তিথিদের ঘরের পাশেই বিশাল পুকুর। পুকুরে কই, মাগুর, শৈল, রুই, দাড়িয়া, খলসে ও পুটি মনের আনন্দে খেলা করে বেড়ায় সারাদিন। পুকুরের পানিতে মাছের খেলা দেখা কার না ভালো লাগে ?
তিথি, সজিব, মিথিলা এরা ভাই বোন। সবাই এক সাথে খেলতে ভালোবাসে। দুপুর গড়িয়ে যখন বিকেলটা হাসে দুয়ারে, সূয্য মামার তখন নিজের তেজটা কমাতে শুরু করে। রঙ কমলার ন্যায় আলোটা অনন্য সুন্দর মহিমা ঢালে। ক্ষণটা ছোট বড় সকলেরই প্রিয় বলা যায়। সেই সময়ে সজিব তিথিরা খেলতে ছাঁদে উঠে।
ছাঁদে উঠলে পুরো পুকুরটাই এক নজরে দেখা যায়। অই সময়েই কই ,মাগুর, শৈল মাছেরা লুকোচুরি খেলে আনন্দ উল্লাসে পুকুর জুড়ে। মাছদের খেলা দেখে সজিব তিথিরাও ভারি আনন্দ উপভোগ করে। কখনো কখনো ঘর থেকে বিস্কুট, মুড়ি নিয়ে ছুঁড়ে মারে পানিতে। খাবার পেয়ে মাছগুলোর লাফালাফি দেখতে কত না চমৎকার!
পুকুরের পানিতে মাছের খুশি, ঘরের ছাঁদে তিথিদের উল্লাস যেন নিত্যদিনের ঘটনা। মিথিলা ছোট। তাই ছাদ ওয়াল টপকিয়ে পুকুরে দেখতে পারে না। কোলে নিলে মহা খুশি। কোলে নিলে খুশিতে ছুঁড়ে মারে হাতে থাকা খাবার মাছের উদ্দেশ্যে। মাছগুলোও খাবার পেয়ে খুশিতে খেলে পানিতে।
প্রতিদিন এভাবে করতে করতে মাছদের সাথে একটা ভাব জমে গেল ওদের। ঝড়–বৃষ্টি রোদ বাতাসেও যেন কোনদিন মিছ হয়না এই ভাব জমানো খেলা দেখা। অনেক সময় মা বাঁধা দিলেও লুকিয়ে এসে হলেও একবার খাবার দিয়ে যাবে কেউ না কেউ। মাছগুলোও প্রতিদিন নিদ্দিষ্ট সময়ে ঠিক যেন অপেক্ষায় থাকে খাবারের প্রত্যাশায়। নিত্য দিনের সখ্যতায় মাছ গুলোর সাথে সজীবদেরও একটা আন্তরিকতা গড়ে ওঠল পরম মমতা স্বরূপ। কোনো কোনো সময় বুড়ো দাদীকেও ডেকে নিয়ে আসে ছাঁদে মাছ দেখার জন্য। দাদীও সঙ্গ দেয় আদরের নাতিদের। খুশিতে রঙ ঢালে বয়াম খুলে কথার জৌলুসে। দিনের আলো যখন ছুটি নিয়ে রাতকে আহবান জানায় তখন আকাশ ময়দানে ফুটতে শুরু করে তারার ফুল গুলো। চাঁদের আলোয় আলোকিত হয় সর্বস্থান। পুকুরের পানিতে যদিও মাছ গুলো তখন দূর থেকে দেখা যায় না। কিন্তু মাছের খেলায় ঢেউ তরঙ্গের মৃদু স্বরে অন্যরকম আনন্দ উপভোগে অবতীর্ণ হয় সজীব তিথিরা।
কোনো কোনো সময় মা কাকিরাও ছাঁদে এসে আড্ডা দেয়। আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে সকলে মাছের খেলা দেখে। মিথিলা ওঠে মায়ের কোলে। মন জুড়ে যেন আনন্দে ভরপুর। বুঝতে পারে ওদের মা কাকিরাও। ছোট্ট মিথিলা অবুঝ মনে ডাক দেয় অই মাছ, অই মাছ আয় না আমাদের সাথে ছাঁদে খেলতে। তখন সবাই অট্ট হাসিতে মেতে ওঠে। আচ্ছা মা, রাতে মাছ গুলো কোথায় ঘুমায় ? রাতে পানিতে ওদের ঠাণ্ডা লাগে না ? শিশু বয়সে এমনই তো আকাঙ্খা জাগে কচি কোমল মনে। একজন আরেক জনকে বলে, অই দেখ, চাঁদের বুড়ি বসে বসে মরিচ বাটে। অন্যজন বলে, না না, চাঁদের বুড়ি একটি বুড়ো বট গাছের নিচে বসে কাঁথা সেলাই করছে। না না, চাঁদের বুড়ি কম্বল গায়ে দিয়ে গাছের নিচে বসে ধান শুকোচ্ছে। আরো কত কথার ফুলঝুঁড়ি কল্পনার জগতে ঢেউ তুলছে ওদের মনে বলা মুশকিল।
এভাবেই চাঁদ জোস্নার আলোতে ভাইবোন মিলে ছাদে খেলার মশগুলে মেতে ওঠে। মা কাকি, দাদীও কঁচি মনের আনন্দ বাড়িয়ে দিতে সঙ্গ দিতে ভুল করে না। এভাবে খেলতে খেলতে শিশুরা প্রশ্ন করতে শেখে। জানার পরিসীমা বৃদ্ধি করে জ্ঞানের পরিমণ্ডলে। শিশুরা শেখে খেলায়, নন্দ খুশির পরিবেশে মেলামেশায়।