রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে পাকিস্তানের ৪৪৮ রানের জবাবে দারুণ ব্যাটিং করছে বাংলাদেশ। ম্যাচের তৃতীয় দিন শেষে ৫ উইকেটে ৩১৬ রান তুলেছে টাইগাররা। যদিও বাংলাদেশ এখনো পিছিয়ে আছে ১৩২ রানে। বাংলাদেশ দলের চার ব্যাটার তুলে নিয়েছেন হাফ সেঞ্চুরি। আর এই চার হাফ সেঞ্চুরিতে স্বস্তির এক দিন পার করল টাইগাররা। তবে দলের এই ইনিংসে সবচাইতে বড় ভূমিকা রেখেছেন লিটন দাশ এবং মুশফিকুর রহিমের ষষ্ঠ উইকেট জুটি। এই জুটিতে ১০২ রান যোগ করে অবিচ্ছিন্ন রয়েছেন দুজন। দুজনই তুলে নিয়েছেন হাফ সেঞ্চুরি। মুশফিক ৫৫ আর লিটন ব্যাট করছেন ৫২ রান নিয়ে। এর আগে অবশ্য একটুর জন্য সেঞ্চুরি মিস করেন সাদমান ইসলাম। ক্যারিয়ারে সবশেষ টেস্ট খেলেছিলেন সাদমান ডারবানে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২০২২ সালের মার্চে। সে টেস্টে দুই ইনিংসেই দশের নিচে আউট হন সাদমান। একটি ছিল ডাক। এরপর দলে জায়গা হারান বাঁহাতি এই ওপেনার। মাহমুদুল হাসান জয়ের ইনজুরির সুযোগে দীর্ঘ আড়াই বছর পর টেস্ট দলে ফিরলেন সাদমান। ফিরেই দারুণ এক ইনিংস খেললেন। কিন্তু তাতে মিশে রইলো আক্ষেপ। মাত্র ৭ রানের জন্য যে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরিটা করতে পারলেন না সাদমান। পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ আলির দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে ফিরেছেন সাদমান। ১৮৩ বলে গড়া ৯৩ রানের ইনিংসটিতে ১২টি চার মেরেছেন সাদমান। তবে নানামুখী সমালোচনার মুখে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে খেলতে নামা সাকিব আল হাসান সুবিধা করতে পারেননি ব্যাট এবং বলে। বল হাতে ১০০ রান খরচায় মাত্র একটি উইকেট নেওয়া সাকিব ব্যাট হাতে ১৬ বলে ২ বাউন্ডারিতে ১৫ রান করেই সাজঘরে ফিরেন। সাকিবকে একটু খেলার জায়গা করে দিয়েছেন পার্টটাইমার অফস্পিনার সাইম আইয়ুব। তারই পাতা ফাঁদে পা দিয়ে কভারে শান মাসুদের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন সাকিব। সাইম আইয়ুবের টেস্টে এটি প্রথম উইকেট। আগের দিনের বিনা উইকেটে ২৭ রান নিয়ে গতকাল শুক্রবার তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করেছিল বাংলাদেশ। দিনের শুরুতেই উইকেট হারায় টাইগাররা। নাসিম শাহর করা ১৭তম ওভারের পঞ্চম বলে খোঁচা দিয়ে উইকেটরক্ষক মোহাম্মদ রিজওয়ানের হাতে ক্যাচ দিয়ে ওপেনার জাকির হাসান। ৫৮ বলে ১২ রান করেন তিনি। উইকেটে সেট হয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। কিন্তু ইনিংস বড় করতে পারলেননা। ৪২ বলে ১৬ রান করে খুররম শেহজাদের বলে বোল্ড হন তিনি। ২৭তম ওভারের শেষ বলে দলীয় ৫৩ রানের মাথায় দ্বিতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
এরপর তৃতীয় উইকেটে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন মুমিমুল হক আর সাদমান ইসলাম। ৯৪ রানের জুটি গড়েন তারা। দুজনই তুলে নেন হাফসেঞ্চুরি। মুমিনুল অবশ্য টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৯তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার পরই সাজঘরে ফিরেন। পাকিস্তানি পেসার খুররম শেহজাদের বলে বোল্ড হন মুমিনুল। ৭৬ বলে ৫ বাউন্ডারিতে তিনি করেন ৫০ রান। এরপর সাকিবকে নিয়ে ৫২ রানের জুটি গড়েন সাদমান। কিন্তু সেঞ্চুরির একেবারে কাছে গিয়ে ফিরেন এই ওপেনার। ১৮৩ বলে ১২টি চারের সাহায্যে ৯৩ রান করে ফিরেন সাদমান। এরপর সাকিবও পারেননি বেশিদুর এগুতে। ফিরেছেন ১৬ বলে ১৫ রান করে। ২১৮ রানের মাথায় পঞ্চম উইকেট হিসেবে সাকিব আল হাসান ফিরে আসার পর দলের হাল ধরেন লিটন দাশ এবং মুশফিকুর রহিম। এ দুজনকে ফেরাতে পারেনি পাকিস্তানের বোলাররা। দারুণভাবে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন দুজন। দিনের ১৯.২ ওভার অবিচ্ছিন্ন থাকেন দুজন। আর রান যোগ করেন ১০২। ৫২ বলে ক্যারিয়ারের ১৭ তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন লিটন দাশ। দিন শেষে যা দাড়িয়েছে ৫৮ বলে ৮টি চার এবং একটি ছক্কার সাহায্যে ৫২ রান করে অপরাজিত থাকেন। অপরদিকে ধৈর্য্যের সাথে ব্যাট করা মুশফিক অপরাজিত আছেন ১২২ বলে ৫৫ রান করে। তিনি ৭টি চার মেরেছেন। পাকিস্তানের পক্ষে খুররম শাহজাদ নিয়েছেন ২টি উইকেট। এখনো ১৩২ রানে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ দল আজ ম্যাচের চতুর্থ দিন শুরু করবে। যথারীতি লিটন এবং মুশফিক শুরু করবেন দিনটি। তবে পাকিস্তানের প্রথম ইনিংস স্পর্শ করতে পারে কিনা বাংলাদেশ সেটাই এখন দেখার বিষয়।