ধকল সামলে সচল বন্দর ও কাস্টমস

চট্টগ্রামের সব গার্মেন্টস কারখানা চালু শ্রমিক উপস্থিতিও ছিল সন্তোষজনক আমদানি ও রপ্তানিকারকদের স্বস্তি

হাসান আকবর | বৃহস্পতিবার , ২৫ জুলাই, ২০২৪ at ১০:৫১ পূর্বাহ্ণ

প্রতিকূল পরিস্থিতির ধকল সামলে সচল হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম বন্দর। আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যে স্থবিরতা কেটে উঠছে। নানা সংঘাত ও সহিংসতায় জারিকৃত কারফিউ এবং সাধারণ ছুটির পর গতকাল অফিস খোলার প্রথম দিনে বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারিতে বিরাজমান খরা কাটতে শুরু করেছে। বিশেষ করে সীমিত পরিসরে হলেও ইন্টারনেট সার্ভিস চালু হওয়ায় থমকে থাকা কার্যক্রমে গতি ফিরছে। ইন্টারনেটের স্লো গতি কাজে কর্মে স্বাভাবিক ছন্দ ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হলেও কাজ শুরু হওয়ায় আমদানি রপ্তানিকারকেরা স্বস্তি প্রকাশ করেছে। চট্টগ্রাম বন্দর পরিস্থিতি দেখতে আজ সকালে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী আসছেন বলেও সূত্র জানিয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী সংঘাত, প্রাণহানিসহ অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে জারি করা কারফিউ এবং সাধারণ ছুটির পর গতকাল সরকারিবেসরকারি অফিস, পোশাকসহ শিল্পকলকারখানা, দোকানপাট, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো খুলেছে। চালু হয়েছে সীমিত পরিসরে ইন্টারনেট সার্ভিস। এতে করে বন্ধ হয়ে যাওয়া অনলাইন নির্ভর কার্যক্রম কিছুটা শুরু হয়েছে। কাস্টমসে আমদানিরফতানি পণ্যের শুল্কায়ন সীমিত পরিসরে চালু হয়েছে। ফলে বন্দর থেকে পণ্য পরিবহন গত কয়েকদিনের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। গতকাল এবং আজ চট্টগ্রামে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল রাখার ঘোষণা দেয় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। একই সাথে সকাল ১১ টা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত সব অফিস আদালত এবং কারখানা খোলা রাখারও সিদ্ধান্ত দেয়া হয়। প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত পাওয়ার পর গতকাল সকাল ১১টা থেকে সব অফিস আদালত খুলে যায়। হাজার হাজার মানুষ টানা কয়েকদিনের কাজ নিয়ে রাস্তায় নামেন। বিভিন্ন অফিস আদালত এবং রাস্তাঘাটে প্রচুর লোকসমাগম হতে দেখা যায়। রাস্তায় প্রচুর গাড়ি চলাচল করে। নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে যানজটও দেখা দেয়। বন্দর কেন্দ্রিক গাড়ি চলাচল বৃদ্ধির ফলে ইপিজেড থেকে বারিক বিল্ডিং পর্যন্ত এলাকায় গতকাল তীব্র যানজট বিরাজ করে। বন্দর থেকে শত শত গাড়ি পণ্য নিয়ে বের হয়, অপরদিকে বন্দরেও প্রচুর গাড়ি প্রবেশ করে। চট্টগ্রামের প্রায় ৬শ’ গার্মেন্টসে গতকাল কাজ হয়েছে। শ্রমিক উপস্থিতির সংখ্যাও ৯০ শতাংশের বেশি ছিল। চট্টগ্রাম ইপিজেড এলাকায় দিনভর হাজার হাজার মানুষের পদচারনা পরিলক্ষিত হয়েছে।

গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম দৈনিক আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রামের সব গার্মেন্টসেই কাজ হয়েছে। শ্রমিক উপস্থিতিও ছিল সন্তোষজনক। দুয়েকটি কারখানা নিজেদের সমস্যার জন্য হয়তো চালু করতে পারেনি। তবে কোথাও কোন সমস্যা নেই।

