স্বপ্ন প্রেম ভালোবাসার মতই এক অদৃশ্য বিষয়। কিন্তু উত্তাপ প্রদানকারী। মানুষ কারণে অকারণে স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে। অবচেতন মনের কল্পনা ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন হয়ে আসে। মনের কল্পনা চোখের স্বপ্ন হয়ে ভাসে। স্বপ্ন নিয়ে জ্ঞানী–গুণী আলোকিত মানুষের কিছু কথা দিয়ে শুরু করতে চাই স্বপ্ন। আহমেদ হুমায়ুন– কিছু স্বপ্ন কিছু বিশ্বাস, কিছু আস্থা মানুষের বেঁচে থাকার জন্যই প্রয়োজন। জীবনকে পুষ্পিত করে তোলার স্বপ্ন, মানুষের ওপর বিশ্বাস, মানবিক মূল্যবোধে অচঞ্চল আস্থা সমাজের সম্মুখ যাত্রার পাথেয়। এই পাথেয় যখন হারিয়ে যায় সমাজে তখনি স্থবির হয়ে কাদা ঘুলিয়ে উঠে। মানুষ তার আপন জ্যোতি হারায়। যে স্বপ্ন দেখে না সে মৃত। প্রত্যেকটা মানুষ স্বপ্নের রাজা স্বপ্ন দেখা ভালো কিন্তু স্বপ্নের মধ্যে বাস করা ভালো নয়, আমরা যদি স্বপ্ন না দেখতাম তাহলে জীবন অসহ্য হয়ে উঠতো। আমি চাই সবাইকে একটা স্বপ্ন দেখাতে (আবুল ফজল)। মানুষই একমাত্র জীব যে স্বপ্নের মধ্যে বাস করে।
বিজ্ঞ পাঠক স্বপ্ন দেখতে এবং স্বপ্ন দেখাতে এক ধরনের আনন্দ আছে। স্বপ্ন দেখি বলেই অনেক অসম্ভব সম্ভব করে তোলা সম্ভব হয়। কল্পনা এবং স্বপ্ন যেন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। কল্পনার সূতো ধরেই স্বপ্নের বীজ বোনা। স্বপ্নদ্রষ্টা মানুষই সমাজে অনেক বড় বড় কাজে অগ্রসর হয়ে থাকেন। সুন্দর স্বপ্ন সুন্দর মন তৈরি করে সুন্দর চিন্তা আর সুন্দর চিন্তা রূপ নেয় সুন্দর কর্মকাণ্ডে। সুন্দর ও সুষ্ঠু সুন্দরের বীজ ছড়িয়ে দিন সমাজের আনাচে–কানাচে ফলে উঠুক সবুজ শ্যামল পরিবেশের আবহাওয়া। স্বপ্ন দেখুন স্বপ্ন দেখান। মানুষ কল্পনা করতে স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে।
শ্রদ্ধেয় ও জ্ঞানী ব্যক্তি বলেছেন, স্বপ্ন দেখতে হয় ঘুমিয়ে নয় জেগে। মনের আকুতি, আবেগ, অনুভূতি আর আশা স্বপ্ন হয়ে বাসা বাঁধা। মাথার ভেতরে স্বপ্ন কাজ করে চাষ করে তারপর তা হৃদয়ে পলিতে বীজ বুনতে শুরু করে। স্বপ্ন দেখে কল্পনা করে মানুষ কখনো উজ্জীবিত হয় আবার কখনো হতাশ অথবা বিমর্ষ হয়। কল্পনায় পাখা মেলে আকাশে ভেসে বেড়াবার স্বপ্নকে কল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিয়েছিলেন বাইট ব্রাদার্স। এমনি করে মমতাজকে বাঁচিয়ে রাখার স্বপ্ন দেখে সম্রাট শাহজাহান গড়ে তুলেছিলেন আগ্রার তাজমহল, রবি ঠাকুর লিখেছেন– তাজমহলের পাথর দেখেছো। দেখেছো কী তার প্রাণ অন্তরে তার মমতাজ নারী বাহিরেতে শাহজাহান।
মানুষ কথায় কথায় বলে স্বপ্নে বীজ বোনা। কখনো ‘স্বপ্নে’র এই বীজ পোকায় কাটে, কখনো অঙ্কুরে বিনষ্ট হয় আবার কখনো কখনো স্বপ্নের বীজ অংকুরিত হয়ে অনেক অসাধ্য সাধন করে। জাতির পিতা স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি স্বাধীন দেশের। তিল তিল করে সেই স্বপ্নকে তিনি এগিয়ে এনে ১৯৭১–এর মুক্তিযুদ্ধে তা বাস্তবে রূপ দেন।
মানুষ স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে কারণ স্বপ্ন মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। এগিয়ে নেয় শক্তি দেয় সাহস যোগায়। আমি এখনও স্বপ্ন দেখি তবে আমার সে স্বপ্ন ঘুমে নাহি আসে চোখের সামনে ভাসে। স্বপ্ন দেখি একটা সুন্দর মানব সমাজের সেখানে হানাহানি, বৈষম্য, সামপ্রদায়িকতা ও অশান্তি অস্বস্তি বিরাজ করবে না। স্বপ্ন দেখি এমন সমাজের যেখানে মানুষে মানুষে কোন হিংসা বিদ্বেষ এবং বিভেদ থাকবে না। আমার স্বপ্ন বিদ্রোহী কবি নজরুলের ভাষায় বলে– তোমরা রহিবে তেতালার পরে আমরা রহিব নীচে। অথচ তোমারে দেবতা বলিব যে ভরসা আজ মিছে। থাকবে না ধনী–দরিদ্রের ভেদাভেদ, থাকবে না নারী–পুরুষের বৈষম্য।
মানুষ কেবল নিজে স্বপ্ন দেখে না কখনো কখনো সেই স্বপ্ন ছড়িয়ে দেয় সমাজের আনাচে–কানাচে কখনও লিখে কখনো এঁকে কখনও গেয়ে কখনও বা দেখি। শ্রদ্ধেয় চলচ্চিত্র পরিচালক জহির রায়হানের ‘জীবন থেকে নেয়া’ সিনেমার কাহিনী তেমনি এক স্বপ্ন। এ খাঁচা ভাঙবো আমি কেমন করে –পার্থক্য বড়ই অল্প দেশ আর ঘরে। স্বপ্নবাজ মানুষ স্বপ্ন দেখেই ক্ষান্ত হয় না স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তরিত করার চেষ্টা অবিরাম চলে। কারণ এটা ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখে না –জেগে স্বপ্ন দেখে এবং স্বপ্নে সৌধ গড়ে। আমিও অনেক স্বপ্ন দেখি কখনো জেগে কখনো বা কখনো ঘুমিয়ে। স্বপ্ন দেখি, স্বপ্নে বীজ বুনি। স্বপ্নের কথা শুনি সুন্দর ভবিষ্যতের দিন গুনি।