কক্সবাজার শহরসহ জেলার অন্তত ১০ সহস্রাধিক স্থানে প্রতিদিন চলছে পাহাড় কর্তন। এমনকি শতাধিক ফুট উচুঁ পাহাড় কেটেও তার পাদদেশে বসতবাড়ি তৈরি করা হচ্ছে। আর পাহাড় কাটার কারণে বর্ষাকালে ভারী বর্ষণে ঘটে চলেছে পাহাড় ধস। আর এতে দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে কক্সবাজার শহরের সৈকতপাড়ায় পাহাড় ধসে মীম জান্নাত (১৩) নামের আরো এক শিশু নিহত হয়েছে।
নিহত মীম কক্সবাজার শহরের কলাতলী হোটেল–মোটেল জোন সংলগ্ন সৈকত পাড়ার মোহাম্মদ সেলিমের মেয়ে।
এরআগে বুধবার দিবাগত রাত থেকে বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত কক্সবাজার শহরের পৃথক স্থান ও সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের মুহুরীপাড়ায় পাহাড় ধসে দুই নারী ও এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
এ নিয়ে কক্সবাজারে গত তিন সপ্তাহে পৃথক পাহাড় ধসের ঘটনায় ১৮ জনের মৃত্যু হলো। এর মধ্যে উখিয়ার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে একদিনে মারা যায় ১০ জন।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রকিবুজ্জামান স্থানীয়দের বরাতে জানান, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ভারী বর্ষণের সময় শহরের সৈকত পাড়ায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটলে স্থানীয় বাসিন্দা সেলিমের ঘর মাটি চাপা পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয়দের সহায়তায় তিনজনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে। পরে ঘটনাস্থল থেকে মাটি সরিয়ে মীম নামে এক শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
রকিবুজ্জামান বলেন, বুধবার মধ্যরাত থেকে কক্সবাজার শহরে টানা মাঝারি ও ভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোরে শহরের সিকদার বাজার ও এবিসি ঘোনা এবং দুপুরে সদরের ঝিলংজা ইউনিয়নের মহুরী পাড়ায় পাহাড় ধসে এক নারীর মৃত্যু হয়।
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কক্সবাজার শহরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন পাহাড় কাটা চলছে। এমনকি শতাধিক ফুট উচুঁ পাহাড় কেটেও তার পাদদেশে বসতবাড়ি তৈরি করা হচ্ছে। পাহাড় কাটার কারণে বাড়ছে পাহাড় ধসের ঘটনা। একটু ভারী বৃষ্টিপাত হলেই ধসে পড়ছে পাহাড়। এতে ঘটে চলেছে একের পর মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা। এর আগে গত ৩ জুলাই উখিয়ায় রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের দুইটি ক্যাম্পে পাহাড় ধসে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। ১৯ জুন উখিয়ার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির ও আশপাশের কয়েকটি জায়গায় পাহাড় ধসে ৮ জন রোহিঙ্গা ও দুইজন স্থানীয় মারা যায়। এ ঘটনার দুদিন পর ২১ জুন ভোরে কক্সবাজার শহরের বাদশাঘোনা এলাকায় পাহাড় ধসে ঘুমন্ত স্বামী–স্ত্রী নিহত হন। তবে কক্সবাজারে সবচেয়ে ভয়াবহ পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে ২০১০ সালের ১৫ জুন। সেদিন কক্সবাজার শহর, হিমছড়ি ও টেকনাফসহ জেলার বিভিন্নস্থানে পাহাড় ধসে ৬ সেনা সদস্যসহ ৫২ জন মারা যায়। কিন্তু সেই ভয়াবহ পাহাড় ধসের পর প্রশাসন পাহাড় থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি সরিয়ে নিলেও দিন দিন নতুন করে পাহাড় কাটার মহোৎসবের কারণে থামছে না পাহাড় ধস।
পরিবেশবাদী সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা– ‘ধরা’ কক্সবাজার জেলা সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, কক্সবাজারের টেকনাফ সদর, হ্নীলা, বাহারছড়া, হোয়াইক্যং থেকে শুরু করে সদরের ভারুয়াখালী, পিএমখালী, খুরুশকুল, রামুর রশিদনগর, খুনিয়াপালং, মিঠাছড়ি, উখিয়ার রাজাপালং, রত্নাপালং, হলদিয়া পালং, জালিয়াপালং–এ এখন সবচেয়ে বেশি পাহাড় কাটা হচ্ছে। অথচ এই পাহাড় কাটা বন্ধে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন রয়েছে নীরব ভূমিকা পালন করছে।
এবিষয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. শাহীন ইমরান বলেন, আমরা বর্ষার শুরুতেই ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ি এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে এনেছি। এছাড়া ভারী বৃষ্টিপাত হলেই ঝুঁকিপূর্ণ বসতি থেকে সরে যেতে মাইকিং করা হয়। এরপরও যারা সতর্কতা অমান্য করে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাস করে তারা অনেক সময় দুর্ঘটনার শিকার হয়। ভবিষ্যতে এসব ঘটনা রোধে প্রশাসনের পাশাপাশি জনগণকেও সচেতন হতে হবে।