রাঙ্গুনিয়ায় আমন ধান রোপণে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। গেল বোরো মৌসুমের মতো এবারো হেক্টর প্রতি ৬ মেট্রিক টন করে ধান উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। তাই কৃষকদের ধানের চারা রোপণে কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী ‘লাইন লোগো’ ও ‘পার্সিং’ সহ বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে দেখা গেছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, আমন মৌসুমে এবার ১৫ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার দুই হাজার কৃষকের মাঝে প্রণোদনা হিসেবে বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছিলো। এখন জমিতে চারা রোপণ করছেন কৃষকরা। ইতোমধ্যে উপজেলার ৯০ ভাগ জমিতে আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে এ ধানের আবাদ সম্পন্ন হবে বলে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে। মাঠে কৃষকদের সহায়তায় কৃষি অফিস সর্বাত্মক সহায়তা করে যাচ্ছে বলে জানান তারা।
চট্টগ্রামের শস্যভান্ডার খ্যাত রাঙ্গুনিয়ার গুমাইবিলে গিয়ে দেখা যায়, আমন চারা রোপণের জন্য ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকরা। কেউ বৃষ্টির পানি জমিয়ে সেচ দিচ্ছেন, কেউ মাঠে দিচ্ছেন হাল। কেউবা বীজতলা থেকে চারা উঠিয়ে তা রোপণ করছেন।
গুমাইবিলে কর্মরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা উত্তম কুমার জানান, গুমাইবিলের ৩ হাজার ৪৩৫ হেক্টর জমিতে এবার আমন রোপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এবার বিলে ব্রীধান–৪৯, ৫১, ৫২, ৭৫, ১০৩, সাদা পাইজামসহ বিভিন্ন উন্নত জাতের আমন আবাদ করা হচ্ছে। রোপণের ক্ষেত্রে কৃষকদের বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের পরামর্শ ও সহায়তা করা হচ্ছে।
এসব প্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গুমাইবিলের কৃষকদের ‘লাইন লোগো’ পদ্ধতিতে রোপণের জন্য পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এই পদ্ধতির আওতায় প্রতি দশ লাইন অন্তর নির্দিষ্ট পরিমাণ জায়গা ফাঁকা রাখা হয়। যাতে আলো–বাতাস প্রবেশসহ ভালোভাবে পরিচর্যা ও চলাফেরা করতে পারে। এরপর ধান কিছুটা পরিপক্ষ হলে তাতে প্রয়োগ করা হবে ‘পার্সিং’ প্রযুক্তি। এর আওতায় জমির প্রতি ২০ মিটার অন্তর অন্তর ঢালওয়ালা খুঁটি স্থাপন করা হবে। যাতে এসব ঢালে দিনে শালিক পাখি এবং রাতে পেঁচা বসতে পারে। এসব পাখি ক্ষতিকর পোকার মথ খেয়ে ফেলে। তখন পোকাগুলো আর ডিম পাড়তে পারে না। তখন আর ধানে পোকার আক্রমণ হতে পারে না। এটি সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থাপনার (আইটিএম) একটি প্রযুক্তি। এভাবে কৃষকদের ভালো ফলন নিশ্চিতে নানা পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
কথা হয় গুমাইবিলের কৃষক ফরিদুল ইসলাম জানান, তিনি এবার ১০০ কানি বা সাড়ে ১৬ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করেছেন। ধান আবাদ থেকে ঘরে তোলা পর্যন্ত তার কানি প্রতি ২০ হাজার টাকা খরচ হবে। এবার শ্রমিকের মজুরীও ভাত খাওয়ানোর পর ৮০০–১০০০ টাকা করে দিতে হয়েছে। ভালো ফলন হলে লাভের মুখ দেখবেন বলে তিনি জানান।
সিরাজুল ইসলাম নামে অপর একজন কৃষক জানান, এবার ৪৫ কানি জমিতে তিনি আমন আবাদ করেছেন। গত বোরো মৌসুমে ভালো ফলন পেয়েছেন। বাজারে প্রথম দিকে আড়ি ৩০০ টাকা হারে গেলেও মাঝখানে ২৫০ টাকা হয়ে গিয়েছিলো। তাই ধানের দামের ব্যাপারে মনিটরিং করা গেলে কৃষকরা লাভবান হবেন এবং আবাদেও উৎসাহিত হবেন। মো. লোকমান হাকিম নামে অন্য একজন কৃষক জানান, বাজারের চাইতেও সরকারি গুদামে ধান বিক্রিতে এবার লাভ বেশি ছিলো। কিন্তু সেখানেও একটি সিন্ডিকেট সক্রিয় ছিলো। বিভিন্ন কৃষকের কার্ড ব্যবহার করে রাইচ মিল মালিকরা ধান বিক্রি করেছেন। এটিকে কঠোরভাবে মনিটরিং করতে হবে বলে তিনি জানান।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস জানান, আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া কৃষকদের সর্বাত্মক সহায়তা করা হচ্ছে। কৃষকের মধ্যে রোপা আমন ধান আবাদ নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। এতে এ ধান আবাদে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করা হচ্ছে।