পটিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গত ৪ আগস্টের কর্মসূচিতে গুলি বর্ষণ ও হামলার ঘটনায় সাবেক এমপি ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী ও সদ্য সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দিদারুল আলমসহ ৭৯ জন নেতাকর্মীকে এজাহারনামীয় ও ২৫০–৩০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গত রোববার মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেন পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জসীম উদ্দিন। এদিন রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক ও পটিয়া আল জামিয়া আল ইসলামিয়া জমিরিয়া কাছেমুল উলুম মাদ্রাসার ছাত্র নুরুল হাসান বাদী হয়ে পটিয়া থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় কাশিয়াইশ ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেমের জামিন নামঞ্জুর করে পটিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাকে জেলে প্রেরণের নির্দেশ দেন। এর আগে আবুল কাশেম গত রবিবার তার ইউনিয়ন পরিষদে গেলে স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা তাকে অবরুদ্ধ করে রাখলে সেনাবাহিনী গিয়ে তাকে উদ্ধার করে পুলিশে সোপর্দ করে। মামলায় আ. লীগ ও অঙ্গসংগঠনের পদবীধারী ৮ জন ইউপি চেয়ারম্যান ও ৩ জন পৌর কাউন্সিলরকেও আসামি করা হয়।
মামলার আসামিরা হলেন সাবেক সংসদ সদস্য মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, উপজেলা পরিষদের সদ্য অপসারিত চেয়ারম্যান দিদারুল আলম, কাশিয়াইশ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম, শোভনদন্ডী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এহসানুল হক, কুসুমপুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকারিয়া ডালিম, হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফৌজুল কবির কুমার, কচুয়াই ইউপি চেয়ারম্যান ইনজামুল হক জসিম, হাইদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক, কোলাগাও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলম, জিরি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম টিপু, দক্ষিণ ভূর্ষি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ সেলিম, পটিয়া পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জসীম উদ্দিন, ৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেখ সাইফুল ইসলাম, ৮ নং ওয়র্ডের কাউন্সিলর সরওয়ার কামাল রাজীব, উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক হাসান উল্লাহ চৌধুরী, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নাজমুল সাকের ছিদ্দিকী, পৌরসভা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক অজয় শীল, যুবলীগ নেতা ডিএম জমির উদ্দিন, প্রজ্ঞাজ্যোতি বড়ুয়া লিটন, আবু সাদাত মুহাম্মদ সায়েম, ইয়ার মুহাম্মদ বাবর, সাইফুল ইসলাম প্রকাশ বালু সাইফু সহ ৮৯ জন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী। এছাড়া মামলায় অজ্ঞাত আরও ২৫০/৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ৪ আগস্ট দুপুর ১২টায় মাদ্রাসা ও কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনেক সমর্থন জানিয়ে সহস্রাধিক শিক্ষার্থী একটি শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে চট্টগ্রাম–কঙবাজার মহাসড়কের পটিয়া সদরের ডাকবাংলো মোড় থেকে প্রদক্ষিণ করে মুন্সেফবাজার এলাকায় পৌঁছলে সাবেক এমপি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর নির্দেশে আ. লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অতর্কিত গুলি বর্ষণ ও হামলা চালায়। এ সময় তারা দেশি বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে ছাত্রদের লক্ষ্য করে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি বর্ষণ করে। এতে অর্ধশতাধিক ছাত্র–জনতা গুলিবিদ্ধ হয়। গুরুতর আহত ছাত্রদের চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে শান্তিরহাট পৌছলে আ. লীগের সন্ত্রাসীরা সেখানে আহত ছাত্রদের বহনকারী এম্বুলেন্সে হামলা চালায়।
এদিকে, কশিয়াইশ ইউনিয়নের নুর আয়েশা বেগম নামের এক মহিলার জায়গা দখলের চেষ্ঠায় মারধরের ঘটনায় কাশিয়াইশ ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেমকে প্রধান আসামি করে এজাহারনামীয় ৭ জনসহ অজ্ঞাত ১০–১২ জনের বিরুদ্ধে পৃথক আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়।
পটিয়া থানার ওসি জসীম উদ্দিন জানান, সাবেক এমপিসহ এজাহারনামীয় ও অজ্ঞাতনামা সহ প্রায় ৪০০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। সেনাবাহিনীর হাতে আটক ইউপি চেয়ারম্যান কাশেমকে দুইটি মামলায় আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।