লোহাগাড়া উপজেলা সদর বটতলী স্টেশনে অপরাধ দমন ও অপরাধী শনাক্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা। চুরি–ডাকাতি, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, কিশোর গ্যাংয়ের উপদ্রবসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে পুরো স্টেশন সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে।
জানা যায়, উপজেলা সদর বটতলী স্টেশনে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ৩২টি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে ১০ লাখ টাকা। সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুল স্টেশনে সিসি ক্যামেরা বসানোর জন্য উপজেলা পরিষদ থেকে বরাদ্দ দেন। ২০২৩ সালের ২০ ডিসেম্বর সিসি ক্যামেরা স্থাপন শেষে কাজ উদ্বোধন করা হয়। বটতলী স্টেশনে বসানো সিসি ক্যামেরার কন্ট্রোল রুম করা হয়েছে থানা ভবনে। যেখান থেকে সরাসরি ব্যস্ততম এই বাণিজ্যিক এলাকা মনিটর করছেন পুলিশ। এছাড়া উপজেলা প্রশাসন ও লোহাগাড়া বটতলী শহর উন্নয়ন কমিটির অফিসে ২টি সিসি ক্যামেরার মনিটর বসানো হয়েছে।
গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, সিসি ক্যামেরা স্থাপনের ফলে সদর বটতলী স্টেশনের কার্যক্রম আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারিতে থাকায় ব্যবসায়ীরা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি নিরাপদ বোধ করছেন। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে দ্রুত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে অপরাধী শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ২৯ এপ্রিল রাতে উপজেলা সদর বটতলী স্টেশনে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে দোকানে রক্ষিত মালামাল লুটপাট ও আসবাবপত্র ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। উক্ত ঘটনায় পুলিশ সিসি ক্যামেরায় ফুটেজ দেখে আসামি শনাক্তপূর্বক আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়। এমন অনেক ঘটনা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে অপরাধীকে শনাক্ত করা হয়। এছাড়া পাশের উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে অপরাধ করে বটতলী স্টেশন হয়ে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়ক দিয়ে অতিক্রম করার সময় সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ে। অন্য এলাকার অনেক ভুক্তভোগী থানায় এসে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহপূর্বক অপরাধী শনাক্ত করেন। ফলে স্টেশনে স্থাপিত সিসি ক্যামেরার কারণে অন্য এলাকার মানুষও উপকৃত হচ্ছেন।
বটতলী স্টেশনের ব্যবসায়ীরা জানান, উপজেলা সদর বটতলী স্টেশন বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মানুষে মুখরিত থাকে। ব্যস্ততম এই স্টেশনে চুরি–ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটলেও প্রমাণের অভাবে অনেক সময় অপরাধীরা পার পেয়ে যেত। এতে উদ্বিগ্ন থাকতো স্টেশনে আসা মানুষ। সিসি ক্যামেরা স্থাপনের পর থেকে বটতলী স্টেশনে চুরিসহ অন্যান্য অপরাধের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। এতে স্টেশনে আসা ক্রেতা–বিক্রেতাসহ সাধারণ মানুষ নিরাপত্তা বোধ করছেন। এছাড়া সিসি ক্যামেরা স্থাপনের আগে স্টেশনে কিশোর গ্যাংয়ের উপদ্রব ছিল লক্ষণীয়। তাদের বেপরোয়া চলাফেরা করার কারণে আতংকের মধ্যে থাকত স্টেশনে আসা লোকজন। বর্তমানে স্টেশনে কিশোর গ্যাংয়ের আনাগোনা নেই বললেই চলে।
লোহাগাড়া বটতলী স্টেশনের ব্যবসায়ী হোছাইন মুহাম্মদ শারফু জানান, সময় যত যাচ্ছে দেশ তথ্য প্রযুক্তিগত দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে। বটতলী স্টেশনে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের পর থেকে অপরাধীদের তৎপরতা অনেকাংশে কমে গেছে। অনেক ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অপরাধীদেরকে আইনের আওতায় এনেছে পুলিশ। এতে ব্যবসায়ীরা স্বস্তি প্রকাশ করছেন।
লোহাগাড়া বটতলী শহর উন্নয়ন কমিটির আহ্বায়ক মো. সালাহ উদ্দিন হিরু জানান, শুধু সিসি ক্যামেরা স্থাপন করলেই হবে না, এগুলো নিয়মিত মনিটরিং ও রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। যদি তা করা না হয় তাহলে অতীতের মতো এই উদ্যোগ কোনো কাজে আসবে না। এই ক্যামেরার মাধ্যমে শনাক্ত হওয়া অপরাধীকে আইনের আওতায় এনে তা প্রচার করতে হবে। তাহলে অপরাধীরা আর স্টেশনে অপরাধ করার সাহস পাবে না। এছাড়া সিসি ক্যামেরা স্থাপনের পর থেকে চুরি, ছিনতাই, মারামারি ও কিশোর গ্যাংয়ের উপদ্রবসহ বিভিন্ন অপরাধ কমে গেছে।
লোহাগাড়া থানার ওসি রাশেদুল ইসলাম জানান, উপজেলা সদরের ব্যস্ততম বাণিজ্যিক কেন্দ্র বটতলী স্টেশনে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনার পর পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। অপরাধী শনাক্তে তথ্যপ্রযুক্তি এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আগে স্টেশনকেন্দ্রিক অপরাধ সংঘটিত হতো, সেগুলো কমেছে। আর অপরাধের ঘটনা ঘটলে সিসি ক্যামেরার সহায়তায় চিহ্নিত করা যাচ্ছে। কোনো এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকলে সেখানে যে কোনো অপরাধী অপরাধ সংঘটনের আগে চিন্তাভাবনা করবে।











