সীতাকুণ্ডের কচু ফুল যাচ্ছে প্রত্যন্ত অঞ্চলে

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি | বুধবার , ২৪ জুলাই, ২০২৪ at ৩:৩৮ অপরাহ্ণ

সীতাকুণ্ডে পুষ্টিকর সবজি কচুফুলের এখানকার হাটবাজারগুলোতে অনেক চাহিদা। তাই এ সবজি উপজেলার সবজির চাহিদা মিটিয়ে এখন থেকে দেশের বিভিন্ন জেলার শহর গুলোতে যাচ্ছে । চলতি মৌসুমে এবার ১০ হেক্টর জমিতে ১৪৫ জন কৃষক পুষ্টিকর সবজি কচুর উৎপাদন চাষ করেছেন।

প্রতিটি মৌসুমে ফৌজদারহাট, ভাটিয়ারী, কুমিরা বড়দারোগার হাট, ছোট দারোগারহাট, টেরিয়াইল, পন্থিছিলা নুনাছড়া, শেখের হাট, মুরাদপুর, ভাটেরখীল, গুলিয়াখালী, বাড়বকুণ্ড, পৌরসভা এলাকাসহ প্রভৃতি অঞ্চলে কম বেশি কচুর উৎপাদন হয়ে থাকে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয় ২ নাম্বার ইউনিয়নের বড়দারোগার হাটের সাগরের বেড়িবাঁধ এলাকায়। এখানকার কৃষি পরিবারগুলো কচুর ফুল, লতি, ডগা, কচুর ছড়া, কচুসহ অন্তত ৬ রকমের পুষ্টিকর সবজি উৎপাদন হয় একটি কচু গাছ থেকে। বিক্রি ও লাভ বেশি হওয়ায় কৃষক পরিবারগুলো ক্রমশ কচুর চাষে দিনদিন আগ্রহী হয়ে উঠছে। এদিকে বড়দারোগার হাটের টেরিয়াইল ব্লকে দায়িত্বে থাকা উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা বলেন, এখানে সাগরের বেড়িবাঁধ থেকে শুরুকরে সর্বত্রই কচুর চাষ হয়ে থাকে। একটি কচু গাছে কচুর ফুলসহ ৬ রকমের পুষ্টিকর সবজি সংগ্রহ করা যায়। যা মানুষের দেহের জন্য খুবই প্রয়োজন। কচুর অনেক গুণ রয়েছে। যা অন্য কোনো সবজিতে নেই। এ এলাকায় প্রায় ৪০ জনেরও বেশি কৃষক কচুর চাষ করে আসছেন। বর্তমানে কচুর চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকের সংখ্যাও বাড়তে শুরু করেছে। তাই কচু চাষকরে অনেক লাভবান হচ্ছেন কৃষক পরিবার। অপরদিকে একাধিক কৃষক জানান, কচু চাষে লাভ হয় সবচেয়ে বেশি। কচুর ফুল ও বিভিন্ন শাখা প্রশাখার দামও ভাল পাওয়া যায়। একটি কচু গাছ থেকে অনেক রকম সবজি পাওয়া যায়। যা অন্য কোনো সবজি থেকে এতো রকমের সবজি পাওয়া যায়না। একসময় এ সবজির কদর ছিলনা বললে চলে। সবজির পুষ্টিকর সম্পর্কে অনেকের জানা ছিল না। ফলে কৃষকরা ঐ সময় এই সবজির চাষ করে তা হাট বাজারে বিক্রি করতে অনেক কষ্ট হতো। বর্তমানে এখন আর সে দিন নেই। দিন পাল্টেছে মানুষও কচুর পৃষ্টির সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে পেরেছে। তাই দেশের সর্বস্তরের মানুষদের কাছে কচু গাছের বিভিন্ন রকম সবজি গুলো ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বড় বড় রেস্তোরা ও দেশের প্রায় প্রতিটি ঘরে সর্বত্রই এখন কচুর ফুলসহ কচু গাছের সব রকম সবজি পাওয়া যায়। ফলে উপজেলার বিভিন্ন হাট থেকে কৃষকদের উৎপাদিত এই সবজি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ে যাচ্ছে আগত পাইকাররাও। কৃষক পরিবার গুলো জানিয়েছেন,গত কয়েক বছর পূর্বেও গ্রাম্য হাটগুলোতে তেমন কচুর চাহিদা একেবারেই ছিলনা। সবাই এ সবজিকে অবহেলার চোখে দেখতেন। কিন্তু এখন এ সবজির পুষ্টির কথা জানতে পেরে সবজিটি অনেকটা জনপ্রিয় হয়ে উঠে। বর্তমানে সড়কের আশে পাশে কম বেশি কচুর গাছ দেখা গেলেও কৃষকরা বাণিজ্যিক ভাবে তাদের জমি গুলোতে কচুর চাষ শুরু করেছেন। প্রতিটি হাটে ও গ্রামের সড়ক দিয়ে ভ্যান ও বিভিন্ন গাড়ি করে কৃষকদের উৎপাদিত কচুর ফুল সহ অন্তত একই গাছের ৬ রকমের সবজি পাইকারদের কাছে বিক্রির উদ্দেশ্যে উপজেলার হাট বাজারে নিয়ে আসেন পৌর এলাকার সহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের খেটে খাওয়া কৃষক পরিবারগুলো। এদিকে বড়দারোগার হাট এলাকার কৃষক মোঃ আলমগীর বলেন, পৌষ এবং ফাল্গুন মাসে ৩০ শতক জমিতে কচুর চাষ করেছি। তখন ফসল তোলা থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত খরচ পরেছে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা।

