সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আন্দোলনে সহিংসতার ঘটনায় এবার সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক এসেছে। আজ শনিবার সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে আগামীকাল রোববার থেকে এই অসহযোগের ডাক দেওয়া হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাতে কোটা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মাহিন সরকার সাংবাদিকদের এক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
গত কয়েকদিন ধরে আন্দোলনকারীদের সমন্বয়কদের মধ্যে একেকজন একেক দিন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কর্মসূচি ঘোষণা করছেন। বিজ্ঞপ্তিতে সারা দেশের আপামর জনসাধারণকে অলিতে–গলিতে, পাড়ায় পাড়ায় সংগঠিত হয়ে কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানানো হয়। খবর বিডিনিউজের।
কর্মসূচির বিষয়টি অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ, আব্দুল হান্নান মাসুদসহ কয়েকজন সমন্বয়ক ফেসবুকে তাদের আইডি থেকেও প্রচার করেন। রাত পৌনে আটটার দিকে ফেসবুকে লাইভে এসে ‘অসহযোগ আন্দোলনের’ বিষয়ে ব্যাখ্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক আবদুল হান্নান বলেন, এই সরকারকে কোনো কর দেওয়া হবে না, বিদ্যুৎ–গ্যাস বিল দেওয়া হবে না, সচিবালয় ও সরকারি–বেসরকারি সব কার্যালয় বন্ধ থাকবে, গণভবন–বঙ্গভবনে কোনো গাড়ি ঢুকবে না। এই সরকারকে সর্বাত্মক অসহযোগিতা করা হবে। সরকার যাতে আর না থাকতে পারে, সে জন্য সবাইকে এসব কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানান তিনি।
২০১৮ সালে সরকার চাকরিতে কোটা বাতিল করে সরকারের পরিপত্র জুনের শেষে হাই কোর্ট অবৈধ ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে জুলাইয়ের শুরুতে মাঠে নামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তারা প্রথমে পরিপত্র ফিরিয়ে আনতে অর্থাৎ কোটা না রাখার দাবিতে সোচ্চার হলেও পরে সংস্কারের দাবি সামনে আনে।
গত ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সঙ্গে এই সংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের পরদিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরে সংঘাত হয়। এতে চট্টগ্রামে এক ছাত্রদল নেতাসহ তিন জন, ঢাকার সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে ছাত্রলীগ কর্মী ও একজন হকার এবং রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আবু সাঈদ নামে এক ছাত্রের মৃত্যু হয়।
পরদিন জাতির উদ্দেশে ভাষণে এসে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান। তবে ১৮ জুলাই ‘কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষিত হয়। সেদিন ঢাকার উত্তরা ও বাড্ডায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে কয়েকজনের প্রাণহানির পর পরিস্থিতির মোড় ঘুরে যায়। সেদিন দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় একযোগে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সম্পত্তিতে হামলা হয়। এসব হামলায় শিক্ষার্থীদের বাইরে অন্য পক্ষের সম্পৃক্ততার অভিযোগ এনেছে সরকার।
১৮ থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত সংঘর্ষ সহিংসতা চলতে থাকে। বিশেষ করে ঢাকার যাত্রাবাড়ী, রামপুরা, মোহাম্মদপুর এলাকায় পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছে যায়। এই পাঁচ দিনের সহিংসতায় সরকারের পক্ষ থেকে দেড়শ মানুষের মৃত্যুর তথ্য দেওয়া হয়েছে, আহত কয়েছে আরও কয়েকশ মানুষ। সংঘর্ষ থামার পর পুলিশ ব্লক রেইড দিয়ে গ্রেপ্তার অভিযানে নামার কথা জানায়, কয়েক হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে গ্রেপ্তার অভিযান বন্ধ, হত্যার বিচারসহ নানা দাবি জানানো হতে থাকে। সময় সময় কর্মসূচির ঘোষণা আসছে। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিটি মৃত্যুর তদন্তের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি তদন্তে জাতিসংঘের সহযোগিতা নেওয়ার কথাও বলেছেন একাধিক বক্তব্যে।












