মোবাইলের অব্যবহৃত ডাটা প্যাকেজের ভবিষ্যৎ কী

সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা কোটি গ্রাহকের বিটিআরসি বলেছে, সিদ্ধান্ত হবে গ্রাহকদের স্বার্থ বিবেচনায় রেখে

হাসান আকবর | রবিবার , ২৮ জুলাই, ২০২৪ at ৬:৩০ পূর্বাহ্ণ

দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৩ কোটির উপরে। এই কোটি কোটি গ্রাহকের প্রত্যেকেই কম বেশি ডাটা প্যাকেজ কিনে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। টানা প্রায় দশদিন মোবাইলে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় কয়েক কোটি গ্রাহকের কেনা ডাটা প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। বিপুল সংখ্যক গ্রাহকের অব্যবহৃত ডাটা প্যাকেজের ব্যাপারে কি হবে তা জানতে উদগ্রীব কয়েক কোটি মানুষ। আগাম টাকা দিয়ে ডাটা কিনেও ব্যবহার করতে না পারার যৌক্তিক কোনো কারণ নেই বলে মন্তব্য করে বিষয়টি নিয়ে সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে। অবশ্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিটিআরসি বলেছে, বিষয়টি নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত না হলেও গ্রাহকদের স্বার্থ সুরক্ষায় অবশ্যই তারা ভূমিকা রাখবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, সাম্প্রতিক জনশুমারির হিসেবে দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ। প্রকৃত জনসংখ্যা এর থেকে বেশি বলেও সংশ্লিষ্টরা মন্তব্য করেছেন। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী দেশে বিভিন্ন অপারেটরের মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১৮ কোটি ৭৫ লাখ। একজন ব্যক্তি একাধিক সিম ব্যবহার করায় জনসংখ্যার তুলনায় সিম ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেশি।

বিটিআরসির তথ্য মতে, দেশে বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৩ কোটি ১ লাখ। দেশের মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ৯০ দশমিক ৭৯ শতাংশই মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। যার সংখ্যা ১১ কোটি ৯৭ লাখ। ১ কোটি ২১ লাখের বেশি মানুষ ব্যবহার করেন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট। আবার ব্রডব্যান্ড সুবিধা থাকলেও অনেকেই ঘরে বা অফিসের বাইরে অনলাইনে থাকার জন্য মোবাইলে ডাটা প্যাকেজ কিনে ব্যবহার করেন। দেশের মোট জনসংখ্যার ৩৮ দশমিক ৯ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, লেখাপড়া, ব্যবসা বাণিজ্যসহ নানা ধরনের ডিজিটাল কার্যক্রমের জন্য দিনে দিনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্কুল পড়ুয়া কিশোর থেকে শুরু করে অবসর জীবনে থাকা মানুষ সকলেই ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। দেশের মোবাইল অপারেটরেরা বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজ বিক্রি করেন। ব্যবহারকারীদের আকর্ষণ করার জন্য নানা সাজে সাজানো হয় এসব প্যাকেজ। ২০০ এমবি থেকে ১০০ জিবি কিংবা আললিমিটেড ডাটার প্যাকেজ রয়েছে। কয়েক ঘণ্টা থেকে একমাস পর্যন্ত মেয়াদ থাকে এসব প্যাকেজের। গ্রাহকেরা নিজেদের সুবিধা মতো প্যাকেজ কিনে থাকেন। দেশে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের অধিকাংশই এক মাস মেয়াদের প্যাকেজ কিনেন। যা দিয়ে পুরো মাসের ডিজিটাল কার্যক্রম সারিয়ে নেন তারা।

কোটা আন্দোলন ইস্যুকে ঘিরে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে গত ১৬ জুলাই থেকে দেশে মোবাইল ইন্টারনেটের গতি একেবারে স্লো করে দেয়া হয়। ১৮ জুলাই থেকে মোবাইল ইন্টারনেট পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। গত ১০ দিন মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করতে না পারায় কোটি কোটি গ্রাহকের বিপুল পরিমাণ অব্যবহৃত ডাটা থেকে যায়। আগাম টাকা দিয়ে কেনা এসব ডাটার মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে বা দুয়েকদিনের মধ্যে শেষ হবে।

মোহাম্মদ ইমরুল কায়েস নামের একজন গ্রাহক গতকাল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমি ১৫ দিনের জন্য ২০ জিবি ডাটা কিনেছিলাম। কেনার পরদিনই মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যায়। আমি এক জিবিও ব্যবহার করিনি। অথচ ইতোমধ্যে আমার ডাটা প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হওয়ার সময় হয়ে গেছে। তিনি বলেন, মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাওয়ার পেছনে আমি কিংবা আমার মতো কোটি কোটি ব্যবহারকারীর কোনো দোষ বা দায় ছিল না। অপারটেরদের সমস্যায় ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে গেছে বা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এখন আমাকে এর দায় নিতে হবে কেন। তিনি বলেন, আমি গত দুইদিন ধরে অসংখ্যবার অপারেটরের হেল্প লাইনে ফোন করেছি। তাদের কাছ থেকে কোনো সদুত্তর পাইনি। তারা কিছু বলতে পারছে না। অব্যবহৃত ডাটার ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশনা না দিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডাটার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে।

আনিকা নামের একজন অনলাইন উদ্যোক্তা বলেন, আমি ৩০ জিবি ডাটা কিনেছিলাম। ৯ জিবি ব্যবহার করেছি। ২১ জিবি ডাটা অব্যবহৃত রয়ে গেছে। ৩০ জুলাই এ ডাটার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। আমার টাকা দিয়ে কেনা এই অব্যবহৃত ডাটার ভবিষ্যত কি তার কোনো উত্তর পাচ্ছি না। আনিকা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ব্রন্ডব্যান্ড চালু হয়েছে। মোবাইল ইন্টারনেটও চালু হবে বলে শুনছি। কিন্তু আমাদের অব্যবহৃত ডাটার ব্যাপারে কোনো ঘোষণা এখনো আসেনি। গ্রাহকের কোটি কোটি টাকার কষ্টের টাকা দিয়ে কেনা ডাটা নিয়ে এমন উদাসীনতা নিন্দনীয় বলেও তিনি ক্ষোভ ঝাড়েন।

আশিকুল ইসলাম নামের একজন ছাত্র জানান, আমি ১৭ জুলাই ৭ দিন মেয়াদের ১২ জিবি ডাটা কিনি। এক জিবিও ব্যবহার করতে পারিনি। ইতোমধ্যে আমার প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। অব্যবহৃত ডাটাগুলো ফেরত না দিলে আমার কষ্টের টাকাগুলো পুরোই নষ্ট হয়ে যাবে। গতকাল দেশের মোবাইল অপারেটরদের কাস্টমার কেয়ারে ফোন করে বিষয়টি নিয়ে কথা বললে তাদের কাছে অব্যবহৃত ডাটা নিয়ে কোনো নির্দেশনা নেই বলে জানান। তারা বলেন, সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা না আসলে ডাটা প্যাকের মেয়াদ স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ধারিত সময়েই শেষ হয়ে যাবে। তিনি মোবাইল ইন্টারনেট চালুর সঙ্গে সঙ্গে অব্যবহৃত ডাটা ব্যবহারের সুযোগ দেওয়ারও দাবি জানান।

বিষয়টি নিয়ে বিটিআরসির চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদের উদ্ধৃতি দিয়ে ঢাকা থেকে একজন সাংবাদিক জানান, বিটিআরসি মোবাইল অপারেটরদের সঙ্গে আলোচনা করছে। অপারেটরগুলোকে একসঙ্গে ডেকে বৈঠক করে এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আজ অথবা কাল মোবাইল ইন্টারনেট সেবা চালু হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে বৈঠক হতে পারে বলেও ঢাকায় টেলিযোগাযোগ সেক্টরে কাজ করা উক্ত সাংবাদিক জানান। বিটিআরটিসির চেয়ারম্যান আশ্বস্ত করেছেন যে, গ্রাহকদের স্বার্থের কথা মাথায় রেখে বিটিআরসি কাজ করে। অব্যবহৃত ডাটার ব্যাপারেও গ্রাহকদের স্বার্থকে সর্বোচ্চ বিবেচনায় রাখা হবে বলেও তিনি আশ্বস্ত করেছেন।

উল্লেখ্য, কোটা সংস্কার আন্দোলন ইস্যুতে দেশব্যাপী ৫ দিনের ইন্টারনেট ব্ল্যাক আউট শেষে গত মঙ্গলবার সীমিত পরিসরে পরীক্ষামূলকভাবে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু করা হয়। মোবাইল ইন্টারনেট সেবা এখনো চালু হয়নি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅপারেটরদের সঙ্গে বৈঠক আজ, তারপর মোবাইল ইন্টারনেট খোলার সিদ্ধান্ত
পরবর্তী নিবন্ধমঞ্জুসহ নগর বিএনপির আরও ২০ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার