বীর শ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান (১৯৪১–১৯৭১)। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে চরম সাহসিকতা আর অসামান্য বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান ‘বীর শ্রেষ্ঠ’ উপাধিতে ভূষিতদের অন্যতম। মতিউর রহমান ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ২৯শে অক্টোবর পুরান ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানার রামনগর গ্রামে। যা এখন মতিনগর নামে পরিচিত। তার বাবা মৌলভী আবদুস সামাদ, মা সৈয়দা মোবারকুন্নেসা খাতুন। ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে ষষ্ঠ শ্রেণি পাস করার পর সারগোদায় পাকিস্তান বিমান বাহিনী পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন। ডিস্টিংকশনসহ মেট্রিক পরীক্ষায় সাফল্যের সাথে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। মতিউর রহমান ১৯৬১ সালে পাকিস্তান বিমান বাহিনিতে যোগ দেন। ১৯৬৩ সালে রিসালপুর পি,এ,এফ কলেজ থেকে পাইলট অফিসার হিসেবে কমিশন লাভ করেন। কমিশন প্রাপ্ত হবার পর তিনি করাচির মৌরিপুর (বর্তমান মাসরুর) এয়ার বেজ এর ২ নম্বর স্কোয়াার্ডন এ জেনারেল ডিউটি পাইলট হিসাবে নিযুক্ত হন। ১৯৬৭ সালে তিনি ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের শুরুতে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে মতিউর রহমান সপরিবারে ঢাকায় দুই মাসের ছুটিতে আসেন। যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে, পাকিস্তান বিমান বাহিনীর একজন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট হয়েও অসীম ঝুঁকি ও সাহসিকতার সাথে ভৈরবে একটি ট্রেনিং ক্যাম্প খুললেন। যুদ্ধ করতে আসা বাঙালি যুবকদের প্রশিক্ষণ দিতে থাকলেন। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ২৩ এপ্রিল ঢাকা আসেন ও ৯ মে সপরিবারে করাচি ফিরে যান। কর্মস্থলে ফিরে গিয়ে জঙ্গি বিমান দখল এবং সেটা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তিনি বিমান দখলের জন্য ২১ বছর বয়সী রাশেদ মিনহাজ নামে একজন শিক্ষানবীশ পাইলটের উড্ডয়নের দিন (২০ আগস্ট, ১৯৭১) টার্গেট করেন। মতিউর রহমান রাশেদ মিনহাজকে ক্লোরোফর্ম দিয়ে অচেতন করে ফেলেন। প্রায় ভারতের সীমান্তে পৌঁছে যাওয়া অবস্থায় রাশেদ মিনহাজ জ্ঞান ফিরে পান এবং বিমানটির নিয়ন্ত্রণ নিতে চেষ্টা করেন। এ সময় রাশেদের সাথে মতিউরের ধ্বস্তাধ্বস্তির এক পর্যায়ে মতিউর বিমান থেকে ছিটকে পড়েন। ২০শে আগস্ট ১৯৭১ এ মতিউর রহমান মৃত্যুবরণ করেন। বাংলাদেশ সরকার মতিউর রহমানকে তার সাহসী ভূমিকার জন্য বীর শ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করে পরবর্তীতে বাংলাদেশ স্বাধিন হওয়ার পর, ২০০৬ খ্রিস্টাব্দের ২৪ জুন মতিউর রহমানের দেহাবশেষ পাকিস্তান হতে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হয়। তাকে পূর্ণ মর্যাদায় ২৫শে জুন শহিদ বুদ্ধিজীবী গোরস্থানে পুনরায় দাফন করা হয়।