কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনরত পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠকের পর রোববার (১১ আগস্ট) আন্দোলনকারী পুলিশ সদস্যদের সমন্বয়ক পরিদর্শক জাহিদুল ইসলাম ও কনস্টেবল শোয়াইব হাসান এ ঘোষণা দেন। তাঁরা গণমাধ্যমে জানান, ‘আমরা সরকারের কাছে যেসব দাবি জানিয়েছিলাম তার বেশিরভাগই মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তাই আমরা কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিচ্ছি। আশা করি সবাই সুন্দরভাবে নিজ নিজ দায়িত্বে ফিরবেন।’ উল্লেখ্য, শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনার পর বেশকিছু দাবিতে গত ৬ আগস্ট থেকে কর্মবিরতির ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ পুলিশ অধস্তন কর্মচারী সংগঠন। এর আগে রোববার রাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আন্দোলনরত পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার (অব.) সাখাওয়াত হোসেন। বৈঠকে পুলিশের আইজিপি, র্যাবের ডিজিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় এম সাখাওয়াত হোসেন সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, দেশে পুলিশ ফিরে না এলে কী অবস্থা হতে পারে তা আপনারা জানেন। একটু আগে ব্যাংকের মধ্যে মারামারি দেখলাম। মনে হচ্ছে, যার মতো যা পারে দখল করছে। আমি প্রথমেই বলতে চাই, যারা এখনো কর্মস্থলে ফেরেননি তাদের ফেরার সর্বশেষ তারিখ হচ্ছে বৃহস্পতিবার। এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবারের মধ্যে যোগদান না করলে আমরা ধরে নেব, আপনারা চাকরি করতে ইচ্ছুক নন। এ বিষয়ে পুলিশের আইজিপি, র্যাবের ডিজি এবং ডিএমপির কমিশনারের সঙ্গে আলোচনা করেছি। বৃহস্পতিবারের মধ্যে যে যার স্থানে চলে যাবেন। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে আপনারা ডিউটিতে থাকবেন। কারও গায়ে অহেতুক কেউ হাত দিবেন না। বিচারের প্রক্রিয়াটা করব আমরা। কিন্তু বিচার বিভাগ তাদের বিচার করবে। বড় বা ছোট যারা দোষী হবেন তাদের পানিশমেন্ট দেওয়া হবে। কাউকে ঢালাওভাবে দোষারোপ করা যাবে না। জনগণের উদ্দেশ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেন, আপনারা পুলিশের গায়ে হাত উঠাবেন না। আপনারা নিজেরাই সাফার করছেন। রাতে আমার কাছে বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতি হচ্ছে বলে ফোন আসে। আমি বলি, আল্লাহ আল্লাহ করো। ডাকাতি হলে পুলিশ না থাকলে কী করবে? তিনি আরও বলেন, পুলিশের আহতদের আমি এইমাত্র দেখে এসেছি। আমাদের যতদূর করা দরকার তা আমরা করব। আপনারা বৃহস্পতিবারের মধ্যে জয়েন করেন। এটা প্রথম প্রায়োরিটি। একটু আগে দেখলাম আনসারের একটা অংশ রাস্তা বন্ধ করে রেখেছে। তাদের কিছু দাবি দাওয়া আছে। সবার দাবি দাওয়া আছে। আমারও দাবি দাওয়া আছে। আমার দাবি দাওয়া হচ্ছে আপনারা ফিরে যান আমি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে যতটুকু করা দরকার ইমিডিয়েটলি করব। আমি কোনো রাজনৈতিক লোক না। আমি যা বলব তাই করব।
এ কথা অস্বীকার করা যাবে না যে পুলিশের অনুপস্থিতিতে বিভিন্ন স্থানে সংঘাত–সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনা বেড়েছে। বিশেষ করে সংখ্যালঘু সমপ্রদায়ের মানুষ খুবই আতঙ্কে আছেন। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। পুলিশের অনুপস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থী ও স্বেচ্ছাসেবকেরা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজ করেছেন। কিন্তু সেটা তো পরিকল্পিত ও নিয়মমাফিক ছিল না। তারা তাদের মতো করে এইসব কাজ এগিয়ে নিয়ে গেছে। এ অবস্থায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে পেশাদার লোকবল নিয়োগের বিকল্প নেই।
আমরা দেখেছি, পুলিশ বাহিনী জঙ্গি, সন্ত্রাস, মাদক, চোরাচালানি বা মানুষ পাচারের বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে এসেছে। আগে পুলিশের নাম শুনলে মানুষ ভয় পেত। পরে মানুষ জেনেছে পুলিশ সেবা দেয় ও তাদের পাশে দাঁড়ায়। জনগণের ভীতি দূর করে জনগণের সেবা করেছে পুলিশ। পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা ছিল। যে কারণে হোক পুলিশের ভেতর যে ভয় ঢুকেছে, তা দূর করতে হবে। এই আস্থা অটুট রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। তাদের এ ভালো কাজগুলো চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিতে হবে। দেশের আইন–শৃঙ্খলা রক্ষা এবং জননিরাপত্তা বিধান করা পুলিশের প্রধান কাজ। প্রতিনিয়ত এই সেবার মান বাড়াতে হবে। প্রত্যেক নাগরিককে নিরাপত্তা দেওয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সরকারের নীতিনির্ধারকদেরও এটা বুঝতে হবে। জনজীবনের নিরাপত্তা প্রদান জরুরি।