-পুরুষ-শিশু নানান ধরনের পোষ্টার,মিয়ানমারের জাতীয় পতাকা নিয়ে যোগদান করেন। রোহিঙ্গারা এদিনটিকে কালো দিবস আখ্যা গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করছেন।এছাড়া আরাকান গণহত্যা বন্ধের দাবী,দ্রত প্রত্যাবাসন কার্যক্রম চালুর দাবী করেন রোহিঙ্গারা।
উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বি-৩ ব্লকের বাসিন্দা নজির আহমদ বলেছেন,দ্রত মিয়ানমারের চলে যেতে চায়। এখানে ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা করাতে অসুবিধা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন ছোট বাচ্চা গুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
একই রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সাব মাঝি সৈয়দ করিম বলেন বাবা-মার কবর জিয়ারত করতে পারছি না। এরচেয়ে দু:খ কি থাকতে পারে।
উখিয়ার জামতলী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এফ ব্লকের আলী জুহুর স্ত্রী লায়লা বেগম বলেন এখানে সব কিছু দেওয়া হচ্ছে। তবে মনে কোন শান্তি নেই।
রোববার সকালে উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
রোহিঙ্গারা বলেছেন,বিগত সাত বছর আগে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা কতৃর্ক ব্যাপক গণহত্যা চালিয়েছেন।সেখানে ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।নারীদের ধর্ষন করেছন।এসবের কারণে প্রাণের ভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন।এরপর উখিয়া- টেকনাফের বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নেয়।একট ছোট ঘরে সবাইকে নিয়ে থাকতে হয়। এর নাম জীবন।
উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা আবুল হোসেন বলেন জীবনের শেষ সময়টা নিজ দেশে কাটাতে পারব কিনা জানিনা। আরকানের জন্য মন কান্দে।রোহিঙ্গা নারী নেত্রী রশিদা বলেছেন তাদের নায্য অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। এ বিষয়ে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে।উক্ত সমাবেশ চলাকালে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছিল।অন্তরবর্তীকালিন সরকারের প্রধান ড.ইউনুসের জন্য দোয়া করতে দেখা গেছে।
ড. ইউনুসের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের দাবী দাওয়া গুলো আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরবেন।
উখিয়ার লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সমাবেশে বক্তব্য দেন উখিয়ার ১৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মোহাম্মদ মুসা,উখিয়ার ১৫ নম্বর জামতলী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সৈয়দ উল্লাহ,মোহাম্মদ কামাল, নারীনেত্রী রশিদা,আবদুর রকিম।এছাড়া রোহিঙ্গাদের একটি জনপ্রিয় তারানা পরিবেশন হাফেজ হারুন। অনুষ্ঠানের শুরুতে কোরআন তেলোয়াত করেন হাফেজ উসমান।পুরো অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মোহাম্মদ ফোরকান।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞ এবং ভয়াবহ নির্যাতনের মুখে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বনভূমিতে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে আশ্রয় নেওয়া সাড়ে তিন লাখসহ বর্তমানে ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বর্তমানে কক্সবাজারের ৩৩টি আশ্রয় ক্যাম্পে বসবাস করছে। কবে তারা স্বদেশে ফিরবে তা এখনও অনিশ্চিত। তবে সরকারের শরণার্থী বিষয়ক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সন্ত্রাস দমনের নামে ২০১৭ সালে সে দেশের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর জাতিগত নিধন চালালে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আসতে থাকে রোহিঙ্গারা। ওই বছরের ২৫ আগস্টের পর দু-তিন মাসের মধ্যেই উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নেয় সাড়ে সাত লাখের মতো রোহিঙ্গা। পরবর্তী সময়ে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে তাদের খাদ্য সহায়তা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়।
২০১৭ সালেই বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত পাঠানো নিয়ে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা শুরু করে। পরবর্তী সময়ে কয়েক দফা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও একজন রোহিঙ্গাও মিয়ানমারে ফেরত যায়নি।
এ ব্যাপারে ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক(ডিআইজি)আমির জাফর বলেন রোহিঙ্গাদের শান্তিপূর্ন ভাবে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
এ ব্যাপারে ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যালিয়ানের অধিনায়ক মোহাম্মদ ইকবাল বলেন রোহিঙ্গারা শান্তিপূর্ন সমাবেশ করেছেন।কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।ক্যাম্প অভ্যন্তরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।