ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে আরো একটি হত্যা মামলা হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে গুলিতে নিহত ছাত্রদল নেতা ওয়াসিম আকরামের মা জোসনা বেগম রোববার রাতে পাঁচলাইশ থানায় মামলাটি করেন।
মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাবেক সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ও সাবেক সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চুকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় আসামি হিসাবে ১০৮ জনের নামোল্লেখ করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সন্তোষ কুমার চাকমা মামলা রেকর্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত ১৬ জুলাই কোটাবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নগরীর মুরাদপুরে ছাত্র–জনতার সঙ্গে ছাত্রলীগের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এতে ওয়াসিম আকরামসহ তিনজন নিহত হন। নিহত ওয়াসিম আকরাম (২২) চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের ছাত্র এবং কলেজ শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। তার বাড়ি কঙবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলার মেহেরনামা গ্রামে। তিনি পেকুয়া উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটিরও সদস্য ছিলেন।
মামলায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১৭ কাউন্সিলরকেও আসামি করা হয়েছে। এরা হচ্ছেন জামালখান ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন, পিতা সনজিদ দাশ, ২৫ নং রামপুর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুস সবুর লিটন, ৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এসরারুল হক এসরারুল, ৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোবারক আলী, ১৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হারুন অর রশীদ, ৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোরশেদুল আলম, ১৬ নং চকবাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুর মোস্তফা টিনু, ৩২ নং আন্দরকিল্লা ওয়ার্ড কাউন্সিলর চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আশরাফুল আলম, ১৫ নং বাগমনিরাম ওয়ার্ড কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিন, ৩২ নং আন্দরকিল্লা ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী, ৩৩ নং ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব, ৩৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন, ৩৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর পুলক খাস্তগীর, ১৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ নুরুল আলম মিয়া, ১৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ ওয়াসিম এবং ৩১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুস সালাম মাসুম।
মামলার আসামিদের মধ্যে যুবলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর, নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর, সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি, সদ্য সাবেক পটিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান দিদারুল আলম (যুগ্ম সম্পাদক, মহানগর যুবলীগ), মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি দেবাশীষ পাল দেবুও রয়েছেন।
অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন মোহাম্মদ ফিরোজ (যুবলীগ, হামজারবাগ), মোহাম্মদ ইসমাইল (পিতা : মৃত শাহ আলম সওদাগর, সাং– জঙ্গলপাড়া, ৩ নং ওয়ার্ড, থানা বায়েজিদ বোস্তামী), মোহাম্মদ দেলোয়ার (পিতা : মৃত শফি দারোয়ান, মোমিন রোড, ময়নামতি গলি), এন এইচ মিন্টু (সাবেক সহসভাপতি, ছাত্রলীগ চট্টগ্রাম মহানগর), মোহন ঘোষ (পিতা : মানিক ঘোষ, গোয়ালপাড়া), মোহাম্মদ আলী (বাড়ইপাড়া, চান্দগাঁও), ভুবন ঘোষ (পিতা : আশু ঘোষ, গোয়ালপাড়া), আরহাম খান (পিতা : রফিক খান, এনায়েত বাজার), ইসমাইল উদ্দিন লিটন (পিতা : মৃত আজিজ, জামালখান), মোহাম্মদ মোরশেদ, (পিতা : মৃত শফিক, সাং বাটালী রোড), দৌলত খান (পিতা : আবু তাহের, শাহ আমানত হাউজিং সোসাইটি), এনামুল হক মানিক (পিতা : মৃত জেবল হোসেন, কালামিয়া বাজার), নুর মোহাম্মদ (পিতা : মৃত সিরাজ শফি, জয়লিপাড়া, চান্দগাঁও), মোহাম্মদ সোহেল (পিতা : মৃত তোফাজ্জল হোসেন, বারৈয়ারহাট, জোরারগঞ্জ), নেজাম উদ্দিন (পিতা : আবুল কাশেম, মধ্য কাঞ্চননগর), মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন (পিতা : সৈয়দুল হক, থানা কাপ্তাই) ইরফানুল আলম তুষার (পিতা : মোহাম্মদ ইমরান, সাং কসমোপলিটন, মেয়র গলি), ইব্রাহিম খলিল (যুবলীগ নেতা, চট্টগ্রাম মহানগর), জয়নাল উদ্দিন জাহেদ (সাবেক সহসভাপতি, চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগ), নুর নবী সাহেদ (সভাপতি, চান্দগাঁও থানা ছাত্রলীগ), শহীদুল ইসলাম (সেক্রেটারি, চান্দগাঁও থানা ছাত্রলীগ), সাগর দাস (মোহরা ৫ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগ), জাহেদ হোসেন (সভাপতি, চকবাজার ছাত্রলীগ), জি এম তৌশিফ (সাধারণ সম্পাদক, চকবাজার ছাত্রলীগ), সাদ্দাম হোসেন ইভান (সভাপতি ১৬ নং ওয়ার্ড, চকবাজার ছাত্রলীগ), মোহাম্মদ জাবেদ (সাধারণ সম্পাদক, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, চান্দগাঁও থানা), মহিউদ্দিন (যুবলীগ, ফরিদারপাড়া, চান্দগাঁও), মোহাম্মদ জাফর (যুবলীগ), মোহাম্মদ আলী সাহেদ (পিতা : আবুল হোসেন, ৪ নং লাইন হালিশহর), মহিম আজব (পিতা : নেছার আহম্মদ চৌধুরী, সাং কালামিয়া বাজার), মো. ইলিয়াছ সরকার (৪ নং মমিন শিল্পাঞ্চল), মোহাম্মদ আলী (পিতা : বজল সওদাগর, বাড়ইপাড়া, বহদ্দারহাট), মোহাম্মদ ইসহাক (পিতা : বজল আহমদ সওদাগর, বাড়ইপাড়া), মোহাম্মদ সাইফুদ্দীন (১ নং যুগ্ম সম্পাদক, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, চট্টগ্রাম মহানগর), দিদারুল আলম মাসুম (যুবলীগ, লালখান বাজার), মোহাম্মদ মাসুম (যুবলীগ, গোলপাহাড়), জিহান আলী খান (সভাপতি, পাঁচলাইশ থানা ছাত্রলীগ), মহিউদ্দীন শাহ (পিতা : জালাল উদ্দীন, শাহ আমানত মাজার গেইট), মুজিবুর রহমান রাসেল (সাধারণ সম্পাদক, চকবাজার ছাত্রলীগ), মোহাম্মদ রাশেদ (পিতা : মোজাহেরুল ইসলাম, ৬ নং ওয়ার্ড কোনাখালী, চকরিয়া), আব্দুল্লাহ আল আকিব (পিতা : আব্দুল কালাম, মগনামা), আবছার উদ্দীন (পিতা : গিয়াস উদ্দীন, হাটহাজারী), আজিজ খান ববি, (পিতা : মৃত ইসহাক, সাং ইমাম ম্যানসন, মোহাম্মদপুর, থানা পাঁচলাইশ), মামনুর রশিদ মামুন (পিতা : মৃত আবদুল খালেক, মোহাম্মদপুর, আফজাল মসজিদ রোড), তোসাদ্দেক চৌধুরী তপু (পিতা : সফি চৌধুরী, সাং ৭ নং ওয়ার্ড), সোহেল বড়ুয়া (পিতা : স্বপন বডুয়া, সাং হাটহাজারী ২ নং জোবরা, বড়ুয়া পাড়া), জসিম উদ্দীন তালুকদার (৫৫) (পিতা : মৃত সৈয়দ আহমদ, সাং ৩ নং লালানগর, থানা–রাঙ্গুনিয়া), জসিম উদ্দীন (৮ নং শুলকবাহার ওয়ার্ড), শাহাদাত হোসেন রুবেল (৮ নং শুলকবহর ওয়ার্ড), মাহামুদুল করিম (সভাপতি, চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগ), সুভাষ মল্লিক সবুজ (সাধারণ সম্পাদক, চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগ), আজিজুল হক আজিজ (সাধারণ সম্পাদক, স্বেচ্ছাসেবকলীগ চট্টগ্রাম মহানগর), ইরফানুল আলম তুষার (পিতা : ইমরান, সাং কসমোপলিটন মেয়র গলি), আবুল কাশেম (পিতা : নুরুল আলম, সাং মৌলভীপাড়া, ৫ নং ওয়ার্ড, থানা : পেকুয়া), শরাফত উল্লাহ ওয়াসিম (পিতা : কলিম উল্লাহ সিকদার বাড়ি, সাং ৪ নং ওয়ার্ড মগনামা, থানা : পেকুয়া), জাহেদুল ইসলাম (পিতা : মৃত নুরুল ইসলাম, সাং পণ্ডিত পাড়া, ২ নং ওয়ার্ড, টেটং ইউনিয়ন, থানা : চকরিয়া), তোফাজ্জল করিম (পিতা : মোক্তার আহাং, সাং ফেরাসিঙ্গাপাড়া, ৩ নং ওয়ার্ড, উজানটিয়া ইউনিয়ন, থানা :পেকুয়া), নজরুল ইসলাম (পিতা : মৃত নুরুল হক সিকদার, সাং চেয়ারম্যান, রাজাখালী ইউনিয়ন, ৯ নং ওয়ার্ড, আমিলাপাড়া, থানা : পেকুয়া), কাজী আফসার চৌং লিটন (পিতা : মনিরুল হক চৌধুরী, সাং কাজীর বাড়ী, চান্দারপাড়া, ৭ নং ওয়ার্ড মগনামা, থানা : পেকুয়া), মো. বারেক (পিতা : মৃত জালাল আহাং, সাং জালিয়া কাটা, ৮ নং ওয়ার্ড, বারবাকিয়া, থানা : পেকুয়া), জাহাঙ্গীর আলম (পিতা : রজিম উদ্দিন, সাং মাতাব্বর পাড়া, ৫ নং ওয়ার্ড, থানা : পেকুয়া), আজিম উদ্দিন (পিতা : রজিম উদ্দিন, সাং মাতাবার পাড়া, ৫ নং ওয়ার্ড, থানা : পেকুয়া), সাবেক এমপি জাফর আলম (৭ নং ওয়ার্ড, থানা : চকরিয়া), জিয়াউল করিম (পিতা : আবুল কাশেম, সাং ৬ নং ওয়ার্ড, মগবাজার, থানা : চকরিয়া), নজরুল ইসলাম (পিতা : উকিল আহমদ, সাং মহাজেরপাড়া, বরইতলী, থানা : চকরিয়া), বদিউল আলম (পিতা : মৃত আলী আহমদ, সাং ৬ নং ওয়ার্ড, মনকিরচর, থানা : চকরিয়া), দিদারুল ইসলাম (পিতা : মৃত শাহাদাৎ আলী, সাং ১ নং ওয়ার্ড, কোনাখালী, থানা : চকরিয়া), জামাল উদ্দিন চৌধুরী (পিতা : মৃত ছৈয়দ আহমদ, সাং ৬ নং ওয়ার্ড, চিরিঙ্গা ইউনিয়ন, থানা : চকরিয়া), হাসানুল ইসলাম আদর (পিতা : মকসুদুল হক, সাং বৈরাগের খালী, ৬ নং ওয়ার্ড, দুলাহাজারা, থানা : চকরিয়া), নবী হোসেন (পিতা : মৃত হাবিবুর রহমান, সাং কোরালখালী, শাহারবিল, থানা : চকরিয়া), মহিউদ্দিন ফরহাদ (পিতা : অজ্ঞাত, সাং সাবেক সভাপতি, চান্দগাঁও থানা স্বেচ্ছাসেবকলীগ), মোহাম্মদ জালাল, (পিতা : অজ্ঞাত, চান্দগাঁও), মোহাম্মদ ফরিদ (পিতা : অজ্ঞাত), তাহসান (পিতা : অজ্ঞাত, সাং সিটি কলেজ ভিপি, চট্টগ্রাম), এইচ এম মিন্টু (পিতা : অজ্ঞাত, চান্দগাঁও), মোহাম্মদ জাফর (পিতা : অজ্ঞাত, সাং চান্দগাঁও), মো. ফিরোজ (পিতা : অজ্ঞাত, সাং চান্দগাঁও), মো. দেলোয়ার (পিতা : অজ্ঞাত, মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগ), নুরুল আবছার (পিতা : মৃত নুরুল আলম, সাং মেহেরনামা, ৯ নং ওয়ার্ড, থানা : পেকুয়া)সহ অজ্ঞাতানামা ১০০/১৫০ জন সন্ত্রাসী।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৬ জুলাই বিকেলে ওয়াসিম আকরাম ছাত্র জনতার সমাবেশে অংশ নিতে বারকোড রেস্তোরাঁর সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। ওই সময় আসামিদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ‘ইন্ধনে’ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের ক্যাডাররা অস্ত্রশস্ত্র, লাঠিসোটা নিয়ে ও বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সমাবেশে হামলা চালায়। ওয়াসিমের বুকে ও নাভিতে হামলাকারীদের ছোড়া গুলি লাগে। ঘটনায় আরো অনেকেই হতাহত হন। ছাত্র–জনতা আহতের চমেক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ওয়াসিম আকরামকে মৃত ঘোষণা করেন।