চট্টগ্রামে দফায় দফায় সংঘর্ষ

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সাথে ছাত্রলীগের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ষোলশহর থেকে দুই নম্বর গেট পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে এই সংঘর্ষ দুই সাংবাদিকসহ উভয় পক্ষে আহত ১০

চবি প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ১৬ জুলাই, ২০২৪ at ৭:২২ পূর্বাহ্ণ

কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নগরীর ষোলশহরে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় গতকাল উত্তপ্ত ছিল নগরী। একই সময়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটাবিরোধী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপরও হামলা চালিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগ। এতে ১০ জনেরও বেশি গুরুতর আহত হয়েছেন। আন্দোলনের জন্য চবি থেকে শাটল ট্রেনে নিয়ে শহরে আসার সময় ছাত্র আন্দোলনের সহসমন্বয়ক তালাত মাহমুদ রাফিকে মারধর করে প্রক্টর অফিসে নিয়ে যায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

এদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) আন্দোলনকারীদের ওপর দুই দফায় হামলা চালিয়েছে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় দুইজন গুরুতর আহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার বিকেল ৫টায় নগরের ষোলশহর এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেয়ার খবর শুনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সেদিকে এগোতে থাকলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা রেল লাইনের পাথর নিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ওপর ছুঁড়ে মারে। এসময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও আন্দোলনকারীদের দিকে পাথর ছুঁড়ে মারে। এসময় দুপক্ষই রেল লাইনের পাথর একে অপরের দিকে ছুঁড়ে মারলে পুরো এলাকা উত্তপ্ত হয়ে উঠে। পুরো সড়কে রেল লাইনের পাথর ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে। সংঘর্ষের ঘটনা ষোলশহরমুরাদপুর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় পুরো সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। একপর্যায়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা স্টেশন থেকে ছত্রভঙ্গ হয়ে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) কার্যালয়ের সামনে আসে। সেখানেও দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বিকেল সাড়ে ৫টায় গিয়ে দেখা যায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ষোলশহর রেল স্টেশন এলাকায় ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দুই নম্বর গেট ও মুরাদপুর এলাকায় অবস্থান নিয়েছে। সংঘর্ষের সময় দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়াপাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ সময় দুই সাংবাদিকসহ উভয় পক্ষের ১০ থেকে ১২ জনের মতো আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।

ঘটনাস্থল ঘুরে দেখা গেছে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের অনেকের হাতে রয়েছে লাঠিসোঁটা। তারা বিক্ষুব্ধ হয়ে বিভিন্ন অলিগলিতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে এবং ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দিতে দেখা যায়। আশপাশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরকে সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে।

ষোলশহর স্টেশন মাস্টার জয়নাল আবেদিন বলেন, মূলত ধাওয়াপাল্টা শুরু হলে উভয় পক্ষ লাঠিসোঁটা নিয়ে মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে ঠিকাদারের জমানো পাথরের স্তুপ থেকে শিক্ষার্থীরা পাথর নিয়ে ছোড়াছুড়ি শুরু করে। এ বিষয়ে রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।

গতকাল সোমবার আড়াইটার কোটাবিরোধী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ট্রেনে শহরে যেতে গেলে শাটল বন্ধ করে দেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসময় তারা কোটা আন্দোলনের সহসমন্বয়ক তালাত মাহমুদ রাফিকে আটকে রেখে জেরা শুরু করে। এক পর্যায়ে তাকে চড় থাপ্পড় দিয়ে মিছিলসহ প্রক্টর অফিসে নিয়ে যায়। এসময় প্রক্টর কার্যালয়ে প্রক্টরিয়াল বডির উপস্থিতিতে রাফিকে মারধর করে ছাত্রলীগের কর্মীরা। রাফিকে প্রক্টর অফিসে ছাত্রলীগ নিয়ে যাচ্ছে এমন খবর শুনে কোটা সংস্কার আন্দোলনের কয়েকজন প্রক্টর অফিসের দিকে আসতে থাকে। এক পর্যায়ে শহীদ মিনারের সামনে কোটা সংস্কার আন্দলোনের কয়েকজনকে মারধর করা হয়। এক শিক্ষার্থী মাহবুব রহমানকে ব্যাট দিয়ে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেয়।

