চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল, টেক্সটাইল, ইঞ্জিনিয়ারিং ও অন্যান্য কলেজ বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দিনভর দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষের পর বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন রাতে এক চিঠিতে এই সিদ্ধান্ত জানায়। এর আগে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সব কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গত রাতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের পরিচালক মো. আতাউর রহমানের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
ইউজিসির সচিব ফেরদৌস জামান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় দেশের সকল পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত মেডিকেল, টেক্সটাইল, ইঞ্জিনিয়ারিং ও অন্যান্য কলেজসহ সকল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। একই সাথে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে আবাসিক হল ত্যাগের নির্দেশনা দিয়ে নিরাপদ আবাসস্থলে অবস্থানের নির্দেশনা প্রদানের নিমিত্ত নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো হলো।
মঞ্জুরি কমিশনের ওই চিঠি দেশের সব পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়া দেশের প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হলো।
এর আগে দেশের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সব স্কুল–কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের ঘোষণা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিদ্যালয় ও কলেজগামী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
এছাড়া সব শিক্ষা বোর্ডের আগামীকাল বৃহস্পতিবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও স্থগিত করে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি। স্থগিত হওয়া পরীক্ষার পরিবর্তিত সময়সূচি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পরবর্তীতে জানিয়ে দেওয়া হবে। আর আগামী রোববার থেকে পূর্বঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী পরীক্ষা যথারীতিতে চলবে বলে জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
তবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে কোনো সিদ্ধান্ত রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত জানানো হয়নি।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কলেজ–প্রতিষ্ঠান বন্ধ : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সব কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গত রাতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের পরিচালক মো. আতাউর রহমানের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কলেজ ও প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
তবে এই সময়ে পরীক্ষা বন্ধ থাকবে কিনা তা জানতে চাইলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক মো. মশিউর রহমান বলেন, আমরা আলোচনা করে, চিন্তা করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখানে পরীক্ষার কথা উল্লেখ করা হয়নি। কারণ, খুব শিগগির আমাদের পরীক্ষা নেই। একটা ছোট পরীক্ষা আছে, সেটাও বন্ধ করতে বলা হয়েছে। অবশ্য ছোট পরীক্ষা বলতে তিনি কোন পরীক্ষাকে বুঝিয়েছেন, তা পরিষ্কার হওয়া যায়নি।
সরকারি চাকরির কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে গতকাল সকাল থেকে ঢাকার বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশী। এই আন্দোলনে স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদেরও অংশ নিতে দেখা যায়। দিনভর আন্দোলেনে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সব বয়সী মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এই আন্দোলনের মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে সংঘর্ষে শিক্ষার্থী, পথচারীসহ ছয়জনের প্রাণ গেছে।