কাজে ফিরলেও স্বাভাবিক পুলিশি কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে না নগরীর বিভিন্ন থানার পুলিশ। বন্ধ রয়েছে মামলা তদন্ত, আসামি গ্রেপ্তার, পুলিশি টহলসহ পুলিশের বহু কর্মকাণ্ড। সেনাবাহিনীর সাথে টহল এবং জিডি এবং টুকটাকি মামলা রেকর্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে পুলিশের কার্যক্রম। অস্ত্র গোলাবারুদের পাশাপাশি প্রাত্যহিক প্রয়োজনীয় নানা সামগ্রী পুড়ে ছাই বা লুট হয়ে যাওয়ায় পুলিশ অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছে। এরমধ্যে খুন ধর্ষণসহ শত শত মামলার ডকেট পুড়ে যাওয়ায় পুলিশের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ। সিএমপি কমিশনারসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা রাতে দিনে কাজ করলেও স্বাভাবিক পুলিশিং শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। অবশ্য আগামী সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি এবং স্বাভাবিক পুলিশি কার্যক্রম শুরু হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। পুলিশ এবং সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, কোটা সংস্কার ইস্যুর জের ধরে সৃষ্ট গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর বিক্ষুব্ধ জনতা দেশের বিভিন্ন স্থানের মত চট্টগ্রামেও থানা আক্রমণ করে। পুলিশি স্থাপনাগুলোতে আগুন দেয়ার পাশাপাশি অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ নানা সামগ্রী লুটতরাজ করা হয়। আগুনে সিএমপির কোতোয়ালী, পাহাড়তলী, পতেঙ্গা, ইপিজেড থানা পুরোপুরি পুড়ে যায়। কোতোয়ালী, পাহাড়তলী থানার বিল্ডিং ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই। ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় হালিশহর থানা। পতেঙ্গা ও ইপিজেড থানা পুরোপুরিভাবেই ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়ে।
অসহায় পুলিশ পরবর্তীতে ১১ দফা দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করে। অন্তবর্তীকালিন সরকার গঠনের পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং পুলিশের নতুন আইজি দাবি দাওয়া মেনে নেয়ার আশ্বাস দিলে পুলিশ কাজে ফিরে। কিন্তু গত ১২ আগস্ট থেকে কাজে ফেরার বেশ কয়েকদিন গত হলেও স্বাভাবিক হয়নি পুলিশি কার্যক্রম। খুবই সীমিত পরিসরে চলছে সেবা। সেনাবাহিনীর টহল দলের সাথে পুলিশ কাজ করছে। এতে নগরীতে স্বস্তি ফিরতে শুরু করলেও পুলিশ পুরোপুরি ছন্দে না ফিরলে নগরবাসী নিশ্চিন্ত হতে পারছে না বলে গতকাল একাধিক বাসিন্দা জানিয়েছেন। তারা বলেন, পুলিশ শুধু টহল দিচ্ছে। থানায় পুরাতন পদ্ধতিতে জিডি করছে। আসামি ধরা বা মামলার তদন্তের মতো জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ সেবাগুলো পাওয়া যাচ্ছে না। থানার কম্পিউটার এবং ল্যাপটপ লুট বা পুড়ে যাওয়ায় অনলাইন কার্যক্রম প্রায় বন্ধ রয়েছে। আবার আগে অলিতে গলিতে যেভাবে পুলিশের অবস্থান বা টহল থাকতো সেগুলোও চলছে না। এতে সুযোগ সন্ধানী বা চোর ডাকাত কিংবা ছিনতাইকারীরা সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করছে।
গতকাল বাদুরতলা এবং হালিশহর এলাকার দুজন বাসিন্দা পুলিশের অভাবে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগার কথা জানান। পুলিশি কার্যক্রম নিয়ে সিএমপি কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পুলিশ কাজে যোগ দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত থানাগুলো মেরামত এবং সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। প্রতিটি থানায় ভাড়া করা গাড়ি দেয়া হয়েছে। পুলিশের প্রয়োজনীয় সরঞ্জামও সরবরাহ করা হচ্ছে। লুট হওয়া অস্ত্রগুলো উদ্ধারের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে র্যাব সিএমপির থানা থেকে লুট হওয়া বেশকিছু অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা পুলিশকে নানাভাবে সহায়তা করছে। তিনি আগামী দশ থেকে পনের দিনের মধ্যে পুলিশ স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে আসবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অপরদিকে আগুন দেয়া থানাগুলোতে ৫৮৯টি মামলার ডকেট পুরোপুরি ছাই হয়ে গেছে। এসব মামলার ডকেট পুনরায় তৈরি বা সংগ্রহ করা বেশ কঠিন হবে বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ছাই হয়ে যাওয়া ডকেটগুলো অনলাইন বা আদালত থেকে সংগ্রহ করার চেষ্টা করা হবে। তবে শেষপর্যন্ত সব ডকেট পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
মামলার ডকেটে একটি মামলার এজাহার থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ এবং সংশ্লিষ্ট সব কাগজপত্র সংরক্ষিত থাকে। পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া ডকেটগুলোতে খুন ধর্ষণ ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধের মামলা ছিল বলেও সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিষয়টি নিয়ে পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাদের থানাগুলোতে অনেক মামলার ডকেট পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তবে আমাদের অনেক ডকেট অনলাইনে রয়েছে। সার্কেল এবং ডিসি অফিসেও মামলাগুলোর ডকেট সংরক্ষিত থাকে। আশা করি আমরা ডকেটগুলো সংগ্রহ করতে পারবো। তিনি নগরবাসীকে সহনশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, শীঘ্রই পুলিশ পুরোদমে কার্যক্রম চালাবে। যে কদিন আমরা নানা সীমাবদ্ধতার কারণে পুলিশি বিচরণ স্বাভাবিক করতে না পারি সে কদিন আমি নগরবাসীকে সহনশীল এবং পাশের কাউকে কোনো অন্যায় বা সন্ত্রাস করতে না দেয়ার অনুরোধ করছি। পুলিশকে পুরোদমে কার্যকর করতে সরকারের পক্ষ থেকে নিরলসভাবে কাজ করা হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।