নিরাপত্তার প্রয়োজনে অনেক পুলিশ আত্মগোপনে : অতিরিক্ত আইজি

পুলিশ সদস্যদের কর্মবিরতির খবর ‘গুজব’

| বুধবার , ৭ আগস্ট, ২০২৪ at ৮:১৩ পূর্বাহ্ণ

কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে তুমুল গণ আন্দোলনে সরকার পতনের পর বিভিন্ন থানায় অগ্নিসংযোগ ও হামলা চালিয়ে পুলিশ হত্যার ঘটনার পর নিরাপত্তাজনিত কারণে অনেক পুলিশ সদস্য ‘আত্মগোপন’ করেছেন বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত আইজি এ কে এম শহিদুর রহমান।

তিনি বলেছেন, আমরা দ্রুততম সময়ে তাদের কাজে ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা করছি এবং অরক্ষিত পুলিশ স্থাপনাগুলোকে নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যাপারে কাজ করছি। এক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা কামনার কথা তুলে ধরেন এ পুলিশ কর্মকর্তা। খবর বিডিনিউজের।

গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছিলেন তিনি। জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন সহিংসতায় রূপ নিলে এ পর্যন্ত চার শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েক ডজন পুলিশ সদস্যও রয়েছেন। বিক্ষোভের মধ্যে হামলা হয়েছে থানা, পুলিশ বঙে, পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনা, মোটরসাইকেল ও গাড়ি। এর মধ্যে গত রোববার সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় হামলা চালিয়ে ১৩ জন পুলিশকে হত্যা করা হয়।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং দেশত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়লে গত সোমবার ঢাকার পুলিশ সদর দপ্তরে ঢুকে পড়ে কয়েকশ মানুষ। হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে বিভিন্ন কক্ষ। এছাড়া থানাগুলোও হামলার শিকার হয়। যাত্রাবাড়ী, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, মোহাম্মদপুর, উত্তরা পূর্ব, বাড্ডা, রামপুরা, খিলগাঁওসহ বিভিন্ন থানায় হামলা হলে ঢাকার অর্ধশতাধিক থানা ফাঁকা হয়ে যাওয়ার খবর আসে। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় পুলিশের ওপর হামলার খবর পাওয়া গেছে। এমন পরিস্থিতি নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে গেছেন পুলিশ সদস্যদের অনেকেই। থানাগুলোও ফাঁকা হয়ে গেছে। সড়কে নেই ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা। এমন পরিস্থিতিতে থানাগুলোর নিরাপত্তা ও সড়কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীকে।

হামলা, সংঘর্ষ আর সহিংসতায় পুলিশ সদস্যদের প্রাণহানির বিষয়ে অতিরিক্ত আইজি শহিদুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করার কাজ এখনও শেষ হয়নি। এখন পর্যন্ত যাত্রাবাড়ী থেকে পুলিশের আটটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। অন্য জায়গা থেকে তথ্য সংগ্রহ এবং উদ্ধারের কাজ চলছে। আমরা দ্রুততম সময়ে পুলিশের লাশগুলো সৎকার করে তাদের নিজ নিজ গ্রামের বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করছি।

নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়া পুলিশ সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ার পর কাজে ফেরার কথা জানান তিনি। এজন্য যেখানে যে অবস্থায় যেসব পুলিশ সদস্য আছেন, তারা নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সেখানকার ইউনিট কমান্ডারদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখার পরামর্শ দেন এ কর্মকর্তা।

পুলিশ সদস্যদের কর্মবিরতির খবর ‘গুজব’ : দেশে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গতকাল মঙ্গলবার নিজেদের নিরাপত্তা চেয়ে ‘কর্মবিরতির’ ডাক দেয় পুলিশের নন ক্যাডার কর্মকর্তা ও সদস্যদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন’। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে নামাদের ওপর ‘অনিচ্ছায় গুলি’ চালানোর ঘটনায় ক্ষমা প্রার্থনাও করেন এসব পুলিশ সদস্যরা।

বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের প্যাডে স্বাক্ষরবিহীন সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের কাছে পাঠানো হয়। পরে মোবাইল ফোনে কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তারা নিশ্চিত করেন এটি তাদেরই পাঠানো। পুলিশের কনস্টেবল থেকে ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার সদস্যরা এ সংগঠনের সদস্য।

তবে পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের এ কর্মবিরতিকে ‘গুজব’ বলে মন্তব্য করেছেন অতিরিক্ত আইজি শহিদুর। ‘গুজবে’ কান দেওয়ার অনুরোধও করেন তিনি। গণ আন্দোলনে ছাত্রজনতার বিজয়কে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, পুলিশের ভুলভ্রান্তি থাকতে পারে। পুলিশ ছাড়া সমাজে কোনো কিছু চিন্তা করা যায় না। এখন অতীত সব ভুলে পুলিশকে সহায়তার জন্য ছাত্রজনতা, রাজনীতিবিদদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি। আন্দোলনের মধ্যে কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার গাফিলতি প্রমাণিত হলে অবশ্যই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেন তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাষ্ট্রের সম্পদ ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান হেফাজতে ইসলামের
পরবর্তী নিবন্ধবিভিন্ন উপজেলায় বিজয় মিছিল