বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরোধিতা, গণহত্যার সমর্থন, ছাত্রদের বাসায় ডেকে মাদকের আসর বসানোসহ নানা অভিযোগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও সাবেক সহকারী প্রক্টর হাসান মুহাম্মদ রোমান শুভর পদত্যাগ দাবি করেছেন শিক্ষার্থীরা। গত কয়েকদিন যাবত অভিযুক্ত শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন চবি আইন অনুষদের শিক্ষার্থীরা। এসময় বিক্ষোভ সমাবেশ, কুশপুত্তলিকা দাহ, নামফলক ছিঁড়ে ফেলেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল বুধবার চবি সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে রোমান শুভর পদত্যাগসহ আরও কয়েকটি দাবি পেশ করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা জানান, ছাত্র আন্দোলনের সরাসরি বিরোধিতা, বিভিন্ন সময়ে অভিযুক্ত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের আশ্রয় প্রশ্রয় দেয়া, রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক শক্তি প্রয়োগ করে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সময়ে হেনস্থা করতেন রোমান শুভ। এছাড়া বাসায় ডেকে নিয়ে মাদকের আসর বসানোর বিষয়টি বেশ কয়েকজনের সাথে রোমান শুভর ম্যাসেঞ্জার কথোপকথন এবং কয়েকজন সাক্ষীর জবানবন্দিতে উঠে এসেছে।
কথোপকথনে অভিযুক্ত রোমান শুভকে বলতে দেখা যায়, ‘তোদের ক্লাসের টোটাল লিকুইড+পটখোর কারা বল, একটা গ্রান্ড ট্রিট দিবো একদিন ক্যাম্পাসের বাংলোয় সারারাত।’ স্মল বাট ক্লাসি পার্টি অপর একটি কথোপকথনে রোমান শুভকে বলতে দেখা যায়, ‘তুই কি ভার্জিন? কখনো পট করছস? অকেশনালি এগুলো খাওয়াই যায় সিগারেটের চেয়ে গাঞ্জায় ক্ষতি কম।’ এছাড়া সহকারী প্রক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সময় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে শিক্ষার্থীদের জামায়াত–শিবির, জঙ্গি ট্যাগ দিয়ে মামলার ভয় দেখিয়ে মানসিক চাপ প্রয়োগ করতেন বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ থেকে জানা যায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলায় সরাসরি অংশ নেওয়া ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের প্রকাশ্যে আশ্রয় প্রশ্রয় দেওয়ার বিষয়টি নিয়েও শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন।
গত মঙ্গলবার চবি আইন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. আব্দুল্লাহ ফারুকের কাছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ না করলে অব্যহতি চেয়ে অভিযোগপত্র দেন শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে ডিন বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা একটি আবেদন করেছে। আমি সেটা গ্রহণ করেছি। এটি একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। তদন্ত হবে; এরপর তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত সহকারী অধ্যাপক হাসান মুহাম্মদ রোমান বলেন, ‘আমি মব জাস্টিসের শিকার হচ্ছি। আমি কখনো গণহত্যাকে সমর্থন করি না, ২০১৬ সালেও আমি বিচার বহির্ভূত হত্যা নিয়ে গবেষণা করেছি এবং গবেষণা প্রবন্ধ ভারতের একটি স্বনামধন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। আমি তার প্রমাণ দিতে পারবো। আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করছি। নিরপেক্ষ তদন্ত হলে আমি নির্দোষ প্রমাণিত হবো।’