দলমতের পার্থক্য থাকতেই পারে। কিন্তু, স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা কারও অস্বীকার করার সুযোগ নাই। শুধুমাত্র স্বাধীনতার জন্য নয়, ৫২‘র ভাষা আন্দোলন, ৬৯‘র গণঅভ্যুত্থান, ৭০‘র নির্বাচন প্রত্যেকটিতে তার অবদান স্মরণীয়। ৬৬‘র ছয় দফা দাবি ছিল বঙ্গবন্ধুর তীক্ষ্ণ বুদ্ধি ও দূরদর্শিতার মাধ্যমে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের শাসন–শোসনের বিরুদ্ধে এক বলিষ্ঠ প্রতিবাদ। ১৯২০–১৯৭৫ এই ৫৫ বছর জীবনের প্রায় এক–চতুর্থাংশ কারাগারে থাকাটা বঙ্গবন্ধুর আপোসহীন মনোভাবের চিত্রই তুলে ধরে। বাংলাদেশের খুব কম রাজনীতিবিদের ক্ষেত্রেই আমরা এমন চিত্র দেখতে পাই। অথচ আমরা আজ দলীয় গন্ডির মধ্যে পড়ে সেই বঙ্গবন্ধুকে যথাযথ মূল্যায়ন করতে পারছি বলে আমার মনে হয় না। ছবি কিংবা পোস্টার ছাটিয়ে নয়, সকলের মধ্যে চাই (বিশেষ করে যারা রাজনীতির মাঠের কর্মী এবং সচেতন নাগরিক) বঙ্গবন্ধুর জীবনী থেকে কিছু না কিছু জেনে সেখান থেকে শিক্ষাগ্রহণ করা। অন্তত তার লিখিত অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটা পাঠ। বিশ্বাসের সাথে বলতে পারি আওয়ামী লীগের স্থানীয় দূরের কথা জাতীয় পর্যায়ে পর্যন্ত এমন অনেক নেতা রয়েছেন যাদের বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে ভাল জ্ঞান, ধারণায় যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। আওয়ামী লীগসহ দেশে বিদ্যমান দলগুলোর মধ্যে একটা বিষয় আমি গভীরভাবে লক্ষ্য করি। সেটা হচ্ছে, আওয়ামী লীগ যেমন অনান্য দলগুলোকে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে জানানোটাকে কখনো গুরুত্বের চোখে দেখে না, তেমনি অনান্য দলগুলোও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কখনো ভাবার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে না। অথচ, এই বঙ্গবন্ধুই দেশের সকল মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য জীবনের বিভিন্ন সময় প্রায় ১৫ টি গুরুত্বপূর্ণ বছর কারাগারে কাটিয়েছেন। তাই দলমত নির্বিশেষে দেশের সকলের মাঝে চাই বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে জানা। সবার এটা মাথায় রাখতে হবে যে, বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা এবং তাকে নিয়ে জানতে হলেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী কিংবা সমর্থক হতে হবে এমনটা কিন্তু নয়।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও মানবাধিকার কর্মী।