চাকরি জাতীয়করণের এক দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি ঘোষণা দিয়ে নগরে বিক্ষোভ করেছেন আনসার সদস্যরা। গতকাল জুমার নামাজের পর আসকারদীঘির পাড় এলাকায় অবস্থিত চট্টগ্রাম জেলা কমান্ড্যান্ট আনসার–ভিডিপি কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। সন্ধ্যার পর বিক্ষোভ কর্মসূচি আজ শনিবার সকাল ১১টা পর্যন্ত মুলতবি ঘোষণা করা হয়। তবে কর্মবিরতি চলবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনরত আনসার সদস্যরা। এর আগে সকালে খুলশী থানার ফয়’স লেক এলাকায় রেঞ্জ অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন আনসার সদস্যরা। বিক্ষোভকালে তারা বাহিনীর পোশাক পরা ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আসকারদিঘী পাড়ে আনসার সদস্যরা অবস্থান নিয়ে মিছিল শুরু করলে কাজীর দেউড়ি–জামালখান সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে রাস্তায় অবস্থান নেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। বিকেল পৌনে ৪টার দিকে আনসার সদস্যরা রাস্তা থেকে সরে দাঁড়ালে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। বিক্ষোভরত আনসার সদস্যরা ‘আমি কে তুমি কে, আনসার আনসার’, ‘আমাদের দাবি মানতে হবে, জাতীয়করণ করতে হবে’ বলে স্লোগান দেন। জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দর, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, কাস্টমস, বিভিন্ন বেসরকারি ডিপো, বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ সরকারি–বেসরকারি অফিসে পদায়িত হয়ে দায়িত্ব পালন করেন সাধারণ আনসার সদস্যরা। গতকাল সেখানে কাজে যোগ দেননি আনসার সদস্যরা।
মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম ভূইয়া নামে এক আনসার সদস্য আজাদীকে বলেন, আমরা নানাভাবে বৈষম্যের শিকার। আমাদের একটাই দাবি, আমাদের চাকরি জাতীয়করণ করে রাজস্বভুক্ত করতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের চাকরির বয়স ৫২–৫৫ বছর। এর মধ্যে প্রতি তিনবছর পর পর ৬ মাসের জন্য রেস্ট সিস্টেম আছে। রেস্টের পর প্যানেলের অর্ন্তভুক্ত হই। তখন আবার পোস্টিং পেতে পেতে ৬–৭ মাস চলে যায়। তার মানে ১২–১৩ মাস আমাদের বসে থাকতে হয়। এ সময় আমাদের কোনো সুবিধা দেয়া হয় না। এতে আমাদের পরিবার নিয়ে চলতে অনেক কষ্ট হয়। তিনি বলেন, আনসার ব্যাংকে শেয়ার দিবে বলে আমাদের কাছ থেকে প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে কেটেছে। ২ বছর কাটার পরও কোনো শেয়ার বা লভ্যাংশ দেয়নি। যে টাকা কেটেছে সেটারও কোনো হিসাব নেই। এ ধরনের অনেক অন্যায় হয়েছে আমাদের সাথে।
জানা গেছে, সারাদেশে সাধারণ এবং অঙ্গীভূত আনসার সদস্য আছেন প্রায় ৯৯ হাজার। এদের মধ্যে অঙ্গীভূত আনসার আছেন প্রায় ৫৫। তারা চান ব্যাটালিয়ন আনসারের মতো চাকরির জাতীয়করণ করা হোক। এ দাবিতে গত ১০ অগাস্ট থেকে সারা দেশে সাধারণ আনসাররা এক দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল বিক্ষোভ হয়েছে। উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম রেঞ্জে অঙ্গীভূত আনসার সদস্য আছেন পাঁচ হাজার।
আনসার সদস্য মো. ইদ্রিস সাংবাদিকদের বলেন, আমরা অস্ত্রধারী প্রশিক্ষিত আনসার। সরকারি–বেসরকারি স্থাপনা ও দপ্তরে সশস্ত্র পাহারা দিই। গত ৫ আগস্টের পর সারা দেশে সব স্থাপনা ও থানা পাহারা দিয়েছি আমরা। পুলিশ বা ব্যাটালিয়ান আনসারদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দায়িত্ব পালন করি। অনেক ক্ষেত্রে বেশি দায়িত্ব পালন করি। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে আমরা বৈষম্যের শিকার। আমাদের চাকরি জাতীয়করণ করা হয় না। এখন আমরা জাতীয়করণের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছি।
মো. রিয়াজ নামে এক আনসার সদস্য বলেন, আমরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছি। আমরা কোনো বৈষম্য মানি না। আনসারকে জাতীয়করণ করতে হবে। দেশের ক্রান্তিকালে আমরাই কাজ করেছি। অথচই আমরাই আজ বৈষম্যের শিকার।
আনসার বাহিনীর চট্টগ্রাম জেলা কমান্ড্যান্ট এ এইচ এম সাইফুল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, আনসার সদস্যদের দাবি সদর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।