এর আগে প্রক্টর অফিসে রাফির বিরুদ্ধে কোটা আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলার অভিযোগ আনেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তারা রাফির মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে ভর্তি বাতিলের দাবি জানান।

চবি ছাত্রলীগের নেতারা বলেন, কোটা আন্দোলন আমরাও সমর্থন করেছিলাম। আমরা যৌক্তিক সংস্কার চেয়েছি। কিন্তু তারা কালকে নিজেদের রাজাকার দাবি করে স্লোগান দিয়েছে। আমরা চবি ক্যাম্পাসে কোনো রাজাকার বরদাস্ত করবো না।

রাফিকে উদ্ধার করতে আসা এক ছাত্রী বলেন, আমরা যৌক্তিক আন্দোলন করতে এসেছি। কিন্তু আমাদের ভাইকে তুলে নিয়ে আসা হয়েছে। তাকে মারধর করা হয়েছে। এছাড়া আমাদের কয়েকজন আন্দোলনকারীকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে উপাচার্যপ্রক্টর আমাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

কোটা আন্দোলনের চবি সহসমন্বয়ক রাফি বলেন, আজকের (সোমবার) কর্মসূচি ছিল ৩টা ৩০ মিনিটে ষোলশহরে। সেখানে যাওয়ার জন্য আমি ট্রেনে উঠি তারপর আমাকে শাটল থেকে নামানো হয়। আমার গায়েও হাত তোলা হয়, অনেকেই উত্তেজিত অবস্থায় মারমুখী ছিল। আমাকে বাধ্য করা হয়েছে যেন আমি শাটল থেকে নেমে আসি। আমাদের আন্দোলনে যোগদান করার কথা ছিল আমার, কিন্তু যেতে পারিনি। আমরা গতকাল রোববার রাতে যে শ্লোগান দিয়েছিলাম এটা একটা আইরনি, এটা একটা প্রতিবাদের ভাষা। হাজার হাজার স্টুডেন্ট আন্দোলন করতেছে তারা তো রাজাকার না। আমার আমাদের ন্যায্য দাবির জন্য নেমেছি, আমরা আমাদের অধিকারের জন্য নেমেছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

চবি প্রক্টর প্রফেসর ড. অহিদুল আলম আন্দোলনকারীদের বলেন, আমাদেরকে ইউজিসি থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে শিক্ষার্থীরা আদালতের রায় মেনে যেন ক্লাসে ফিরে যায়। তোমরা যৌক্তিক দাবিতে আদালতে আইনি লড়াই করবে। কিন্তু ভোগান্তি সৃষ্টি করে কোনো আন্দোলন যেন শিক্ষার্থীরা না করে। যদি তোমরা আদালতের রায় মেনে নাও তাহলে আমরা তোমাদের পাশে আছি। অন্যথায় আমরা তোমাদের পাশে নেই। ছাত্রলীগের হামলাকারীদের ব্যাপারে প্রক্টর বলেন, কারা হামলা করেছে আমরা জানি না। যদি কোন লিখিত অভিযোগ আসে তাহলে আমরা ব্যবস্থা নেব।

এর আগে রোববার রাত ১১টায় কোটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদে কোটা আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ মিছিল বের চবি এলাকায়। এসময় তারা নিজেদের রাজাকার দাবি করে স্লোগান দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিতর্কিত করেছে বলে অভিযোগ করেছেন ছাত্রলীগের নেতারা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৫০ কোটি টাকার ৪ কেজি কোকেনসহ বিদেশি আটক
পরবর্তী নিবন্ধকক্সবাজার সৈকতে গোসলে নেমে পর্যটক নিখোঁজ