১১ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) সদস্যরা গতকাল সারাদিন কর্মবিরতি পালন করেছেন। গতকাল সকাল ১০টা থেকে একযোগে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে আরএনবির যতগুলো সার্কেল আছে (চট্টগ্রাম থেকে শুরু লাকসাম–আখাউড়া,ঢাকা–ময়মনসিংহ পর্যন্ত) সব গুলোতে একযোগে কমবিরতি পালন করেন তারা। এসময় চট্টগ্রামের সকল সার্কেলের আরএনবির সদস্যরা চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে এসে বিক্ষোভ শুরু করেন। কোনো স্থাপনায় গতকাল তারা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেননি।
রেলওয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ কোনো স্টেশনে আরএনবি সদস্যরা দায়িত্ব পালন না করায় নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পরে রেলের সকল স্থাপনাসহ সকল ট্রেন। সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের আরএনবি প্রধানসহ বাহিনীর অন্যান্য শীর্ষ কমকর্তাদের নিয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম) প্রকৌশলী মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে ভিআইপি রেস্ট হাউজে বৈঠকে বসেন।
রাত ১০টায় বৈঠক শেষে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার প্রকৌশলী মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, তাদের (আরএনবি সদস্যদের ) কিছু দাবি–দাওয়া ছিল। আমরা তাদের আশ্বাস দিয়েছি। দাবি গুলো বাস্তবায়নের ব্যাপারে। দাবি গুলো আমরা ঢাকায় পাঠিয়ে দেবো। তাদেরকে যার যার স্থানে দায়িত্ব পালনে চলে যেতে বলেছি। তারা আশ্বস্ত হয়েছেন। তারা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করছেন। তারা তাদের স্থানে (যে যার দায়িত্ব পালনের স্থানে) চলে যাবেন। বৈঠকে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) প্রধান জহুরুল ইসলাম, কমান্ড্যান্ট মো. রেজওয়ান–উর–রহমানসহ অন্যান্য বিভাগীয় কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কমান্ড্যান্ট মো. রেজওয়ান–উর–রহমান বলেন, আমাদের আরএনবির সদস্যরা তাদের কিছু দাবি নিয়ে কর্মবিরতি পালন করেছেন। তাদের দাবি গুলো নিয়ে রাতে ডিআরএমসহ আমাদের পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) প্রধান জহুরুল ইসলাম স্যারসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠক করেছেন। বৈঠকে উনারা আরএনবি সদস্যদের দাবি গুলোর ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ–আলোচনা করে বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছেন। তারা তাদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেছেন। তাদেরকে নিজ নিজ স্থানে দায়িত্ব পালনের জন্য চলে যেতে বলেছেন।
কর্মবিরতির ব্যাপারে চট্টগ্রাম জেনারেল শাখার আরএনবি সদস্য আনন্দ বড়ুয়া আজাদীকে বলেন, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) সদস্যদের ১১ দফা দাবিতে আজকে (গতকাল) পূর্বাঞ্চলে যতগুলো সার্কেল আছে সব সার্কেলে আমরা সবাই একযোগে কর্মবিরতী পালন করেছি। কেউ দায়িত্ব পালন করেনি আজকে (গতকাল)। আমরা আমাদের ১১ দফা দাবি পূরণে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছি। বিভাগীয় স্যাররা (সন্ধ্যা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত) সবাই বৈঠক করছেন। বিভাগীয় স্যাররা আমাদেরকে বলেছেন, আমাদের দাবি গুলো তারা বিবেচনা করবেন। আমাদেরকে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে কাজে যোগ দিতে বলেছেন। আমরা বলেছি–আমাদের দাবি সমূহ পূরণ করতে হবে। আমরা দীর্ঘদিন থেকে বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছি।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের আরএনবির জেনারেল শাখার সিপাহী সাদ্দাম হোসেন আজাদীকে বলেন, ভোলাগঞ্জে রেলওয়ে আরএনবির একটি সার্কেল আছে। এটা জিরো পয়েন্টের সাথে লাগানো রেলওয়ের জায়গা। এই জায়গাটি পাথর সমৃদ্ধ এলাকা। পাথর পাহারা দেয়ার জন্য রেলওয়ে একটি সার্কেল করেছে। এখনো আমাদের জন্য কোনো বিদ্যুৎ নেই, খাবারের সুপেয় পানি নেই, টয়লেট নেই, আমরা নদী থেকে পানি এনে খাই। সাত মাইলের মধ্যে কোনো ডাক্তার নেই, ওষুধ নেই। এভাবে চরম অবহেলায় তো কোন বাহিনী দায়িত্ব পালন করতে পারে না। বিষয়টি আমরা বারবার কর্তৃপক্ষকে বলার পরও তারা কোন ব্যবস্থা নেননি। আমাদের এক নম্বর দাবি হচ্ছে সিলেটের ভোলাগঞ্জ সার্কেল অনতি বিলম্বে স্থায়ীভাবে প্রত্যাহার করতে হবে এবং দপ্তরাদেশ জারি করতে হবে। এছাড়াও আমাদের আরো ১০ দফা দাবি আছে। এগুলো যতক্ষণ না পূরণ হবে–ততক্ষণ আমাদের কর্মবিরতি চলবে।
আরএনবি সদস্যদের অন্যান্য দাবি গুলো হল : রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী আইন– ২০১৬ অনুযায়ী কর্মচারী না বাহিনী তা সুনিশ্চিত করতে হবে এবং যদি বাহিনী হলে তাহলে বাহিনীর সকল সুযোগসুবিধা (রেশন, ঝুঁকিভাতা, যাতায়াত ভাতা) নিশ্চিত করতে হবে। নিয়োগ নীতিমালা সংশোধন করে প্রতিবছর নিয়োগ কার্যক্রম অব্যহত রাখতে হবে এবং ৩ বছর পর পর পদোন্নতি পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে এবং বাহিনীর নীতিমালা অনুযায়ী নিজস্ব তত্ত্বাবধানে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী বাংলাদেশ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিগণ, বাংলাদেশ রেলওয়ে মহাপরিচালক, মহাব্যবস্থাপক এবং সকল সরকারী বাহিনী ও নিজস্ব উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ব্যতীত অন্য কোন সিভিল প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে কোন আদেশ বা প্রটোকল ডিউটিতে নিয়াজিত থাকবে না। হেডকোয়াটার ব্যতীত বিশেষ ডিউটিতে বাহিনী নিজস্ব যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। রেলওয়ে সম্পত্তি (অবৈধ দখল উদ্ধার) আইন, ২০১৬ মোতাবেক। পূর্বের ন্যায় মামল রুজু প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর প্রত্যেক সার্কেলের ব্যারাক সমূহ সংস্কার এবং সকল মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে হবে। রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর প্রত্যেক সদস্যের ৮ কর্মঘণ্টা নির্ধারণ করতে হবে। ৮ ঘণ্টার যদি অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হয় তাহলে তার পরিবর্তে অতিরিক্ত কর্মঘণ্টার ভাতা প্রদান করতে হবে। অন্যান্য বাহিনীর ন্যায় রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর বেতন বৈষম্য দূর করতে হবে।
বংলাদেশ রেলওয়ে সকল সম্পত্তি রক্ষাণাবেক্ষন এবং রেলওয়ের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য সুশৃঙ্খল বাহিনীতে রুপান্তর করতে হবে। সিজিপিওয়াই, পাহাড়তলী কারখানা, পাহাড়তলী স্টোর, সিজিএমওয়াই ইত্যাদি কেপিআইভুক্ত এলাকা সমূহের ক্যারেজ ফিটিংয়ের কোন মালামালের চার্জ রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী বুঝে নিবে না। কারণ তারা এই সমস্ত মালামাল সম্পর্কে অবগত নয়। রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী সকল সদস্যের কর্মবিরতি ও দাবি আদায় প্রসঙ্গ নিয়ে কোন প্রকার বিভাগীয় বদলি ও হয়রানি করা যাবে না।