কোটা সস্কারের দাবিতে দেশব্যাপী চলমান আন্দোলনের প্রভাব পড়েছে বাজরে। গতকাল ২০ জুলাই দৈনিক আজাদীর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত কয়েক দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি সবজির দাম বেড়েছে ১০টাকা পর্যন্ত। সবজি ছাড়াও উর্ধ্বমুখী রয়েছে ব্রয়লার মুরগি ও মাছের বাজারও। সবজি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ছাত্রদের আন্দোলনের কারণে সবজির সরবরাহের ঘাটতি রয়েছে। প্রতিবেদনে বাজারের পুরো একটি চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
আসলে বাজারে স্বস্তি মিলছে না। চালের দাম বেড়ে যাওয়ার পর কাঁচাবাজারেও মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে। শাকসবজি, মাছ সব কিছুরই দাম চড়া। শুধু ছাত্রদের আন্দোলনের কারণে নয়, বন্যা এবং সরকারের মজুদে টান পড়ার পর সব ধরনের চালের দাম বেড়ে যায়।
একসময় মোটা চালের দামও চলে যায় সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। সরকারের মজুদে টান পড়ায় সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। চালের আমদানি শুল্ক কমানো হয়। কিন্তুবাজারে এর প্রভাব পড়তে দেখা যায়নি। বাজারে যে চালের দাম কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়ে গিয়েছিল, তা কমছে না। অর্থাৎ আমদানি ও খোলাবাজারে চাল বিক্রির প্রভাব তেমনভাবে পড়েনি বাজারে। তা ছাড়া এবার বাজারে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষকও নিজেদের খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে সতর্ক হবে। স্বাভাবিকভাবেই আমন সংগ্রহ অভিযানের সফলতা নিয়ে সংশয় থাকবে। কাজেই বাম্পার ফলন হলেও আমনের ওপর খুব একটা নির্ভর করা যাবে না বলেই বিশেষজ্ঞদের অভিমত। অন্যদিকে লাভ না হওয়ায় কৃষকরা ধান চাষ নিয়ে চিন্তায় আছে। চালের বাজারে তার প্রভাবও পড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাংলাদেশের কৃষি পরিবারগুলোর ৮৪ শতাংশই ভূমিহীন, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষী পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। তারা চাল বিক্রি করে না। বিক্রি করে ধান। ধার দেনা মেটাতে ধান কাটার মৌসুমের শুরুতে তারা ধান বিক্রি করে। চালকল মালিকদের মাধ্যমে চাল রফতানির সিদ্ধান্ত হওয়াতে এতে শুধু লাভবান হচ্ছেন চালকল মালিকরা। চাল আমাদের প্রধান খাদ্য। দেশের জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ শহরাঞ্চলে বাস করে। ভূমিহীন, শ্রমিক মজুর ধান কাটার মৌসুম শেষে চাল ক্রেতায় পরিণত হয়। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীসহ ৮০ শতাংশের বেশি মানুষ চাল কিনে খায়। চালের মূল্যবৃদ্ধিতে স্বল্প সংখ্যক বড় ও মাঝারি কৃষক ছাড়া অন্য সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হন। চালের মূল্যবৃদ্ধি খাদ্য নিরাপত্তাকে হুমকিতে ফেলে। তাই চাল রফতানিতে ভর্তুকি মূল্যবৃদ্ধি সমস্যাকে বাড়াবে, কমাবে না। প্রয়োজন কৃষকের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা এবং স্বল্প মূল্যে ভোক্তাকে চালের যোগান দেওয়া। এর মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হলে সরকারকে সঠিক ভূমিকা পালন করতে হবে।
সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনের সহিংসতার কারণে সরকারকে কারফিউ জারি করতে হয়েছে। তাছাড়া কয়েকদিন ধরে ইন্টারনেট যোগাযোগ বন্ধ থাকার কারণে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট হাজার হাজার মানুষকে। কারফিউ, ইন্টারনেট বন্ধ ও আন্দোলনের ফলে বাজারে পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক না–ও হতে পারে। ব্যাহত হতে পারে নানা কার্যক্রম। এ অবস্থায় তার সরাসরি প্রভাব বাজারে পড়বে। দাম হুহু করে বাড়তে পারে।
এ সময়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে জনগণের দুর্ভোগ বাড়বে। এর দায় বর্তাবে সরকারের ওপর। কাজেই বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারকে তৎপর হতে হবে। বাজারে জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির কারণ নিরূপণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। বাজারের নিয়ন্ত্রণ হারালে অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। কাজেই যেকোনো মূল্যে বাজার নিয়ন্ত্রণে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। পণ্য সরবরাহ যেন স্বাভাবিক থাকে, তার ব্যবস্থা নিতে হবে।