পাঁচদিন পর ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ চালু হওয়ায় চট্টগ্রাম কাস্টমসে স্থবিরতা কেটে গেছে। গতকাল থেকে সেবাগ্রহীতারা অ্যাসাইকুডা সিস্টেমে বিল অব এন্ট্রি ও বিল অব এঙপোর্ট দাখিল করতে পেরেছেন। তবে সীমিত পরিসরে ইন্টারনেট সংযোগ চালু হওয়ায় সিএন্ডএফ এজেন্টরা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান বা ঘরে বসে অনলাইনে কাজ করতে পারেননি। এমন পরিস্থিতি চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ অনলাইনে কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য সিএন্ডএফ এজেন্টদের জন্য চারটি কম্পিউটার বরাদ্দ দেন। ইন্টারনেট সেবা পুরোপুরি চালু না হওয়া পর্যন্ত তারা কাস্টমসে বসেই যাবতীয় কার্যক্রম চালাবেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম কাস্টমসে গতকাল প্রায় এক হাজার বিল অব এন্ট্রি ও বিল অব এঙপোর্ট দাখিল হয়েছে। তবে ইন্টারনেটের গতি ছিল কিছুটা মন্থর। সেবাগ্রহীতারা জানান, গতকাল অ্যাসাইকুডা সিস্টেম চালু হয়েছে। এটি ইতিবাচক। তবে শুল্ক পরিশোধে অনেক ব্যাংক থেকে অনলাইন পেমেন্ট (আরটিজিএস) করতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। এতে কিছুটা ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।

চট্টগ্রাম কাস্টমস এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানি রিগ্যান বলেন, অ্যাসাইকুডা সিস্টেমে আমরা বিল অব এন্ট্রি ও বিল অব এঙপোর্ট দাখিল করতে সক্ষম হয়েছি। তবে চট্টগ্রাম বন্দর ও শিপিং এজেন্ট থেকে আমরা সহযোগিতা পাচ্ছি না। শিপিং এজেন্ট আমাদের ডিও দিচ্ছে না। এতে সীমিত পরিসরে ইন্টারনেট চালু হওয়ার সুফল আমরা পাচ্ছি না।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপকমিশনার সাইদুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, কাস্টমসে শুল্কায়ন শুরু হয়েছে। আমদানিরপ্তানির কাজ স্বাভাবিক হচ্ছে।

স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে শুল্কায়ন, বন্দরের আমদানিরফতানি পণ্যের ডকুমেন্টেশন, পণ্যের ঘোষণা অনুযায়ী ইনস্পেকশন, কন্টেনার রাখার স্থান নির্ধারণ, ডিউটি আদায়সহ সব কার্যক্রম টানা পাঁচদিন স্থবির ছিল। ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে বন্দরের কার্যক্রম সীমিতভাবে সচল রাখা হলেও শুল্কায়ন নথি না পৌঁছায় পণ্য ডেলিভারি ও জাহাজীকরণ কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া, সংঘাত ও কারফিউর কারণে মহাসড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় দেশের আমদানিরফতানি বাণিজ্য বড়ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। তবে গতকাল থেকে এই অচলাবস্থা কেটে গেছে বলে উল্লেখ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য পরিবহন বেড়েছে বলে উল্লেখ করে বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক গতকাল দৈনিক আজাদীকে জানান, মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার বিকেল পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন জেটিতে থাকা জাহাজ থেকে ২ হাজার ১৪৭ টিইইউএস কন্টেনার পণ্য নামানো হয়েছে। জাহাজীকরণ করা হয়েছে ৮৫২ টিইইউএস লোড কন্টেনার এবং ৬৫১ টিইইউএস খালি কন্টেনার। এই সময়ের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ১ হাজার ৮৬৯ টিইইউএস পণ্য বোঝাই কন্টেনার আমদানিকারককে ডেলিভারি দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন ডিপোতে পাঠানো হয়েছে ১ হাজার ৭ টিইইউএস কন্টেনার পণ্য। চট্টগ্রাম বন্দরে বিভিন্ন ইয়ার্ডে ৪১ হাজার ৪৫৯ টিইইউএস কন্টেনার রয়েছে। পরিস্থিতি যেভাবে উন্নতি হচ্ছে তাতে এসব কন্টেনারের একটি বড় অংশ আগামী দিনকয়েকের মধ্যে ডিপো কিংবা আমদানিকারকের কাছে ডেলিভারি হয়ে যাবে বলেও মোহাম্মদ ওমর ফারুক আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

এদিকে সাম্প্রতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম বন্দরের সার্বিক পরিস্থিতি দেখতে আজ সকালে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি চট্টগ্রাম আসছেন। তিনি বন্দরের সিসিটি এবং এনসিটি পরিদর্শন করবেন। প্রতিমন্ত্রী বন্দরের অচলাবস্থার সময় কর্মহীন থাকা শ্রমিকদের মাঝে খাবার বিতরণ করবেন বলেও সূত্র জানিয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধখুলেছে অফিস আদালত
পরবর্তী নিবন্ধসীমিত ইন্টারনেটের ধাক্কা পুঁজিবাজারে, বড় দরপতনে লেনদেন তলানিতে