টানা ৬৫ দিন পর গত মধ্যরাত থেকে সাগরে মাছ ধরা শুরু হয়েছে। তবে ২৮৪টি ফিশিং ভ্যাসেলের একটিও যেতে পারেনি। অফিস বন্ধ এবং ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় সেইলিং পারমিশন না পাওয়ায় বড় বড় জাহাজগুলো গভীর সাগরে মাছ শিকারে যাওয়ার সুযোগ পায়নি। এছাড়া সাগরও উত্তাল রয়েছে। তবে গত মধ্যরাতে ইঞ্জিন চালিত মৎস্য নৌযানগুলো উপকূলীয় এলাকায় মাছ শিকারের জন্য যাত্রা করেছে। আবহাওয়া বিভাগের ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত উপেক্ষা করে ইঞ্জিন চালিত ছোট আকৃতির অসংখ্য নৌযান সাগরে যাত্রা করেছে।
জেলা মৎস্য বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, সামুদ্রিক মাছের প্রজনন মৌসুমে টানা ৬৫ দিন মৎস্য শিকার নিষিদ্ধ ছিল। গত ২০ মে থেকে শুরু হওয়া নিষেধাজ্ঞা গত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলেও প্রতিকূল আবহাওয়ায় সাগর উত্তাল রয়েছে। এই অবস্থায় গভীর সাগরে যাওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়ে সংশ্লিষ্ট মৎস্যজীবীরা বলেছেন, আমাদের ছোটখাটো কিছু কিছু নৌযান উপকূলীয় এলাকায় মাছ শিকারে যাত্রা করেছে। তবে বড় এবং কাঠবডির ট্রলারগুলো সাগরে যেতে পারেনি।
বঙ্গোপসাগর থেকে বছরে ৫ লাখ টনের বেশি ইলিশসহ বিভিন্ন ধরনের লাখ লাখ টন মাছ শিকার করা হয়। এসব মাছ শিকারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে ২৮৪টি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ভ্যাসেল বা ফিশিং ভ্যাসেল। বড় আকৃতির এসব জাহাজ সাগরে যেতে হলে সেইলিং পারমিশন নিতে হয়। কিন্তু কারফিউ এবং সাধারণ ছুটির কারণে অফিস বন্ধ থাকায় একটি জাহাজও সেইলিং পারমিশন পায়নি। ফলে এসব জাহাজের সাগরযাত্রার সুযোগ নেই। অবশ্য সেইলিং পারমিশন থাকলেও সাগর উত্তাল হওয়ায় এসব জাহাজ গভীর সাগরে মাছ ধরতে যেতে পারত না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। জাহাজগুলো সাগরে যাওয়ার জন্য গত কয়েকদিন ধরে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিল।
মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম নামে একজন জাহাজ মালিক জানান, আজ অফিস চালু হলে আমরা সেইলিং পারমিশন সংগ্রহ করব। সাগর শান্ত হলে জাহাজগুলোকে মাছ শিকারের জন্য পাঠানো হবে।
বড় জাহাজ এবং ট্রলারগুলো সাগরে যেতে না পারলেও ইঞ্জিন চালিত ছোট আকৃতির মৎস্য নৌযানগুলো গত মধ্যরাতে উপকূলীয় এলাকায় মাছ শিকার শুরু করেছে বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, কয়েক হাজার জেলে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকায় সাগরে মাছ শিকার শুরু করেছে। এসব মাছ আজ সন্ধ্যা নাগাদ স্থানীয় বাজারে আসবে বলে জানান তিনি।
সীতাকুণ্ড উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামালউদ্দিন চৌধুরী গতকাল গভীর রাতে জানান, নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর উপকূলীয় এলাকায় মাছ শিকার শুরু হয়েছে। শত শত জেলে ছোট আকৃতির নৌযান নিয়ে সাগরে মাছ শিকার করতে গেছে। তিনি বলেন, সামুদ্রিক মাছের প্রজনন মৌসুমকে সুরক্ষা দিতে টানা ৬৫ দিন মাছ শিকার বন্ধ ছিল। এই সময়ে মাছের প্রজনন ছাড়াও সাগরে মাছের আকৃতি বড় হয়েছে। সরকার দেশের সামুদ্রিক মাছের উৎপাদন বাড়াতে ৬৫ দিন মাছ শিকার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছে। এর সুফল মিলবে। জেলেরা পুরোদমে মাছ শিকারে গেলে বাজারে মাছের প্রবাহ বাড়বে।