চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানা ও উপজেলায় আগুন-ভাঙচুর

| মঙ্গলবার , ৬ আগস্ট, ২০২৪ at ৭:০৪ পূর্বাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় থানা, সরকারিবেসরকারি স্থাপনা, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বসতঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন থানা হামলা হলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় অনেকে আহত হয়েছেন।

হাটহাজারী : হাটহাজারী প্রতিনিধি জানান, গতকাল সন্ধ্যায় একদল বিক্ষুব্ধ জনতা হাটহাজারী থানার সামনে অবস্থিত উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ভাংচুর চালায়। পরে থানার ভিতরে ঢুকে আগুন ধরিয়ে দেয়। থানা পুলিশের গাড়ি ও কয়েকটি মোটরসাইকেল পুড়ে দেয়। ঘটনার পর হাটহাজারী বড় মাদ্রাসার মাইকে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের ভিতরে ঢুকে যাওয়া আহ্বান জানানো হয়। থানা আক্রমণের সময় পুলিশ আত্মরক্ষা ও সরকারি সম্পদ রক্ষার্থে কাঁদনে গ্যাস ও বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি চালায়। এতে ছয় জন আহত হয়। আহতদের প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ আনা হলে তিন জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। সরকারহাট বাজারে কয়েকটিভবন ও কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানে হয়। উপজেলার আওতাধীন বিভিন্ন হাটবাজারে দোকান পাঠ বন্ধ হয়ে যায়।

ফটিকছড়ি : ফটিকছড়ি প্রতিনিধি জানান, ফটিকছড়িতে লোকজন বিভিন্ন কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর করে। গতকাল বিকেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর এবং কার্যালয় থেকে বিভিন্ন আসবাবপত্র সড়কে এনে আগুন ধরিয়ে দেন। একইভাবে তারা ফটিকছড়ি কলেজের ভিতর কলেজ ছাত্রলীগের অফিস ও ফুলকলি দোকানের ভিতর ভাঙচুর চালায়।

দোহাজারী : চন্দনাইশ প্রতিনিধি জানান, গতকাল বিজয় উল্লাসের পাশাপাশি একশ্রেণির লোকজন সরকারিবেসরকারি বিভিন্ন কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর করে। দোহাজারী ট্রাফিক পুলিশ বঙ ভাঙচুর করা হয়। ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয় দোহাজারী হাইওয়ে থানায়, এতে থানার সামনের গ্লাস ভেঙে যায়। উপজেলার কয়েক স্থানে আওয়ামী লীগ দলীয় নেতাকর্মীদের অফিস, দোকান ও বিভিন্ন বাজার পয়েন্টে টাঙানো ব্যানারও ভেঙে ফেলা হয়েছে।

মীরসরাই : মীরসরাই প্রতিনিধি জানান, উত্তেজিত ছাত্রজনতা মীরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগ অফিস ভাংচুর করে। এসময় অফিসের আসবাবপত্র মহাসড়কে এনে অগ্নিসংযোগ করে তারা। এছাড়া উপজেলার মীরসরাই সদর, বারইয়াহাট, কমলদদহ, নিজামপুর সহ বিভিন্ন এলাকার আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অফিস, দোকানপাট এবং বসতঘরেও ভাঙচুর করে। মীরসরাই থানার ওসি শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা বিক্ষোভকারী জনতাকে সহযোগিতা করতে চাইছি। আবার সকলের সহযোগিতা ও কামনা করছি।

বাঁশখালী : বাঁশখালী প্রতিনিধি জানান, উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে কয়েকদফা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেঙ এবং তৈলারদ্বীপ সেতুর টোল প্লাজায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে তারা।

খাগড়াছড়ি : খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, খাগড়াছড়িতে জেলা আ. লীগের কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল বিকেলে নারিকেল বাগান এলাকাস্থল কার্যালয়টিতে আগুন দেয় দুবৃর্ত্তরা। প্রায় আধঘণ্টা পর আগুন নেভাতে আসে ফায়ার সার্ভিস। এরপর জেলা আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের সরকারি বাংলো, দপ্তর সম্পাদক চন্দন কুমার দে, জেলা আ. লীগের নেতা বিশ্বজিৎ বিশ্বাস, পৌর কাউন্সিলর পরিমল দেবনাথের বাসায় হামলা করেছে দুর্বৃত্তরা।

রাঙামাটি : রাঙামাটি প্রতিনিধি জানান, রাঙামাটি শহরের প্রাণকেন্দ্র বনরূপায় অবস্থিত ট্রাফিক পুলিশ বঙ ভাঙচুর ও পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. সোলায়মানের মালিকানাধীন নিডস্‌ হিল ভিউ আবাসিক হোটেলে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে গ্লাস ভাঙচুর করা হয়েছে। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়। হামলার চেষ্টা করা হয়েছে রাঙামাটি পৌরসভার মেয়র ও জেলা যুবলীগ সভাপতি আকবর হোসেন চৌধুরীর হ্যাপির মোড় এলাকার বাসভবনে। তবে এসময় কয়েকজন হামলাকারীদের নিবৃত্ত করেন। ইট পাটকেল ছোঁড়া হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের রেস্ট হাইজেও।

মহেশখালী : মহেশখালী প্রতিনিধি জানান, মহেশখালীর বিভিন্ন ইউনিয়নে লাঠি মিছিল করে আওয়ামী লীগের ৫টি অফিস ভাঙচুর করে তাতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়, বড় মহেশখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয়, হোয়ানক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয়, হোয়ানক যুবলীগের কার্যালয় ও কালারমার ছড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে আগুন দেয়া হয়।

এদিকে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন পরবর্তী উত্তেজিত জনতার সহিংস আক্রমণ মহেশখালীতে স্থানীয়ভাবে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকারী গ্রুপগুলোর মধ্যে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়তে পারে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

কুতুবদিয়া : কঙবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আওরঙ্গজেব মাতবরের বসতঘরে হামলা ও আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় ওই বসতঘর সংলগ্ন আরো ৩টি বসতঘর পুড়ে যায়। গতকাল বিকেলে উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের নজর আলী মাতবর পাড়া এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলায় অংশ নেয়া কেউ ছাত্র বা সাধারণ জনগণ ছিল না। কিছু সন্ত্রাসী ও প্রভাবশালীর নির্দেশে ছাত্রদের মিছিলের আড়ালে এই হামলা চালানো হয়। তারা আরও জানান, আগুনে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির ভাই কৈয়ারবিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজমগীর মাতবর, রুবেল, আলমগীর মাতবরের ঘর পুড়ে যায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসবাইকে ধৈর্য ধারণ করতে হবে, রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা করতে হবে
পরবর্তী নিবন্ধআজ বন্ধ থাকছে পোশাক কারখানা