বিশ্বের একেক দ্বীপ একেক নামে খ্যাত। আমাদের বাংলাদেশ ব–দ্বীপ হিসেবে খ্যাত। আবার এখানেও রয়েছে ছোট–বড় অনেক দ্বীপ। সন্দ্বীপ, সেন্টমার্টিন, নিঝুম, হাতিয়া, মনপুরা, চরশরত, চরফ্যাশন বেশ পরিচিত। বিশ্বের উল্লেখ করার মতো দ্বীপগুলো হচ্ছে–গ্রিনল্যান্ড, নিউ গিনি, বোর্নিও, মাদাগাস্কার, বাফিন, সুমাত্রা, হোনশু, ভিক্টোরিয়া, জাভা, লুজন, আইসল্যান্ড, মিন্দানাও, আয়ারল্যান্ড, হোক্কাইডা। আর মালদ্বীপ তো দ্বীপরাষ্ট্র, শ’খানেক দ্বীপের সমষ্টি।
অদ্ভুত রকমের একটি দ্বীপ জার্মানির ওল্যান্ড আইল্যান্ড। সমুদ্রের মাঝে ছোট্ট একটি দ্বীপ। বাসিন্দা মাত্র ১৬ থেকে ২০ জন। তাদের নিজস্ব প্রশাসনিক ব্যবস্থাও রয়েছে। এক দৌড়ে দ্বীপের এক মাথা থেকে আরেক মাথায় যাওয়া যাবে। তবে অত্যন্ত প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবেলা করে এখানে বেঁচে থাকতে হয়।
এটিকে বলা হয় জার্মানির উত্তর সাগরে অবস্থিত তথাকথিত ‘হলিং আইল্যান্ড’। এ সাগরে রক্ষাপ্রাচীর বিহীন ছোট ছোট দ্বীপকে হলিং আইল্যান্ড বলা হয়। এসব দ্বীপ সামান্য ঝড় বা বড় ঢেউয়ের কারণেই প্লাবিত হয়ে যায়। কিন্তু এরপরও দ্বীপ ছাড়তে চান না বর্তমান বাসিন্দারা।
বিশ শতকের শুরুতে ওল্যান্ড দ্বীপের অস্তিত্বের লড়াই শুরু হয়। ওই সময় ব্লক বসিয়ে দ্বীপের চারপাশে বাঁধ দেয়া হয়। এ কারণেই এ দ্বীপের বাসিন্দারা এখনো টিকে আছেন। বেটিনা ফ্রিয়ার্স তার ওল্যান্ড দ্বীপে আসার স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন, আমি মেট্রো স্টেশনে এসে দোটানায় পড়ে গেলাম। যাবো কি যাবো না। ওল্যান্ড দ্বীপে যাওয়ার বাহন আর ভ্রমণের পথ আমার কাছে চমকপ্রদ ছিল। আমি মালপত্র নিয়ে চেপে বসলাম। মনে হলো যেন পানির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। অতপর এই ছোট্ট দ্বীপটিতে পৌঁছালাম। এখানে তখন মাথার উপর কোনো ছাদ ছিল না। এখান থেকে দূরে ছোট ছোট দ্বীপ দেখা যায়। মনে হয়, যেন অন্য এক পৃথিবীতে এসে পড়েছি। শহর থেকে এখানে আসার পর মনে হলো সমস্ত শোরগোল থেমে গেছে। পাখির সুমধুর কণ্ঠে গান, গাছের পাতার মর্মর ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। সমুদ্র দেখার পর নিজের মধ্যে স্বস্তি আসে। এখানকার সবাই আত্মশক্তিতে বলিয়ান। যারা এই দ্বীপের প্রতি ভেতর থেকে একটা টান অনুভব করে কেবল তাদেরই এখানে থাকতে আসা উচিত।
বন্যার সময় দ্বীপটির বাসিন্দাদের চলাচল ও মালপত্র পরিবহনের জন্য বন্দর ব্যবহার বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। তখন তারা ওয়াগনে (মেট্রোরেলে চলা যান) ২০ মিনিটের পথ পাড়ি দিয়ে মূল ভূমিতে পৌঁছায়। সাবেক মেয়র হ্যান্স বার্নহার্ড বলেন, শহরের মানুষ মেট্রো ও ট্রেনে করে ভ্রমণ করে। আমরা এখানে ওয়াগনে চলাফেলা করি। ১৯২৩ সালে এই রেলওয়ে ট্র্যাকটা নির্মাণ করা হয়। অবশ্য তা আমাদের জন্য নির্মিত হয়নি। আমি হুসামে গিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করি। পরে তারা আমাদের চলাচলের জন্য এটি ব্যবহারের অনুমতি দেয়।
এ দ্বীপের বাসিন্দাদের প্রায় সবাই বেশ বয়স্ক। তাদের কোনো সন্তান এখানে নেই, নতুন করে সন্তান হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। আর নতুন করে কেউ আর এখানে আসছেও না। আগে এখানকার বাসিন্দা ছিল ৫২ জন। বর্তমানে ২০ জনে ঠেকেছে। জার্মানির সবচেয়ে ছোট ও একমাত্র খড়ের চালাবিশিষ্ট বাতিঘরটিও ওল্যান্ড দ্বীপে আবস্থিত। বাতিঘরটির উচ্চতা মাত্র ৭ দশমিক ৪ মিটার। বাতিঘরটি নির্মাণ করা হয় ১৯২৯ সালে। বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের দ্বীপ নিয়ে লিখেছেন -‘দূর দ্বীপবাসিনী/ চিনি তোমারে চিনি/ দারুচিনির দেশের তুমি বিদেশিনি গো/ সুমন্দভাষিণী/ প্রশান্ত সাগরে/ তুফানে ও ঝড়ে/ শুনেছি তোমারই অশান্ত রাগিণী/ বাজাও কি বুনো সুর/ পাহাড়ি বাঁশিতে/ বনান্ত ছেয়ে যায়/ বাসন্তী হাসিতে/ তব কবরীমূলে/ নব এলাচির ফুল/ দুলে কুসুম–বিলাসিনী’।