জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী : মননশীল ঔপন্যাসিক

| শনিবার , ৩ আগস্ট, ২০২৪ at ১০:৩৫ পূর্বাহ্ণ

জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী (১৯১২১৯৮২)। বাংলা কথাসাহিত্যের ইতিহাসে যে ক’জন ঔপন্যাসিক বিষয় বৈচিত্র্য ও মননশীলতায় অনন্য তিনি তাদের একজন। খেটে খাওয়া মানুষের জীবন ও জীবিকাকে উপজীব্য করে তিনি যে উপন্যাস ও ছোটগল্প সৃষ্টি করেছেন তা বাংলা সাহিত্যে বিশেষভাবে স্মরণযোগ্য। তাকে কল্লোল যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ছোটগল্পকার বলে মনে করা হয়। জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দে কুমিল্লা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর ডাকনাম ছিল ধনু। পিতা অপূর্বচন্দ্র নন্দী ছিলেন পেশায় একজন শিক্ষক। মায়ের নাম চারুবালা দেবী। জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে আইএসসি পাস করে ওই কলেজ থেকেই ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে বিএ পাশ করেন তিনি। ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পাড়ি জমান কলকাতায়। প্রথম চাকরি নেন বেঙ্গল ইমিউনিটিতে। তারপর টাটা এয়ারক্রাফ্‌ট, জে ওয়ালটার থমসনএর পাশাপাশি কাজ করেছেন সাংবাদিতা। সাহিত্য ছোটবেলা থেকে তিনি সাহিত্যচর্চা করতেন। স্বদেশি আন্দোলনে যুক্ত থাকার অভিযোগে ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দে গ্রেপ্তার হন পুলিশের হাতে। এক বছর গৃহবন্দী থাকাকালীন তার সাহিত্যচর্চার ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। তখন তিনি জ্যোৎস্না রায় ছদ্মনামে সোনার বাংলা ও ঢাকা থেকে প্রচারিত বাংলার বাণী পত্রিকায় তাঁর লেখা কয়েকটি ছোটগল্প প্রকাশ করেন। কলকাতায় এসে তিনি সাগরময় ঘোষের সান্নিধ্যে আসেন ও দেশ পত্রিকায় ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয় ছোটগল্প ‘রাইচরণের বাবরি’। মাতৃভূমি, ভারতবর্ষ, চতুরঙ্গ, পরিচয় পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হতে থাকে। তাঁর লেখা ছোটগল্প ভাত ও গাছ, ট্যাক্সিওয়ালা, নীল পেয়ালা, সিঁদেল, একঝাঁক দেবশিশু ও নীলফুল এবং বলদ পৃথিবীর নানা ভাষায় অনূদিত হয়। ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে দেশ পত্রিকায় ধারাবাহিক উপন্যাস সূর্যমুখী প্রকাশিত হয়। এর পর থেকে তিনি সাহিত্যচর্চাকেই জীবিকা হিসাবে বেছে নেন। জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে আনন্দবাজার পত্রিকা থেকে সুরেশচন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার ও ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে আনন্দ পুরস্কারে সম্মানিত হন। তাঁর উপন্যাসের সংখ্যা ২০টি ও গল্প গ্রন্থ আছে তিপান্নটি। তাঁর উল্ল্যেখযোগ্য উপন্যাসগুলো হচ্ছে ‘সূর্যমুখী’, ‘মীরার দুপুর’,‘ গ্রীষ্ম বাসর’, নিশ্চিন্তপুরের মানুষ’, ‘হৃদয়ের রং’, ‘প্রেমের চেয়ে বড়’ ‘সর্পিল’, ‘তিন পরী’, ‘ছয় প্রেমিক’, ‘নীল রাত্রি’, ‘বনানীর প্রেম’। ছোট গল্প ‘খেলনা’, ‘শালিক কি চড়ুই’,‘ চন্দ্রমল্লিকা’, ‘গিরগিটি’, ‘ট্যাক্সিওয়ালা’, ‘চোর’, ‘পার্বতীপুরের বিকেল’, ‘ছুটকি বুটকি’, ‘বনের রাজা’ ‘ভাত ও গাছ’। জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দের ৩রা আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধপূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালু করা হোক