একপাশে জাহাজের স্টিয়ারিং। অপরপাশে চাকা। মাঝখানে পাকা অবকাঠামো। এই তিনের সমন্বয়ে তৈরি করা নান্দনিক ডিজাইনে নগরের সিমেন্ট ক্রসিং মোড়ে একটি গোল চত্বর করছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে ভূমিকা রাখে চট্টগ্রাম। বন্দর এবং এখানকার নানা শিল্পকারখানা দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিচ্ছে। বন্দরের সঙ্গে সম্পৃক্ত জাহাজ। তারই প্রতীক হিসেবে এসেছে জাহাজের স্টিয়ারিং। একইভাবে চাকা শিল্পকারখানার প্রতীক। অবকাঠামোটি অর্থনৈতিক কেন্দ্র। শুধু সিমেন্ট ক্রসিং মোড় নয়। নগরের নগরের ১৭টি মোড়ে গোলচত্বর করবে চসিক। এসব গোলচত্বরের ডিজাইনে প্রাধান্য পাচ্ছে চট্টগ্রামের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। বিশেষ করে যে এলাকায় গোলচত্বরটি নির্মাণ করা হবে ওই এলাকার ইতিহাসকে গুরুত্ব দিয়ে করা হচ্ছে ডিজাইন। যেমন সিমেন্ট ক্রসিং মোড় দুটি ইপিজেড (রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল)-এর মাঝখানে অবস্থিত হওয়ায় এখানে অর্থনৈতিক বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হয়।
চসিকের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আড়াই হাজার কোটি টাকার ‘এয়ারপোর্ট রোডসহ বিভিন্ন সড়কসমূহ উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সিমেন্ট ক্রসিং মোড়ের গোলচত্বরটি করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় মোট ৯টি গোলচত্বর করা হবে। এসব গোলচত্বর নির্মাণে বরাদ্দ আছে ১২ কোটি টাকা। গোলচত্বরগুলোর অবকাঠামো নির্মাণে পৌনে চার কোটি টাকায় ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ডিজাইন চূড়ান্ত হওয়ায় ৬টির কাজ শুরু হয়েছে। বাকিগুলোর জন্য নকশা প্রণয়নের কাজ চলছে। একইসঙ্গে প্রকল্পবর্হিভূত গোলচত্বরগুলোর জন্যও নকশা প্রণয়নের কাজ চলছে। গোলচত্বরগুলো সড়কে শৃঙ্খলা আনয়নের পাশাপাশি সৌন্দর্য বাড়াবে।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, চকবাজার, লালদীঘি, কোতোয়ালী জিপিও’র সামনে, নয়াবাজার, সিমেন্ট ক্রসিং এবং কাঠগড় মোড়ে কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া নকশা প্রণয়নের কাজ চলছে সিজিকেএস স্কুল, সাগরিকা, কাজীর দেউড়ি, নতুন ব্রিজ সংলগ্ন মোড় এবং নিউমার্কেট মোড়ে গোলচত্বর নির্মাণে ডিডিসি নামে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠান নকশা প্রণয়ন করছে। এছাড়া বহাদ্দারহাট, দুই নম্বর গেটসহ আরো কয়েকটি স্থানেও গোলচত্বর নির্মাণ করা হবে পর্যায়ক্রমে।
সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী আজাদীকে বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা নিশ্চিতের পাশাপাশি শহরের সৌন্দর্য বাড়াতে নান্দনিক ডিজাইনের গোলচত্বরগুলো নির্মাণ করছি। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন, সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস করবে গোলচত্বরগুলো। তিনি বলেন, গোলচত্বরের ডিজাইনে সংশ্লিষ্ট এলাকার ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে প্রাধান্য দিতে বলেছি। যাতে করে নতুন প্রজন্ম বীর চট্টলার ঐতিহ্যকে ধারণ করতে পারে।
এদিকে ইতোমধ্যে ডিজাইন করা কয়েকটি গোলচত্বরের নকশা থেকেও ইতিহাস–ঐতিহ্যের বিষয়টি স্পষ্ট। যেমন অলি খাঁ মসজিদের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে চকবাজারের গোলচত্বরটিতে নির্মাণ করা হচ্ছে একটি ইসলামিক মনুমেন্ট (স্মৃতি চিহ্ন)। গোলচত্বরে নির্মাণাধীন ইসলামিক মনুমেন্টের কাঠামোর উপরে একটি গম্বুজ থাকবে। গম্বুজের নিচে কালেমার বা ইসলামিক ক্যালিওগ্রাফি করা হবে। এর নিচে কাঠামোটার চতুর্দিক হবে এরাবিয়ান ডিজাইনের।
একইভাবে মানুষের মুক্তির প্রতীককে করা হচ্ছে লালদীঘি মোড়ের গোলচত্বর। ১৯৬৬ সালে লালদীঘি ময়দানে প্রথম জনসভা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালি জাতিকে মুক্তির পথ দেখাতে এ মাঠে ছয় দফা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু। মুক্তিকামী মানুষের অবয়বই ফুটে উঠে লালদীঘি গোলচত্বরের নকশায়। এদিকে লাল রং’কে প্রাধান্য দিয়ে করা হয়েছে জিপিও’র সামনের গোলচত্বরের ডিজাইন। চিঠির মাধ্যমে মানুষের সংযোগ ঘটে। সেই সংযোগ ফুঠে উঠে এ ডিজাইনে।
চসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশিকুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, ৬টি গোলচত্বরের কাজ চলছে। বাকিগুলোর ডিজাইন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সড়কের শৃঙ্খলা আনয়ন করে গোলচত্বর। গোলচত্বর হয়ে গেলে সেখানে এলোমেলোভাবে যানবাহন চলাচল বন্ধ হবে। কারণ গোল চত্বরের সঙ্গে সঙ্গে সড়কের ল্যান্ড মার্কিং ও ট্রাফিক সিগন্যালের ব্যবস্থা করা হবে। এতে একদিকের গাড়ি অন্যদিকে চলাচলের সুযোগ বন্ধ হবে। ফলে সেখানে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায়ও শৃঙ্খলা আসবে।