কক্সবাজার শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে অবশেষে নালার ওপর গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে কক্সবাজার পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। গতকাল রোববার বেলা ১২টার দিকে শহরের বাহারছড়া এলাকা থেকে এ অভিযান শুরু হয়। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে চালানো এ অভিযানে সরকারি গণগ্রন্থাগারের দুটি দেয়ালসহ অন্তত ১০টি অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এ সময় বেশ কয়েকটি স্থাপনার মালিককে নিজ উদ্যোগে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়।
পৌরসভার অভিযান চলাকালে সরকারি গণগ্রন্থাগারের দেয়াল উচ্ছেদ না করতে পৌরসভার মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরীকে অনুরোধ করেন জেলা প্রশাসনের রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (আরডিসি) মনজুর আলম। পরে নালার ওপর নির্মিত ভবনটির মধ্যভাগের প্রায় ৫ ফুট অংশ তিন দিনের মধ্যে নিজ উদ্যোগে ভেঙে ফেলার নির্দেশনা দেন মেয়র। অন্যথায় তিন দিন পরে পৌর কর্তৃপক্ষ অবৈধ ভবনের অংশ ভেঙে নালা দখলমুক্ত করা হবে বলে জানান। এরপর শহরের বিমানবন্দর সড়কস্থ নুনিয়ারছড়ার কানাইবাজারের পার্শ্ববর্তী এলাকায় অভিযান চালিয়ে নালার ওপর নির্মিত ৯টি অবৈধ স্থাপনা ভেঙে ফেলা হয়।
অভিযান শেষে কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী আজাদীকে বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে শহরের সব নালা–নর্দমা দখলমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত রাখা হবে। কিছু অবৈধ স্থাপনার কারণে পর্যটন শহর ডুবে থাকবে, তা মেনে নেওয়া হবে না।
এর আগে গত শনিবার বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত কক্সবাজার পৌরসভার সভায় কক্সবাজার শহরে জলাবদ্ধতার পেছনে চারটি কারণ চিহ্নিত করা হয়। এর মধ্যে নালা দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ, পাহাড় কাটা ও বাসা–বাড়ির ময়লা–আবর্জনা নালায় ফেলার কারণে নালা ভরাট হয়ে যাওয়া এবং অপরিকল্পিত উন্নয়নই অন্যতম প্রধান কারণ। আর সংকট নিরসনে প্রথম ধাপে গতকাল থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও নালা পরিষ্কার অভিযান শুরুর সিদ্ধান্ত নেয় কক্সবাজার পৌরসভা কর্তৃপক্ষ।
কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, বৃহস্পতিবারের ভারী বৃষ্টিতে কক্সবাজার পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এর পেছনের কারণ চিহ্নিত করার জন্য কক্সবাজার পৌরসভার উদ্যোগে একটি বিশেষজ্ঞ দল গঠনের পর তারা প্রধানত চারটি কারণকেই দায়ী করেন। এরই প্রেক্ষিতে গত শনিবার অনুষ্ঠিত পৌর পরিষদের এক সভায় রোববার থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই সাথে নালা–নর্দমা পরিষ্কারে অতিরিক্ত লোকবল নিয়োগ দেওয়া হয়। অন্যান্য সমস্যাসমূহ সমাধানেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
গত বুধবার দিবাগত রাত ও বৃহস্পতিবার সকালের ভারী বর্ষণে কক্সবাজার শহরের রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যায়। বন্যার পানি ঢুকে যায় বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। এতে জনভোগান্তি হয়। বিশেষ করে শহরের সাগর তীরবর্তী কলাতলী পর্যটন এলাকায়। এখানেই অন্তত ৩৫০টি হোটেল–মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্টহাউস রয়েছে। অধিকাংশ পর্যটক বেড়াতে এসে এখানেই উঠেন।
পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, এখন পর্যটনে অফসিজন চলছে। তারপরও সাপ্তাহিক ছুটিতে কক্সবাজারে কমপক্ষে ২০ থেকে ৩০ হাজার পর্যটক আসছেন।