গ্রীষ্মকালে নানা রংয়ের তরমুজ চাষে দিনে দিনে সফল হচ্ছে মীরসরাইয়ের কৃষকেরা। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এসব তরমুজ আবাদ করা হয়েছে, এতে দিন দিন চাহিদাও বাড়ছে বৃদ্ধি পাচ্ছে চাষের পরিধি। এরই মধ্যে জমি থেকে ফলন ও তুলে বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রতি কেজি তরমুজ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৯০–১০০ টাকা। প্রতিটি তরমুজ দেড় থেকে ৬ কেজি পর্যন্ত ওজন হয়ে থাকে। তরমুজ চাষে নেওয়া হয়েছে মালচিং ও অর্গানিক পদ্ধতি। গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে সহযোগিতা করছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় গত বছর প্রথমবারের মতো ৮ জন কৃষকের মাধ্যমে ১ একর জমিতে পরীক্ষামূলক গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করা হয়। স্মল হোল্ডার এগ্রিকালচারাল কম্পিটিটিভনেস প্রজেক্টের (এসএসিপি) আওতায় ৫০ শতক জমিতে প্রদর্শনী করা হয়। এবার চাষ হয়েছে ৩ একর জমিতে। আগামীতে আরও বাড়বে বলে আশাবাদী কৃষি বিভাগ।
সরেজমিনে জানা গেছে, চাষ করা তরমুজ ক্ষেতগুলোয় নেওয়া হয়েছে অর্গানিক ও মালচিং পদ্ধতি। পোকামাকড় দমনে ব্যবহার করা হচ্ছে ফেরোমন ফাঁদ ও ইয়েলো কার্ড। গাছে ঝুলছে ইয়েলো কিং, ব্লাকবেবি, রবি, সূর্যডিম, স্মার্টবয়েজ, ল্যান্ডফাই জাতের তরমুজ। উপজেলার জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের সোনাপাহাড়, ইছাখালী ইউনিয়নের চরশরত ও খৈয়াছড়া ইউনিয়নের মসজিদিয়া এলাকায় এ তরমুজ চাষ করা হয়েছে। তরমুজের পরিচর্যা করার জন্য দেওয়া হয়েছে মালচিং পেপার। ওপরে মাচা দিয়ে ফল প্যাকেট করে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। এসব তরমুজের ভেতরের অংশ লাল হয় এবং খেতেও বেশ সুস্বাদু।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে মসজিদিয়া এলাকায় কৃষক ইকবাল হোসেন ৫০ শতক, আবু নাছের ও মোহাম্মদ লিটন ৩৫ শতক, বেচুমিয়া ৩৫ শতক, মো. ইউসুফ ৩৫ শতক, শাহেদুল ইসলাম শাহেদ ৪০ শতক, আব্দুল কুদ্দুস ১৫ শতক ও মোহাম্মদ হেলাল ১৫ শতক জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন।
চাষি ইকবাল হোসেন বলেন, আমি ৫০ শতক জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। এতে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আবহাওয়া ঠিক থাকলে প্রায় ৪ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারবো। স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি চট্টগ্রাম শহরের ফলমণ্ডিতে এসব তরমুজ পাঠানো হয়। গত বছর প্রথমবারের মতো তরমুজ চাষ করে প্রায় ২ লাখ টাকা লাভ হয়েছে। গত বছর ২ জাতের তরমুজ চাষ করলেও এবার ৫ জাতের চাষ করেছি। আমার দেখাদেখি আরও ৬ জন প্রথম তরমুজ চাষ করেছেন। চাষি শাহেদুল ইসলাম শাহেদ বলেন, ‘ইকবালকে দেখে আমি ৪০ শতক জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। ফলন বাজারে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি তরমুজের বর্তমান ওজন দেড় থেকে ৬ কেজি। প্রতি কেজি তরমুজ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৯০–১০০ টাকা। কম খরচ ও পরিশ্রমে তরমুজ চাষ করে ভালো লাভ পাওয়া যাচ্ছে। এটি যেমন রসালো, তেমনই সুমিষ্ট।’
এই বিষয়ে মীরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, ‘উপজেলায় এবার ৩ একর জমিতে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করা হয়েছে। বীজ, মালচিং পেপার, প্রশিক্ষণ দিয়ে সার্বিক সহযোগিতা করা হয়েছে। কৃষি অফিস থেকে সবগুলো ক্ষেত সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হয়। এখানকার মাটি তরমুজ চাষের জন্য উপযোগী। দাম ভালো পাওয়ায় ক্রমান্বয়ে চাষের পরিধি বাড়ছে। আগামীতে আরও বাড়বে বলে আশাবাদী।