হত্যায় জড়িতদের দ্রুত বিচারসহ আইন মন্ত্রণালয়ের ৫ সিদ্ধান্ত

এখতিয়ারাধীন যা করার আছে, সর্বাত্মক চেষ্টা করব : আইন উপদেষ্টা সমন্বয় করে যতদিন থাকা দরকার, ততদিনই থাকব

আজাদী ডেস্ক | রবিবার , ১১ আগস্ট, ২০২৪ at ৭:৩৭ পূর্বাহ্ণ

জুলাইআগস্টে ছাত্রজনতার গণআন্দোলন দমনে যেসব হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, সেসবের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার ব্যবস্থা করাসহ ৫টি সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। গতকাল শনিবার সচিবালয়ে সকালে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।

আসিফ নজরুলের সভাপতিত্বে প্রথম সভায় নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো হলো ১. ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ছাত্রজনতার আন্দোলন দমনে যেসব ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছে সেগুলো আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রত্যাহার করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। ২. এই সময়ের মধ্যে ছাত্রজনতার গণআন্দোলন দমনের যেসব হত্যাকাণ্ড ঘটেছে সেগুলোর সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার ব্যবস্থা নিতে হবে। ৩. শিশুকিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে যেসব শিশুকিশোর মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলায় আটক রয়েছ তাদের আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে ছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। ৪. সন্ত্রাস দমন আইন ও সাইবার নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলাগুলো দ্রুত প্রত্যাহার করার ব্যবস্থা করা হবে। ৫. আইন ও বিচার বিভাগের ১৬৪৩০ নম্বরে (হেলপ্লাইন) মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলার ভুক্তভোগীদের আইনি সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে। খবর বিডিনিউজের।

শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ১৬ সদস্যের অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে এই সরকারের ১৩ সদস্য শপথ নেন। বাকি ৩ জন ঢাকার বাইরে অবস্থান করায় তারা শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আসতে পারেননি। পরে তারা শপথ নেবেন।

এখতিয়ারাধীন যা করার আছে, সর্বাত্মক চেষ্টা করব : অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা হিসেবে দেশের আইনশৃঙ্খলা ফেরানোর ব্যাপারে অগ্রাধিকার দিয়ে এখতিয়ারাধীন বিষয়গুলোতে সংস্কারের কথা জানিয়েছেন অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেছেন, আমি মনে করি এটা আমার দায়িত্ব, এটা ছাত্রজনতার আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিনিধিত্ব করার দায়িত্ব। আইন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে আইনগত সংস্কার করে উপযুক্ত জায়গায় উপযুক্ত ব্যক্তিদের পদায়ন করে আমার মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারাধীন ব্যাপারে যা যা করা আছে আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করব।

গতকাল দুপুরে আইন মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন জবাব দিচ্ছিলেন আইন উপদেষ্টা। এদিন সকালে সচিবালয়ে তিনি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে জুলাইআগস্টে ছাত্রজনতার গণআন্দোলন দমনে যেসব হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, সেসবের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার ব্যবস্থা করাসহ পাঁচটি সিদ্ধান্তও হওয়ার কথা তুলে ধরেন আইন উপদেষ্টা।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি আইনের শিক্ষক, আমার অনেক শিক্ষক আছেন লয়ার জুডিশিয়ারিতে, হাইয়ার জুডিশিয়ারিতে। কীভাবে ‘মিসকারেজ অব জাস্টিস’ হয়েছে, বিচারের নামে কীভাবে হয়রানি হয়েছে, ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে, পুরো প্রক্রিয়াটা সম্পর্কে ইনশাল্লাহ আমি জানি, আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করব।

দেশের আইনশৃঙ্খলা ফেরানোর ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, আমরা ইমিডিয়েট যে কর্মসূচি নিয়েছি, এটা হচ্ছে ল অ্যান্ড অর্ডার রেস্টোর করা, গণহত্যা হয়েছে জুলাইতে, সেই দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করা। সাইবার নিরাপত্তা আইন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেকোনো ধরনের খারাপ আইন, কোনটা সংস্কার করা প্রয়োজন, কোনটা বাতিল করা প্রয়োজন, সেটা আমরা সুচিন্তিতভাবে পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করব। আপনি, আমিও সাইবার নিরাপত্তা আইনে আসামি ছিলাম। কাজেই বুঝতে পারছেন ভালোবাসার তো কোনো কারণ নাই।

ছাত্রজনতার আন্দোলনে গঠিত বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিটির ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আইন উপদেষ্টা বলেন, দেখেন, ছাত্রজনতার পক্ষ থেকে জাতিসংঘের নেতৃত্বে তদন্তের কথা বলা হয়েছিল। তো আমি মনে করি, আমরা এখানে এসেছি, ছাত্রজনতা যে আমাদের জন্য অপূর্ব সময় তৈরি করে দিয়েছে দেশকে গড়ার, সেই দায়িত্ব নিয়ে এসেছি, সেই প্রত্যাশাকে প্রতিনিধিত্ব করতে এসেছি। সেটার দিকে আমাদের দৃষ্টি থাকবে। বিচার বিভাগীয় তদন্ত এখন যেটা আপনি বলেছেন, এটার ব্যাপারে এই মুহূর্তে মন্তব্য করছি না।

সমন্বয় করে যতদিন থাকা দরকার, ততদিনই থাকব : অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ প্রসঙ্গে আসিফ নজরুল বলেন, আপনাদের দুইটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রত্যাশা থাকবে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন। আবার এদেশের সাধারণ মানুষের যে সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা, সেখান থেকে প্রত্যাশা থাকবে এই সরকার যেন জরুরি কিছু সংস্কার করে যায়। কারণ আমরা দেখেছি অতীতে পুলিশ, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে জনগণকে নির্যাতনের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করা হয়েছে। পুরো সিস্টেমটা এমনভাবে দাঁড় করিয়েছিল যে, এগুলো ভিন্নমতের মানুষ, মৌলিক অধিকার চর্চাকারী মানুষের জন্য এই প্রতিষ্ঠানগুলো একটা আতঙ্কে পরিণত হয়েছিল। এজন্য সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা মানুষের আছে। সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা এবং নির্বাচনের আকাঙ্ক্ষার মধ্যে সমন্বয় করে যতদিন থাকা দরকার ততদিনই আমরা থাকব। বেশিও না কমও না।

সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমি বলি, আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা জীবন মিস করি, আমি উন্মুক্ত, ফ্রি জীবন মিস করি। আমার ব্যক্তিগত অভিমত হচ্ছে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাজ শেষ করে কবে আমি আমার ব্যক্তিগত জীবনে ফিরে যেতে পারব, যেটা আমার ব্যক্তিগতভাবে অনেক বেশি এনজয়েবল। কিন্তু যে দায়িত্বে আমরা সব উপদেষ্টারা এসেছি, সেই দায়িত্ব আমরা পালন করব।

নির্বাচন কমিশনও সংস্কারের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা তো আপনারা জানেন। এখানে যদি থরো ওভারহলিং না করা হয়, তাহলে ভবিষ্যতে যে সরকার আসবে তারা তো আবার এই প্রতিষ্ঠানকে সেইভাবে ব্যবহার করবে। আমাদের অতীতের অভিজ্ঞতাকে সুখকর না। আমি বলতে চাই, সব প্রতিষ্ঠানই সংস্কার করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহামলা ও ভাঙচুরের প্রতিকার চান ক্লাব সদস্যরা
পরবর্তী নিবন্ধভুয়া সমন্বয়ককে আটক করে সেনাবাহিনীর হাতে দিলেন শিক্ষার্থীরা