‘বস্তায় করে টাকা যেত’ সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায়

অনুসন্ধানে দুদক

| শুক্রবার , ১৬ আগস্ট, ২০২৪ at ৯:৩৮ পূর্বাহ্ণ

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে জনবল নিয়োগ, বদলি ও পদায়নের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণের একটি অভিযোগ অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছে দুদক। ক্ষমতার পালাবদলের পর কামাল ও পাঁচ সহযোগীর বিরুদ্ধে আসা বিস্তর অভিযোগ তদন্তে বৃহস্পতিবার পাঁচ সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করেছে দুর্নীতি বিরোধী সংস্থাটি। দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) মো. আকতারুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে একটি অনুসন্ধান কমিটি কাজ শুরু করেছে।

কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, অনুসন্ধান কমিটিতে প্রধান করা হয়েছে উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলমকে। কমিটিতে আরও রয়েছেনসংস্থাটির উপপরিচালক মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন, সহকারী পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ, মো. নাছরুল্লাহ হোসাইন ও মোহাম্মদ জিন্নাতুল হোসাইন। খবর বিডিনিউজের।

দুদকে দায়ের করা অভিযোগে আসাদুজ্জামান খান কামাল ও তার পাঁচ সহযোগীর বিরুদ্ধে ‘সিন্ডিকেট’ করে ‘বস্তায় বস্তায়’ ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব অভিযোগের বিষয়ে আসাদুজ্জামান কামাল ও তার সহযোগী কারও বক্তব্য জানতে পারেনি বিডিনিউজ।

গত ৫ অগাস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে আসাদুজ্জামান খান কামালসহ সদ্য সাবেক অন্যান্য মন্ত্রীরা রয়েছেন লোকচক্ষুর আড়ালে। এর মধ্যে দুয়েকজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এখন পর্যন্ত হদিস মেলেনি। মঙ্গলবার আসাদুজ্জামান ও তার স্ত্রী লুৎফুল তাহমিনা খান এবং তাদের ছেলেমেয়ের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)

আসাদুজ্জামানের দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে দুদকে দেওয়া অভিযোগে বলা হয়েছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই তিনি ঘুষ হিসেবে ‘বস্তা বস্তা’ টাকা নিতেন। পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিস থেকে এ টাকা আদায় করা হত।

এ কাজে তাকে সহায়তা করতেন সাবেক অতিরিক্ত সচিব হারুন অর রশীদ বিশ্বাস, যুগ্মসচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস, মন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মনির হোসেন, জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোল্লা ইব্রাহিম হোসেন।

অভিযোগে বলা হয়, টাকা আদায়ে মূল ভূমিকা ছিল হারুন অর রশীদের। ‘হাজার হাজার কোটি টাকা’ হাতিয়ে নিয়েছেন তারা। হারুন অবসরে গেলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সকল ঘুষ, দুর্নীতিতে ছিলেন তিনি। ঘুষদুর্নীতি থেকে পাওয়া টাকা পাঠানো হত ‘দেশের বাইরে’।

দুদকের হাতে আসা অভিযোগে বলা হচ্ছে, জেলায় পুলিশ সুপার নিয়োগে সর্বনিম্ন ৮০ লাখ থেকে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত নেওয়া হত। এ ‘সিন্ডিকেটের’ হাত ছাড়া পুলিশের কেউ কোনো জেলায় বা গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতেন না। জেলা পুলিশ সুপার হিসেবে পদায়নের ক্ষেত্রে এক থেকে ৩ কোটি টাকা নেওয়া হত।

২০২২ সালের ৩০ জুন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পান ডিআইজি মোল্ল্যা নজরুল ইসলাম। সেজন্য তাকে ৫ কোটি টাকা গুণতে হয় বলে সেখানে দাবি করা হয়েছে।

বলা হয়েছে, পদায়ন পাওয়ার মাসখানেক আগে হারুন অর রশীদ বিশ্বাসের কাছে ৫ কোটি টাকার একটি চেক দেন নজরুল। পদায়নের পর একটি হোটেলে হারুন অর রশীদের কাছে নগদ ২ কোটি টাকা দেন তিনি। তখন আগের চেকটি ফেরত নিয়ে নজরুল ৩ কোটি টাকার একটি চেক দেন। পরবর্তীতে বাকি টাকাও দেন। এসব টাকা বস্তায় ভরে পৌঁছে দেওয়া হয় আসাদুজ্জামান খান কামালের ফার্মগেটের বাসায়।

মন্ত্রিপুত্র ‘জ্যোতি’ পুলিশের এক কর্মকর্তাকে বদলি করতে গিয়ে ব্যর্থ হন। বিষয়টি নিয়ে ছেলেকে হারুন অর রশীদের সঙ্গে কথা বলতে বলেন আসাদুজ্জামান খান কামাল। এ নিয়ে গত জুন মাসে বাসায় কলহ তৈরি হয়। ক্ষুব্ধ হয়ে বাসায় ভাঙচুর চালান জ্যোতি।

কোনো এনজিও’র ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ বা ‘এনওসি’ নিতেও ৮০ লাখ থেকে এক কোটি টাকা দিতে হত বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছ, ২০১৮ সালে ঢাকার উত্তরার একটি উন্নয়ন সংস্থার ‘এনওসি’ নিতে গেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিপত্তি বাঁধে। পুলিশের বিশেষ শাখা, জেলা প্রশাসক, এনএসআই ইতিবাচক প্রতিবেদন দাখিল করলেও ফাইলটি মাসের পর মাস আটকে রাখা হয় মন্ত্রণালয়ে। পরে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচনের আগে মন্ত্রীকে ৮৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়। ফার্মগেট এলাকায় কামালের বাসার সামনে টাকার ব্যাগটি দেওয়া হয় তার পরিবারের এক সদস্যের কাছে।

ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের নিয়োগও নিয়ন্ত্রণ করতেন কামাল ও তার সহযোগীরা। কোনো সার্কুলার হলেই মন্ত্রীর দপ্তর থেকে একটি ‘তালিকা’ পাঠানো হত। সেই মোতাবেক ফায়ার সার্ভিস তাদের নিয়োগ দিত বলে দুদকে অভিযোগ আনা হয়েছে।

সেখানে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে ২ অক্টোবর ৫৩৫ জনকে জনকে নিয়োগ দেয় ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তর। এর মধ্যে ৪৩৬ ছিলেন পুরুষ ফায়ার ফাইটার, ১৫ জন নারী ফায়ার ফাইটার এবং ৮৪ জন গাড়িচালক। নিয়োগ কার্যক্রমের শুরুতেই মন্ত্রীর দপ্তর থেকে ‘২৫০ জনের একটি তালিকা’ পাঠানো হয় অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে। সে অনুযায়ী নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করে ফায়ার সার্ভিস। এ বাহিনীতে নিয়োগের জন্য জনপ্রতি ৮১২ লাখ টাকা নেওয়া হত বলে অভিযোগ করা হয়েছে দুদকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজনগণের রায় বাস্তবায়নের জন্য নিরপেক্ষ নির্বাচন দরকার
পরবর্তী নিবন্ধখাতুনগঞ্জে কমেছে এলাচের দাম