নগরীতে খেলার মাঠের এমনিতেই তীব্র সংকট। যে কয়টি মাঠে শিশু–কিশোররা খেলতো তাদের মধ্যে অন্যতম সিআরবির সিরিশ তলা মাঠটি। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন বয়সের ছেলেরা এই মাঠে খেলা করতো। কিন্তু বর্তমানে মাঠটির অবস্থা একেবারেই বেহাল দশা। বৃষ্টির ফলে একেবারে কর্দমাক্ত হয়ে গেছে মাঠটির বেশিরভাগ অংশ। একপাশে যা একটু জায়গা ভাল রয়েছে সেখানে কোনমতে খেলার চেষ্টা করছে ছেলেরা। একদিকে উন্মুক্ত মাঠ আর অপরদিকে গাছ গাছালিতে ভরা থাকায় সারা দিনই খেলা করে এখানে নানা বয়সের ছেলেরা। প্রচুর মানুষ মাঠের চারপাশে হাঁটাহাঁটি করে। কিন্তু বর্তমানে মাঠটি একেবারেই খেলার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। নানা অনুষ্ঠানের জন্য মাঠটি নানা সময় খোঁড়াখুড়ি করা হয়। আর অনুষ্ঠানের পরে মাঠ সমতল করে দেওয়া হয়না। একরকম খানাখন্দক করে ফেলে যাওয়া হয়। যার পরিণতি এখন কর্দমাক্ত মাঠ। অথচ বালির এই মাঠে পানি জমা বা কর্দমাক্ত হওয়ার কথা নয়। কিন্তু নানা সময় খোঁড়াখুড়ির কারণে মাঠটিতে এখন পানি জমে থাকে। ফলে খেলা আর সম্ভব হয় না।
গতকাল বিকেলে সিআরবির এই মাঠে গিয়ে দেখা যায় মাঠের একেবারে উত্তর পশ্চিম পাশে সামান্য একটু জায়গা ভাল রয়েছে। আর সেটা খেলার জন্য মোটেও পর্যাপ্ত নয়। কিন্তু তারপরও সেখানে কিছু শিশু–কিশোর খেলছিল একেবারে গাদাগাদি করে। খেলাতো নয় যেন দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মত অবস্থা। কাছে যেতেই যেন ক্ষোভে ফেটে পড়ল এইসব কোমলমতি শিশু–কিশোররা। তাদের অভিযোগ এই মাঠে যাও একটু খেলার সুযোগ ছিল তাদের সেটাও শেষ হয়ে গেছে। মাঠের পুরো অংশ জুড়ে কাঁদা। পা ফেরার কোন সুযোগ নেই। ফলে যে অংশটুকু ভাল রয়েছে সেখানে কিছু সংখ্যক ছেলে খেললেও অনেকেই বসে অপেক্ষা করছে কখন তাদের সুযোগ আসবে। খেলতে গিয়ে শিশু–কিশোরদের মাঝে ঝগড়াও হচ্ছে। কারা আগে খেলবে আর কারা পরে খেলবে, কারা কতক্ষন খেলবে তা নিয়ে বাঁধছে ঝগড়া।
দেশের পট পরিবর্তনের আগে কোটা বিরোধী আন্দোলন যা পরবর্তীতে রূপ নেয় বৈশম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে। টানা এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা এই আন্দোলনের সময় শিশু–কিশোররা বের হতে পারেনি ঘর থেকে। একদিকে স্কুল কলেজ বন্ধ, অন্যদিকে আন্দোলন দিন থেকে দিন রূপ নিচ্ছিল তীব্র থেকে তীব্রতর। সে সময় নিরাপত্তার কারণে শিশু–কিশোররা বের হতে পারেনি ঘর থেকে। গত ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর পরিস্থিতি যখন কিছুটা হলেও শান্ত হয়ে উঠে তখনই বেরিয়ে পড়ে শিশু–কিশোররা। কিন্তু মাঠে গিয়ে তাদের যেন মাথায় হাত। একি অবস্থা মাঠের। এ কোন মাঠ। তাদের পরিচিত মাঠের এ কেমন অবস্থা। ক্ষোভ আর হতাশার যেন শেষ নেই। গতকাল খেলতে আসা অনেক শিশুই বলল আমরা কোথায় খেলব। এই মাঠটি ছিল আমাদের জন্য উন্মুক্ত। কিন্তু এই কাঁদার মধ্যে আমরা কিভাবে নামব। তাই যে অংশটা ভাল রেয়ছে সেখানে খেলার চেষ্টা করছি। কিন্তু এতটুকু জায়গায় খেলা যায়না। দেশের এখন যা পরিস্থিতি তাতে এই মাঠ কারা সংস্কার করবে বা কিভাবে সংস্কার করবে তারও কোন নিশ্চয়তা নেই। তাইতো এইসব শিশু–কিশোরদের ভরসা এখন কেবল রোদ। যদিও কয়েকদিন রোদ উঠে তাহলে হয়তো মাঠটি শুকাবে। তখন তারা খেলতে পারবে। অনেক অভিভাবকও মাঠের এই অবস্থা দেখে ক্ষোভ আর হতাশা প্রকাশ করেন। তাদের অভিযোগ দেশের অণ্য সব কিছুর মাত এই মাঠটিও নষ্ট হয়ে গেছে। বাচ্চাদের ঘরে কতক্ষণ বন্দি রাখা যায়। তার খেলতে চায়। কিন্তু এই যদি হয় মাঠের অবস্থা তখন তারা খেলবে কোথায়। তাই তাদেরও প্রত্যশা একটু রোদ এসে যদি মাঠটি শুকিয়ে যায় তাহলে অন্তত তাদের বাচ্চারা খেলতে পারবে।