তিনি বলেন, প্রতিটি কচুগাছ থেকে সর্বচ্চ ৩টি করে ফুল পাওয়া যায়। এসব ফুল ৫০ থেকে ১২০টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছি। এছাড়া সাইজ অনুযায়ী প্রতিপিস কচু ৩০ থেকে ৫০ লতি ৩০ টাকা,ডগা ৫০ এভাবে সবমিলিয়ে কমপক্ষে দেড় লক্ষ টাকার মত বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন। তিনি বলেন, কচুর বিভিন্ন শাখা প্রশাখা বিক্রিকরা হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় এবারও কচুর অন্তত ৬ রকম সবজি বিক্রি করা হয়েছে। তিনি আশা করছেন এ মৌসুমে গত বছর থেকেও এবছর কচুতে লাভ করতে হবে বেশি বিক্রি করা যাবে। মৌসুমের দু’ একমাস থেকে কচুর ফুলও গাছের বিভিন্ন কচুর শাখা প্রশাখা পুষ্টিকর সবজি বিক্রি শুরু হলেও চলতি আষাঢ় মাসের প্রথম থেকে ব্যাপক হারে বিক্রি শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, এখানে আমার মত কৃষক মোঃ শাহাজান ও কচুর চাষ করেছেন। এ বিষয় উপজেলা কৃষি অফিসার ও কৃষিবিদ মোঃ হাবিবুল্লাহ বলেন, চলতি মৌসুমে ১০হেক্টর জমিতে প্রায় ১৪৫ জন কৃষক কচুর চাষ করেছেন। শুধু মাত্র এ পুষ্টিকর সবজি থেকে অন্তত ৬ রকমের সুস্বাদু পুষ্টিকর সবজি পাওয়া যায়। যা আর কোনো সবজি থেকে পাওয়া যায়না। তবে পূর্বে কৃষকের সংখ্যা অনেক কম ছিল। এ সবজিটি অতি লাভজনক হওয়ায় বর্তমানে কৃষকদের সংখ্যাও দিনদিন বেড়ে চলেছে। অন্যদিকে ক্রেতারাও এই সবজির পুষ্টির সম্পর্কে জানতে পেরে এ সবজির কদরও বেড়েছে অনেকগুণ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাপের সন্ধানে ছুটে তারা, সাপের সাথে সন্ধি
পরবর্তী নিবন্ধগোলপাহাড় মহাশ্মশান কালী মন্দিরে পাল্টা মনসা পুঁতি ১ আগস্ট