জাহেদুল কবির ম
দেশের চলমান পরিস্থিতির কারণে ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার চাক্তাই খাতুনগঞ্জে ব্যবসা বাণিজ্যে দেখা দিয়েছে চরম স্থবিরতা। গতকালও দিনভর অধিকাংশ ব্যবসায়ীদের দিন কেটেছে অজানা আতঙ্কে। দেশে যেহেতু বর্তমানে প্রশাসনিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, তাই অনেকেই নিরাপত্তা শঙ্কায় ভুগছেন। পণ্য পরিবহনও কমে গেছে। অধিকাংশ ব্যবসায়ী দোকান–আড়তের অর্ধেক অংশ খোলা রেখে কাজ সারছেন। স্বাভাবিক সময়ে রাত ১০–১১ টা পর্যন্ত দোকান থাকলেও অনেক ব্যবসায়ী সন্ধ্যা নামার আগেই দোকান বন্ধ করে বাড়ির পথ ধরছেন। কারণ হিসেবে একাধিক ব্যবসায়ী বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিকাণ্ড–লুটপাটের খবর পাচ্ছি। এছাড়া থানাগুলোতে এখন পুলিশ নাই। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীরা নিজেদের নিরাপদবোধ করছেন না। কারণ আমাদের এখানে প্রচুর নগদ টাকার লেনদেন হয়। আসাদগঞ্জে শুটকিপট্টির কয়েকটি দোকানে আজ (গতকাল) একদল দুর্বৃত্ত হামলা করে সব মালামাল ছিনিয়ে নিয়েছে। এই মূহূর্তে দেশে এক ধরনের অরাজক পরিস্থিতি চলছে। আগে রাস্তায় থানার টহল পুলিশ থাকতো। কিংবা জাতীয় জরুরি সেবা নম্বরে ফোন করলে পুলিশ আসতো। এখন থানার পুলিশ নিজেরাই নিরাপত্তাহীনতায় কাজ বন্ধ রেখেছে। তারপরেও যেহেতু ব্যাংক খোলা, তাই ব্যবসায়ীদের ব্যাংকিং লেনদেনের কারণে আসতে হচ্ছে। তবে সবাই আতঙ্কে আছে।
গতকাল বিকেলে সরেজমিনে চাক্তাই–খাতুনগঞ্জ ঘুরে দেখা গেছে, স্বাভাবিক দিনগুলোতে চাক্তাই খাতুনগঞ্জের রাস্তার দুই পাশে ট্রাক কাভার্ডভ্যানের দীর্ঘ সারি থাকতো। এছাড়া শ্রমিকের হাঁকডাকে কর্মচঞ্চল থাকতো পুরো এলাকা। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে চাক্তাই খাতুনগঞ্জে কার্যত সুনশান অবস্থা বিরাজ করছে। অনেক শ্রমিককে পণ্যের গুদামে, ঠেলাগাড়িতে শুয়ে বসে বিশ্রাম নিতে দেখা গেছে। এছাড়া কাজের ব্যস্ততা না থাকায় অধিকাংশ দোকানের কর্মচারী নিজেদের মধ্যে খোঁশগল্প করে সময় কাটান। চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, দেশে যেহেতু এখন সরকার নাই। তাই এখন প্রশাসনিক ব্যবস্থাও একপ্রকার নাই। আমাদের ব্যবসায়ীরা ভয়ে ভয়ে ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বেশিরভাগ ব্যবসায়ী দোকান খুলতেই ভয় পাচ্ছেন। বিশেষ করে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে চাক্তাই খাতুনগঞ্জে বহিরাগতদের আনাগোনা বেড়েছে। এতেও ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে ভুগছে। আমরা চাই দ্রুত অন্তবর্তীকালীন সরকারের গঠনের পর দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী স্বাভাবিক হয়ে আসুক।
চাক্তাই আড়তার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, ব্যবসা বাণিজ্য একেবারে ঠাণ্ডা। তারপরেও আমরা দোকান খুলছি। তবে আগের তুলনায় একটু আগেবাগে দোকান বন্ধ করে দিচ্ছি। কারণ এখন তো পুলিশ নাই। আমরা নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকলে কিংবা আক্রান্ত হলে সবার আগে পুলিশের কাছে যাই। এখন তো থানাই বন্ধ। তারপরেও যারা দোকান খুলছেন, বিশেষ করে ব্যাংকের লেনদের জন্যই খুলতে হচ্ছে।