পরলোকে শাস্ত্রীয় সংগীতশিল্পী ওস্তাদ মিহির লালা

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১৮ আগস্ট, ২০২৪ at ৮:৪৫ পূর্বাহ্ণ

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠসৈনিক ও শাস্ত্রীয় সংগীতশিল্পী ওস্তাদ মিহির লালা আর নেই। দীর্ঘদিন রোগভোগের পর গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে সাতটায় নিজ বাসায় তিনি পরলোকগমন করেন। গণমাধ্যমকে খবরটি নিশ্চিত করেন তার স্ত্রী নজরুল সংগীতশিল্পী জয়ন্তী লালা। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, প্রকৌশলী ছেলে সুমন লালা এবং রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী মেয়ে চন্দ্রিমা লালাসহ অনেক আত্মীয়স্বজন রেখে গেছেন।

মিহির লালা দুই বাংলার প্রখ্যাত শাস্ত্রীয় সংগীতশিল্পী এবং অনেক সংগীতশিল্পীর গুরু। সংগীত সাধনায় পার করেছেন অর্ধশত বছরের বেশি সময়। গতকাল সকাল সাড়ে এগারটায় নগরীর জে এম সেন হল চত্বরে ওস্তাদ মিহির লালাকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়। জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও এঙিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট এ এফ এম শামীম তাঁকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানান। এরপর ভলুয়ার দিঘি মহাশ্মশানে তাঁর শেষকৃত্যানুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। গার্ড অব অনার প্রদান করেন কোতোয়ালী থানার পরিদর্শক মো. সাজিদ কামাল।

এ সময় অন্যানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিট কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমদ, সহকারী কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাসেম, বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর নবী, বীর মুক্তিযোদ্ধা নেপাল সেন, শাহ নুরুল আলম, সংগীত শিল্পী কল্পনা লালা, আলাউদ্দিন তাহের, শ্রেয়শী রায়, মৃনানিলী চক্রবর্তী, মন্দিরা চৌধুরী, কামরুল আলম টিপু প্রমুখ।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মিহির লালার মৃত্যুতে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিট কমান্ড, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সংস্কৃতিক কমান্ড, চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমি, উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।

১৯৪১ সালে কঙবাজারে ওস্তাদ মিহির লালার জন্ম হলেও বেড়ে উঠেছেন চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর কানুনগোপাড়ার পোপাদিয়া গ্রামে। আইনজীবী চন্দ্র বিনোদ লালা ও কুলদাবালা লালার আট সন্তানের মধ্যে মিহির লালা তৃতীয় সন্তান। ওস্তাদ মিহির লালার স্ত্রী জয়স্তী লালা নজরুল সংগীতশিল্পী। তিনিও শাস্ত্রীয় সংগীতের তালিম দিয়ে থাকেন। মিহির লালার সংগীতে হাতেখড়ি ওস্তাদ আবু বক্কর সিদ্দিকীর কাছে। এরপর তালিম নিয়েছেন উপমহাদেশের কিংবদন্তি সংগীত গুরুদের কাছে। সবশেষে পন্ডিত বারীন মজুমদারের সান্নিধ্যে এসে হয়ে ওঠেন শাস্ত্রীয় সংগীত জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র।

অল ইন্ডিয়া মিউজিক কলেজ থেকে ‘প্রফেসর অব ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিক’ ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। এই শিল্পী মৃত্যুর আগপর্যন্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষীয় সংগীত শিক্ষাকেন্দ্র ‘আর্য্য সংগীত সমিতি’ ও ‘সুরেন্দ্র সংগীত বিদ্যাপীঠ’এ।

বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠশিল্পী হিসেবেও যুক্ত ছিলেন মিহির লালা। ২০১৮ সালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের এই গুণী কণ্ঠশিল্পী জাতীয় শিল্পকলা একাডেমি পদক লাভ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকক্সবাজারে গরু চোর সন্দেহে যুবককে পিটিয়ে হত্যা
পরবর্তী নিবন্ধসংখ্যালঘুরা এই দেশের জনগণ তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে