এ কেমন ছুটি, এ কেমন বন্ধ? চারিদিকে শুধু রক্ত আর কান্নার ধ্বনি ভেসে বেড়াচ্ছে। কেমন এক অস্থিরতা আর শঙ্কা। উত্তেজনায় কোনও কাজে পা চলে না। চোখে শুধু জল। এই রকম চাকরি থেকে, কাজ থেকে বন্ধ তো চাইনি কখনো? তবু সার্বক্ষণিক বিধাতার কাছে কামনা সবাই ভালো থাকুক, সুস্থ থাকুক, নিরাপদে থাকুক। সকল মানুষ শান্ত হয়ে যাক, বিশেষ করে যে সকল পড়ুয়া নিষ্পাপ সন্তান, মা বাবার একমাত্র অন্ধের যষ্টি তারা সবাই ভালো থাকুক, বেঁচে থাকুক। একটা সন্তান নয়মাস দশদিন পেটে রাখার যে কি কষ্ট তা একমাত্র মায়েরাই জানে। তিল তিল করে বড় করতে কত কষ্ট ও ব্যথা সহ্য করতে হয় তা বাবা–মায়েরা ছাড়া কেউ বুঝবে না। সেই নাড়ি ছেঁড়া ধন যেন হারিয়ে না যায় মায়ের কোল থেকে। পুরো সপ্তাহ কাজ করার পর একদিন সাপ্তাহিক ছুটি পেলে মনে বেশ আনন্দ লাগতো। বিশ্রামের মাঝে ফুরফুরে ভাব থাকতো। আবার নতুন করে কাজের উদ্দীপনা বাড়তো। পুরো সপ্তাহ কাজ করার একটা মনের জোর সঞ্চয় হতো। আবার সপ্তাহের কজের ফাঁকে কোনও উৎসব, অনুষ্ঠানের জন্য বন্ধ পেলেও মনটা বেশ আনন্দিত হতো। কিন্তু হঠাৎ এমন একটা খারাপ পরিস্থিতির কারণে টানা পাঁচদিন বন্ধ তা যেন কেমন পানসে মনে হচ্ছে। এই বন্ধ পেয়ে মনটা খুশি তো হতেই পারছে না, বরং দুঃখটা চেপে বসেছে মনে। ঘরে ভালো লাগছে না, ঘুমটাও কেমন কমে গেলো। খেতে ভালো লাগছে না, কেমন যেন শুধু অবুঝ তরুণ সন্তান ও ছোট ছোট নিষ্পাপ ছেলে মেয়েদের রক্ত ঝরা দেহের ছবি ভাসছে চোখে। আসলে আমরা বাঙালিরা খেটে খাওয়া মানুষ। কোন নির্ধারিত উৎসব ছাড়া বন্ধ আমাদের ভালোই লাগে না, ঘরে বসে বসে সময় কাটাতেও ভালো লাগে না। কাজ পাগল মানুষেরা তো কারফিউ থাকলেও একবার বাইরে গিয়ে হেঁটে আসছে। যে সকল ছেলে মেয়েরা কলেজে পড়ছে তাদের বাসায় ধরে রাখতেই পারছে না বাবা মা। কত প্রশ্ন কত জিজ্ঞাসা? তাদের বন্ধুদের মৃত্যু তাদের করে তুলেছে অস্থির? ঘরে ঘরে ও বাবা মায়ের ছিলো সন্তানকে রক্ষা করার এক ছোট যুদ্ধ। বাংলাদেশের সকল মানুষের মনে কোনও স্বস্তি ছিলো না। ছোট থেকে বৃদ্ধ সকলে ছিলো আতংকগ্রস্ত। আমরা সবুজ শ্যামলীমায় শান্ত পরিবেশে, নির্মল বায়ু গ্রহণে, সকল সন্তান ও পরিবারের আনন্দ মুখর পরিবেশে বাঁচতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। সংঘাত, হানাহানি, রক্তপাত, ভাঙচুর, মারামারি, সহিংসতা এগুলো যেন দেখতেই চাই না। তারুণ্যের শক্তি ও সাহস আমাদের বারবার মনে করিয়ে দেয় মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের কথা, মনে করিয়ে দেয় ভাষা আন্দোলনের কথা। এই মায়ের ভাষা পেয়েছি অনেক তরুণদের রক্তের বিনিময়ে। তবে কি সব অর্জন রক্ত দিয়েই পেতে হয়?