জামায়াত নিষিদ্ধের ব্যবস্থা আজকের মধ্যে

সরকারের নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করা হবে : আইনমন্ত্রী

| বুধবার , ৩১ জুলাই, ২০২৪ at ৬:২৬ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীকে সাম্প্র্রতিক কোটা আন্দোলনের মধ্যে সহিংসতার জন্য সরকারের নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। আজ বুধবারের মধ্যে এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে জানিয়ে তিনি বলেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে এ বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন। বুধবারের মধ্যে একটা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি কিছুক্ষণ পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বসব। কোন আইনি প্রক্রিয়ায় হবে, সেটা যখন সিদ্ধান্ত নেব তখন জানাব। বুধবারের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত হবে ইনশাআল্লাহ।

সোমবার রাতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের বৈঠকে জামায়াত নিষিদ্ধের পক্ষে ঐকমত্য হওয়ার পর গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন আইনমন্ত্রী। জামায়াতকে নিষিদ্ধের আলোচনা গত ১০ বছর ধরেই চলছে। এখন কোন প্রক্রিয়ায় কোন কারণে দলটিকে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে তা আইনমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছিলেন সাংবাদিকরা।

উত্তরে তিনি বলেন, গত ১৬ থেকে ২০ জুলাই কোটাবিরোধী আন্দোলনের নামে যে নৃশংসতা চালানো হয়েছে, সেখানে আন্দোলনকারীরা বলেছেন যে তারা সহিংসতার মধ্যে নেই। আমাদের কাছে তথ্যউপাত্ত আছে যে, এই জামায়াত, শিবির, বিএনপি, ছাত্রদলের যারা জঙ্গি, তারাই এটা করেছে। এই দলটাকে যদি নিষিদ্ধ করা হয় তাহলে আইনশৃঙ্খলা ও দেশের পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

আরেক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, কোনো দলকে যখন নিষিদ্ধ করা হয়, সেটা নির্বাহী আদেশেই হয়। যুদ্ধাপরাধের দায়ে বিচার করা এক কথা, আর দল নিষিদ্ধ করা আরেক কথা। এর আগে সকালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের যৌথসভার শুরুতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, জামায়াতকে কীভাবে নিষিদ্ধ করা হবে, সেই আইনি দিক তারা খতিয়ে দেখছেন।

১৪ দলের বৈঠকে যা হয়েছিল : সোমবার গণভবনে চৌদ্দ দলের বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ১৪ দলের এ সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়েছে জামায়াতশিবির গোষ্ঠীর অপশক্তির রাজনীতি নিষিদ্ধ করার জন্য। ১৪ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দ মনে করেন, বিএনপি, জামায়াত, ছাত্রদল, শিবির তাদের দোসর উগ্রবাদী জঙ্গি গোষ্ঠী বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তারা সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে দেশকে অকার্যকর করার ষড়যন্ত্র করছে। অতি সম্প্রতি চোরাগোপ্তা হামলা করে এবং গুলি বর্ষণ করে সরকারের উপর দায় চাপাতে তারা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ মানুষ হত্যা করে লাশ পর্যন্ত ঝুলিয়ে রেখেছে। এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী যে প্রক্রিয়ায় হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তা ইতিহাসে নজিরবিহীন। জাতীয় স্বার্থে দেশবিরোধী এ অপশক্তিকে নির্মূল করা প্রয়োজন।

ধর্মভিত্তিক দল জামায়াতের রাজনীতি বাংলাদেশে নিষিদ্ধের দাবি দীর্ঘদিনের। আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ নেওয়ার পর এই দাবি আরো জোরালো হয়। তবে গত ১৫ বছরে কার্যকর কোনো উদ্যোগ সরকারের তরফে নেওয়া হয়নি। এবার কোটাবিরোধী আন্দোলনকে সহিংস রূপ দেওয়ার পেছনে বিএনপি ও জামায়াতকে দায়ী করে আসছেন ক্ষমতাসীনরা।

একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ব্যক্তির বিচার হলেও দল হিসেবে জামায়াতের বিচারের দাবি ২০১৩ সালে গণজাগরণ মঞ্চ থেকেও তোলা হয়েছিল। গোলাম আযমের মামলার রায়ে আদালত জামায়াতকে ‘ক্রিমিনাল দল’ আখ্যায়িত করার পর দাবিটি আরও জোরালো হয়ে ওঠে।

২০১৩ সালে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল ঘোষণা করে হাই কোর্ট। এরপর গণজাগরণ মঞ্চসহ বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তির পক্ষে সংগঠনটি নিষিদ্ধের দাবি জোরালো হলেও তা আজও হয়নি।

হাই কোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হওয়ার পর ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন। সর্বোচ্চ আদালতেও হাই কোর্টের রায় বহাল থাকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআজ থেকে স্বাভাবিক সূচিতে ফিরছে অফিস-আদালত, ব্যাংক
পরবর্তী নিবন্ধযুক্তরাজ্যে ছুরি নিয়ে হামলা, দুই শিশু নিহত