পারকি সৈকতে শত শত ঝাউগাছ বিলীন

বালু উত্তোলন ও অব্যবস্থাপনা

এম. নুরুল ইসলাম, আনোয়ারা | শনিবার , ১৭ আগস্ট, ২০২৪ at ৬:৩৪ পূর্বাহ্ণ

সম্ভাবনায় পারকি সৈকতের সৌন্দর্য বর্ধনকারী ঝাউ গাছগুলো একে একে বিলীন হতে চলেছে। দীর্ঘদিন ধরে সৈকত ও তার আশপাশ এলাকায় বালু খেকোদের কালো থাবা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের জলাধার দখল করে মাছ চাষ, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা অব্যবস্থাপনা ও উপকূলীয় বন বিভাগের উদাসীনতার কারণে বর্তমানে শত শত ঝাউগাছ বিলীন হয়ে সৈকতের বালুচরে পড়ে আছে। যার ফলে সৈকতের সৌন্দর্য অনেকটা হারিয়ে গেছে। সেই সাথে সৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটকরাও দিন দিন আগ্রহ হারাচ্ছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ বিগত ১০ বছর আগেও যেখানে হাজার হাজার ঝাউগাছ পারকি সমুদ্র সৈকতে সৌন্দর্য বর্ধনে পর্যটকদের অন্যতম মূল আকর্ষণ ছিল। সারি সারি ঝাউ গাছগুলো সৈকতের বুকে পর্যটকদের শীতল ছায়ায় আবদ্ধ করে রাখতো। বর্তমানে সেই ঝাউবাগান আর নেই।

উপকূলীয় বন বিভাগের উদাসীনতা, বালু উত্তোলন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও নানা অব্যবস্থাপনার কারণ বিলুপ্তির পথে পারকি সৈকতের ঝাউবন। শুধু তাই নয় দীর্ঘদিন ধরে সৈকতের বেড়িবাঁধের পাশে পানি চলাচলের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের যে জলাধার ছিল মাছ চাষের নামে জলাধার দখল করে বন্ধ করে রেখেছে স্থানীয় প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। যার ফলে প্রবল বর্ষাতে এসব মৎস্য ঘেরের পানি জলাবদ্ধতা হয়েও ঝাউবাগান আছড়ে পড়ে বিনষ্ট হচ্ছে বছরের পর বছর ঝাউবাগান। এসব কারণে গত এক মাসে শত শত ঝাউগাছের মাটি সরে গিয়ে সৈকতের বুকে বিপন্ন হয়ে পড়ে থাকলেও যেন দেখার কেউ নেই।

সচেতন মহলের অভিযোগ, দ্রুত এ সৈকতের সুরক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ করা না হলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে সৈকতে ঝাউবাগানের আর অস্তিত্ব থাকবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ১৫ বছরে পারকি সৈকত থেকে যে পরিমাণ বালু উত্তোলন করা হয়েছে তা নজিরবিহীন, সৈকতের বেহালদশা হওয়ার মূল কারণের মধ্যে বালু উত্তোলন ও অন্যতম কারণ। দীর্ঘদিন ধরে উপকূলীয় বন বিভাগের নজরদারি না থাকা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের জলাধার দখল করে গড়ে উঠা মৎস্য ঘেরের জলাবদ্ধতা, প্রাকৃতিক বিপর্যয়সহ নানা কারণে বিলুপ্তির পথে পারকি সৈকতের হাজার হাজার ঝাউগাছ। ১০ বছর আগেও যেখানে সারি সারি ঝাউ গাছ সৈকতের সৌন্দর্য বর্ধনে দাঁড়িয়ে ছিল সেখানে পুরো সৈকত যেন লন্ডভন্ড হয়ে পড়ে আছে সে সব ঝাউগাছ। যে ঝাউ গাছগুলোকে কেন্দ্র করে এই সৈকত গড়ে উঠেছে সেই ঝাউগাছগুলোর অস্তিত্ব বিলীনের পথে। বর্তমানে সৈকতের দক্ষিণ অংশে মৎস্যঘের থেকে পানি নেবে সৈকতে শত শত ঝাউ গাছ লন্ডভন্ড হয়ে পড়ে আছে। সৈকতের চরের বালু সরে খাদের সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে অধিকাংশ ঝাউগাছের শিকড়ের মাটি সরে গিয়ে জোয়ারের পানির থাবায় অরক্ষিত আছে।

স্থানীয়রা জানান, কয়েক বছর আগে পারকি সমুদ্র সৈকতে ড্রেজার বসিয়ে বালি উত্তোলন ছাড়াও এ সৈকতের আশপাশ এলাকা থেকে নিয়মিত বালু উত্তোলনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাগর পাড়ের উদ্ভিদ ও সাগরের জীব বৈচিত্র্য।

সৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটক মো. হাসান বলেন, বর্তমানে পারকি সৈকতে ঝাউবাগানের বিপন্ন অবস্থা দেখে। বেড়াতে আসার আনন্দটাই মাটি হয়ে গেল। তিনি আরো বলেন পারকি সৈকতে আমরা বেড়াতে ঝাউবাগানে বসে, আড্ডা গান উৎসব করার জন্য কিন্তু বর্তমানে ঝাউ বাগানের পরিধি অনেক ছোট হয়ে গেছে।

উপজেলার নির্বাহী অফিসার ইশতিয়াক ইমন জানান, সৈকতের সুরক্ষার বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে। তাছাড়া ঝাউগাছ ও বেড়িবাঁধ রক্ষায় উপকূলীয় বনবিভাগ ও পানির উন্নয়ন বোর্ডের সাথে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅবৈধ বালু উত্তোলনে হুমকিতে বেড়িবাঁধ কাম সড়ক, শত শত বসতবাড়ি
পরবর্তী নিবন্ধচীন ও বাংলাদেশের মধ্যে সরাসরি জাহাজ চালাবে পিআইএল