অনার্সে পড়ার সময় শিক্ষা সফর শেষে বাসে করে কাপ্তাই থেকে ফিরছিলাম। যাদের বাসা পথিমধ্যে তারা একজন একজন করে নেমে যাচ্ছিলো। আমরা যাদের বাসা অন্য পথে সেসব ছাত্রীদেরকে কলেজে ব্যাক করতে হলো। কিছুটা দুশ্চিন্তা ভর করেছিলো, রাত্রিবেলা একা কীভাবে এত দূরে বাসায় যাবো! কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে কলেজের গেটে ঢুকতেই বাসের হেডলাইটের আলোয় যে অভিভাবককে প্রথম দেখতে পেলাম তিনি আমার আব্বু। আব্বুর চশমা চকচক করে উঠলো আলোতে। তার চেয়েও বেশি আলোকিত হলো আমার মন। আমরা বাস থেকে নামার আগে স্যার–ম্যাডামরা নামলেন। আমি বাস থেকে নামতেই জসীম স্যার বললেন, ‘নুসরাত, তোমার আব্বু অনেক সচেতন একজন অভিভাবক, ভালো লাগলো ওনার দায়িত্ববোধ দেখে’। শত ছাত্রীর মাঝে স্যার আমাকে ডেকে যখন আমার আব্বুর প্রশংসা করলেন আমার ভালো লাগা তখন আকাশ ছোঁয়া। একবার প্রচণ্ড জ্বরে আমার কাহিল অবস্থা। সারারাত আমার আব্বু আমার রুমে বসে ছিলেন। আধো ঘুমে আধো জাগরণে যখনই চোখ খুলি আব্বুকে দেখতে পাই। নিশ্চিন্তে আমি আবার ঘুমিয়ে পড়ি। কিন্তু আমার আব্বু সকালবেলা পর্যন্ত অসুস্থ কন্যার শিয়রে বসে ছিলেন। অসুস্থ চোখে ঘুম ভেঙে খুব ভোরে আব্বুকে আমার পাশে বসে থাকতে দেখে কেনো যেনো আমার চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়তে লাগলো, আমার আব্বু পরম মমতায় আমার চোখের পানি মুছে দিলেন। মাস্টার্সে পড়ার সময় বড় অংকের ফি জমা দিতে হচ্ছিলো। আমার একজন ফ্রেন্ড শহরে থেকে লেখাপড়া করে কিন্তু তার পরিবার থাকে গ্রামে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গ্রাম থেকে তার হাতে টাকা এসে পৌঁছুবে না বলেই সে আমার কাছে ধার চাইলো। আমার আব্বুকে বলার সাথে সাথেই তার টাকাও ম্যানেজ করে দিয়েছিলেন। এভাবেই আব্বু সব সময় নীরবে আমাদের সকলের চাওয়া, প্রয়োজনীয়তাগুলো পূরণ করে গেছেন জীবনের শেষ সময় অব্দি। অসংখ্য লক্ষ–কোটি স্মৃতি আব্বুর সাথে। আব্বুকে নিয়ে লিখতে বসতেই আজ নির্দিষ্ট শব্দের মধ্যে এই স্মৃতিগুলো যেগুলো প্রথমে মাথায় এসেছে সেগুলোই লিখলাম। আমার আব্বু জনাব আলহাজ্ব মোঃ শফিকুল ইসলাম, আয়কর আইনজীবী, একজন সচেতন, দায়িত্ববান, স্নেহবৎসল পিতা, সৎ, পরোপকারী, শিক্ষানুরাগী অসাধারণ ভালো মনের মানুষ। ১৯ আগস্ট আব্বুর ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী। দেখতে দেখতেই ছয় বছর পার হয়ে গেলো আব্বুকে ছাড়া। কিন্তু এমন একটা মুহূর্ত নাই এমন একটা সময় নাই যে আব্বুকে মনে পড়ে না! প্রতিদিন কোনো না কোনোভাবেই আব্বুর কথা আর কাজগুলো উদাহরণস্বরূপ আমাদের আলোচনায় আসবেই। মহান আল্লাহ আমার আব্বুকে বেহেস্তের সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থানে অধিষ্ঠিত করুন। রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা।