চট্টগ্রাম–১১ (বন্দর–পতেঙ্গা) আসনের সংসদ সদস্য এম এ লতিফ বলেছেন, বঙ্গবন্ধু রাজাকারদের ক্ষমা করেছেন। প্রধানমন্ত্রীও তাদেরকে মানবতা দেখিয়েছেন। কিন্তু রাজাকারের দোসররা বারবার দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে ধ্বংসলীলা চালাচ্ছে। এদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে আগ্রাবাদ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিসহ সার্বিক ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নয়ন বিষয়ক এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি এ সভার আয়োজক। এম এ লতিফ বলেন, সম্প্রতি দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দ্রুত স্থিতিশীল করার জন্য প্রশাসন ও আইন–শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এই মুহূর্তে আমাদের সকলকে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে একযোগে কাজ করার পাশাপাশি সকল ধরনের ষড়যন্ত্র ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের গভীর সমুদ্র বন্দর ছিল না। বন্দরের অনেক উল্লেখযোগ্য আধুনিক যন্ত্রপাতিও ছিল না। প্রধানমন্ত্রীর যোগ্য নেতৃত্বে দেশে গভীর সমুদ্র বন্দর যেমন হচ্ছে, তেমনি দেশে তৈরী হচ্ছে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ ও অবকাঠামোগত সুবিধা। ষড়যন্ত্রকারী অপশক্তি এসব উন্নয়ন কর্মযজ্ঞকে বাধাগ্রস্ত করতে চান। এম এ লতিফ চট্টগ্রাম বন্দরের স্ক্যানার সমস্যা সমাধান ও যন্ত্রপাতি কার্যকর রাখতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি পদক্ষেপ কামনা করেন। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি যে ঘটনা ঘটেছে, তা দেশের ইতিহাসে ন্যাক্কারজনক ও নজিরবিহীন। যারা আধুনিক ও সমৃদ্ধ আজকের বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেনি তারাই দেশের বিভিন্ন স্থাপনায় তাণ্ডব চালিয়েছে। দেশের অর্থনীতির জন্য চট্টগ্রাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এখানে রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর এবং দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন খ্যাত ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক। এজন্য চট্টগ্রামে যাতে কোনো ধরনের নাশকতা না হয় এবং অর্থনীতির গতি যাতে স্বাভাবিক থাকে সেজন্য আমরা ব্যবসায়ীসহ সকলের সাথে কাজ করছি।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, যারা এইসব ন্যাক্কারজনক হামলা করেছে তারা রাজাকারের উত্তরসূরী। আমরা সকলেই তাদের জানি। আমরা যদি তাদের মুখোশ উন্মোচন না করি এবং আইনের আওতায় না আনি তাহলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম তাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে যাতে কেউ প্রতিবন্ধকতা তৈরী করতে না পারে সেজন্য আমরা তৎপর ছিলাম। এই পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা সবসময় আমাদের পাশে ছিলেন। একই সাথে উৎপাদন যাতে থেমে না থাকে সেজন্য আমরা চট্টগ্রামের কারখানাগুলো দ্রুত চালু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। তিনি দেশের ব্যবসায়ীসহ আপামর জনসাধারণকে যারা এইসব ন্যাক্কারজনক হামলার মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে তাদের স্বরূপ জনগণের কাছে উন্মোচন করার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি ওমর হাজ্জাজ বলেন, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও অবকাঠামো স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ ভাঙচুরসহ দেশব্যাপী অরাজকতা ও নৈরাজ্যপূর্ণ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে রাষ্ট্রীয় সম্পদের পাশাপাশি বেসরকারি খাত ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে অর্থনীতির প্রাণ দেশের শিল্প উৎপাদন এবং সামগ্রিক আমদানি–রপ্তানি কার্যক্রম। দেশ বিরোধী চক্র অরাজকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন এবং রপ্তানি খাতকে ধ্বংসের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নিয়োজিত ছিল। দেশের এমন সংকটময় মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়তা, দূরদর্শিতা এবং সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপের কারণে নজিরবিহীনভাবে দেশে স্থিতিশীল অবস্থা ফিরে আসতে শুরু করেছে। ওমর হাজ্জাজ ব্যবসায়ী সমাজের পক্ষে সকল প্রকার নৈরাজ্য, অরাজকতা ও ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে অবস্থান এবং সকল পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের প্রতি আস্থা রেখে তার সাথে থাকার ঘোষণা দেন। বিশেষ পরিস্থিতিতে ব্যবসা বাণিজ্যের গতি স্বাভাবিক রাখতে বন্দর–কাস্টমস, প্রশাসন ও আইন–শৃঙ্খলা বাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের ধন্যবাদ জানান চেম্বার সভাপতি। পাশাপাশি এই উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বন্দর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণে পোর্ট ডিউজসহ বিভিন্ন ফি মওকুফের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
চট্টগ্রাম চেম্বার সহ–সভাপতি রাইসা মাহবুব নাশকতার কারণে দেশব্যাপী ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় চট্টগ্রাম বন্দর–কাস্টমস ও ব্যাংকিং খাতের ক্ষতিগ্রস্ত সেবা প্রদান পদ্ধতিকে দ্রুততার সাথে স্বাভাবিক গতিতে ফিরে আনার জন্য সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের যুগ্ম–কমিশনার মো. তারেক হাসান, চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) এনামুল করিম, বিজিএমইএর প্রথম সহ–সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, বিকেএমইএর পরিচালক ফৌজুল ইমরান খান, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের সহ–সভাপতি এএম মাহবুব চৌধুরী, বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশন’র সভাপতি সৈয়দ মো. আরিফ, বাফার সহ–সভাপতি খায়রুল আলম সুজন, সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশন’র সভাপতি একেএম. আকতার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু, সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশন’র পক্ষে জহির উদ্দিন আহমেদ, জিপিএইচ ইস্পাতের আলমাস শিমুল, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি সালামত আলী এবং চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি সালেহ আহমেদ সুলেমান, প্রাইম মুভার ওনার্স এসোসিয়েশন সাধারণ সম্পাদক মো. হোসেন এবং আন্তঃজিলা মালামাল পরিবহন সংস্থা ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির মো. সুফিউর রহমান টিপু সভায় বক্তব্য রাখেন।