সকল হত্যাকাণ্ড ও অন্যায়ের বিচার করা হবে : সেনাপ্রধান

সংঘাত থেকে বিরত হোন সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠকে ছিলেন যারা

| মঙ্গলবার , ৬ আগস্ট, ২০২৪ at ৬:৫৪ পূর্বাহ্ণ

সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকারউজজামান বলেছেন, সকল হত্যাকাণ্ড ও অন্যায়ের বিচার করা হবে। আপনারা সেনাবাহিনীর প্রতি আস্থা রাখুন। তিনি সহিংসতার পথ ছেড়ে সকলকে শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যার সমাধান এবং ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান। গতকাল সেনাবাহিনী সদর দপ্তরে দেশের চলমান সংকট নিরসনে সেনাবাহিনী প্রধানের সঙ্গে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের বৈঠক শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সেনাবাহিনী প্রধান দেশবাসীর উদ্দেশে এ কথা বলেন।

আলোচনায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎপূর্বক অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া ও রূপরেখা প্রণয়নের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। একই সঙ্গে সেনাবাহিনী প্রধান শিগগিরই ছাত্রশিক্ষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন বলে জানান। তিনি বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতি অচিরেই স্বাভাবিক হয়ে আসবে। সেনাবাহিনী প্রধান ছাত্রছাত্রীসহ দলমত নির্বিশেষে দেশের সকল শ্রেণি পেশার মানুষের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছেন। খবর বাসসের। বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, জাতীয় পার্টির জিএম কাদের, মুজিবুল হক চুন্নু, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, হেফাজতে ইসলামের াওলানা মামুনুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, খেলাফত মজলিসের মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম, জামায়াতে ইসলামীর আমির ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, হামিদুর রহমান আজাদ অংশগ্রহণ করেন।

সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠকে ছিলেন যারা : বিডিনিউজ জানায়, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেশত্যাগের পর দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকারউজজামান। এই বৈঠকে গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী অবস্থানে থাকা রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি টানা চারটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বা সমঝোতা করে ভোটে যাওয়া জাতীয় পার্টির নেতারাও ছিলেন।

সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আন্দোলন শেষ পর্যন্ত সরকার পতনে এক দফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলনে রূপ নেওয়ার দ্বিতীয় দিন সকালেই শেখ হাসিনা সরকারের পতনের বিষয়টি নিশ্চিত হয়। বেলা ১২টার দিকে গণমাধ্যমে ব্রেকিং আসে, বেলা ২টার দিকে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন সেনাপ্রধান। ততক্ষণ যেন জনগণ ধৈর্য ধরে। সে সময়ই বোঝা যায় আন্দোলন যে চূড়ান্ত পরিণতির দিকে যাচ্ছে।

তবে সেনাপ্রধান বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসার পর বেলা পৌনে ৪টায় সংবাদ মাধ্যমের সামনে আসেন। জানান, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। দেশ পরিচালনায় একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হবে।

এই বৈঠকে কারা ছিলেন? এই প্রশ্নে সেনাপ্রধান বলেন, বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তবে এই দলের পক্ষ থেকে কারা ছিলেন সেটি জানাননি ওয়াকারউজজামান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক দল খেলাফতে মজলিসের নেতা মাওলানা মামুনুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকীর নাম উল্লেখ করেন।

এক প্রশ্নে সেনাপ্রধান বলেন, না, এই বৈঠকে আওয়ামী লীগের কেউ ছিলেন না।

বৈঠকে উপস্থিত বিএনপি নেতাদের কাছ থেকে জানা যায়, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুও অংশ নেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে থাকা ইসলামী আন্দোলনের নেতা মুফতি ফয়জুল করীমও এই বৈঠকে অংশ নেন। এই বৈঠকে জাতীয় পার্টির পক্ষে ছিলেন দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের, কো চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। এই দলটি ২০০৮ ও ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করে এবং ২০১৪ ও ২০২৪ সালে সমঝোতা করে ভোটে যায়। গত তিন মেয়াদে জাতীয় পার্টি সংসদে প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকায় ছিল।

বিকাল আড়াইটায় সেনা সদর দপ্তরে এই বৈঠকে অংশ নিতে এসব নেতাদেরকে আমন্ত্রণ জানান সেনাপ্রধান।

দয়া করে মারামারিসংঘাত থেকে বিরত হোন : বাংলানিউজ জানায়, জনগণকে মারামারিসংঘাত থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকারউজজামান। তিনি বলেছেন, মারামারি করে আর কিছু পাব না। ধ্বংসযজ্ঞ, সংঘাত, অরাজকতা থেকে বিরত হন। সবাই মিলে সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে যাব।

গতকাল বিকালে জাতির উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, দেশে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখেন। আপনারা আমার ওপর আস্থা রাখেন, একসঙ্গে কাজ করি। দয়া করে সাহায্য করেন। মারামারি সংঘাত করে আর কিছু পাব না। সংঘাত থেকে বিরত হোন। সবাই মিলে সুন্দর দেশ গড়েছি। সব হত্যার বিচার হবে। সেনাবাহিনীর ওপর আস্থা রাখেন।

রাজনীতিক ও বিশিষ্টজনদের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে সেনাপ্রধান বলেন, আমরা রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতের ইসলামীর সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। শিক্ষক আফিস নজরুল ও জোনায়েদ সাকিও বৈঠকে ছিলেন।

তিনি বলেন, ছাত্রদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা যায়নি। ছাত্ররা শিক্ষক আসিফ নজরুলকে শ্রদ্ধা করেন। তাকে অনুরোধ করেছেন যোগাযোগ করতে। ইতিমধ্যে আসিফ নজরুল একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছেন।

জেনারেল ওয়াকারউজজামান বলেন, আমরা এখন বঙ্গবভনে (রাষ্ট্রপতির কাছে) যাব। সেখানে অন্তবর্তী সরকার গঠনের ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা হবে। এ সময় ছাত্রদের শান্ত হওয়ার পরামর্শ দেন সেনাবাহিনী প্রধান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধখালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানালেন রাষ্ট্রপতি
পরবর্তী নিবন্ধসংসদ বিলুপ্ত করে দ্রুত নির্বাচন