মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। ‘আশরাফুল মাখলুকাত’। সৃষ্টিকর্তা মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে সৃষ্টি করেছেন, অন্য সকল জীব থেকে আলাদা করে উন্নত ও সুগঠিত মস্তিষ্ক দিয়ে। আর তাই মানুষের আছে সুখ দুঃখের অনুভূতি, আছে সহানুভূতি প্রকাশের ক্ষমতা, আছে বিবেকবোধ। কিন্তু সে বিবেকবোধ যদি এমন হয় সারাক্ষণ অহংকার, দাম্ভিকতা আর হিংসায় মত্ত থাকা, বিপদে সাহায্য করে বিনিময়ে তার অসহায়ত্বের সুযোগ নেয়া, দুর্বলতার সুযোগ খোঁজা আর অন্যের সাথে প্রতি পদক্ষেপে অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নামা! প্রতিযোগিতা করা উচিত নিজের মনের সাথে, পরিবর্তন করা দরকার নিজের মানসিকতা। কারণ অন্যের সাথে প্রতিযোগিতা মানুষকে অধঃপতনের দিকে নিয়ে যায়, পক্ষান্তরে নিজের সাথে প্রতিযোগিতা নিজেকে আলোকিত করার পথ দেখায়। আর মানুষ নিজের সামান্য স্বার্থের বশীভূত হয়ে যে বিকেক বর্জিত কাজ করতে পারে, তা সৃষ্টির জগতে আর কোন প্রাণীই করে না। সমাজ এবং প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধনের ফলে মানুষ আজ প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করছে। দৈনন্দিন কাজ সহজতর করতে অফিস থেকে ঘরের সব কাজই করছে কৃত্রিম রোবট। শুধু মানবিক গুণাবলী আর অনুভূতি নেই বলে, মানুষ থেকে আলাদা। কিন্তু মানুষ তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েও উন্নত বিবেকের কাজ কি করছে? করলে সার্থান্বষী মানুষ সারাক্ষণ অন্যের দোষ খোঁজা, আরেকজনকে হেয় করা, গীবত করা, পরচর্চা করা থেকে বিরত থেকে মানুষকে ভালোবাসত, নিজের স্বার্থের জন্য অপরের ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকত, অন্যের সাথে প্রতিযোগিতা করার মানসিকতা ত্যাগ করত, সবসময় অন্যের সম্পর্কে ইতিবাচক মানসিকতা দেখাত, নিজের হীনমন্যতা পরিহার করে অপরের প্রশংসায় উদার হত, সবসময় অপরের মঙ্গল কামনায় থাকত কেননা অপরের জন্য প্রার্থনা করলেই বিধাতা নিজের প্রার্থনা গ্রহণ করেন। মানুষ একবার ও অনুভূতি দিয়ে চিন্তা করে না ‘জন্মিলেই মরিতে হইবে’। মৃত্যুই এই জীবনের চরম সত্য। আর মানুষ যদি এই কথাটা স্মরণে রাখত যে, দম ফুরালেই এই পৃথিবী ছেড়ে, এই সুন্দর জীবন, স্বাস্থ্য, অর্থ, সম্পদ, প্রতিপত্তি সব ফেলে চলে যেতে হবে। আর মৃত্যুর পর মানুষ শুধু তার কৃত কর্ম, আর ভালো কাজ, ভালো ব্যবহারই মনে রাখবে। তাই মানুষের বিবেকবোধ যেন জাগ্রত হয়, মানবিকতার উৎকর্ষ সাধনের মধ্য দিয়ে। পরম প্রেমময় পুরুষোত্তমের ভাষায়…‘ভালো করলে ভালোই পাবে, তেমনতর আশা রেখো। তাতেও যদি বিফল হও, ভালো করার পথেই থেকো’।