বিশেষ কমিটির বেড়াজাল থেকে মুক্ত হচ্ছে চট্টগ্রামবাসী

এনআইডি সেবা

| শুক্রবার , ১২ জুলাই, ২০২৪ at ৫:১১ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অঞ্চলে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা পেতে দেশের নাগরিকদের এক কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এতে স্বদেশী হয়েও পরিচয় প্রমাণে হেন কোনো দলিল নেই যা দাখিল করতে না হয়। ফলে ভোগান্তির কোনো শেষ থাকে না। তাই চট্টগ্রামবাসীকে বিশেষ কমিটির বেড়াজাল থেকে মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। খবর বাংলানিউজের।

ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলে ভোটার নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের ক্ষেত্রে বিশেষ এলাকার যেসব নাগরিকের একাডেমিক সনদ বা বৈধ কাগজপত্র আছে তাদেরকে সন্দেহভাজন রোহিঙ্গাদের মতো একই ক্যাটাগরিতে না ফেলে তাদের ভোটার নিবন্ধন সহজ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয় সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে। এ জন্য আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাকে সুপারিশসহ ২ সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলে কমিশন। আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা সেই নির্দেশনার আলোকে ১৬ দফা সুপারিশ করেছে ইসিকে। তবে সে সব সুপারিশ আমলে নিয়ে মূলত তিনটি সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সংস্থাটি। প্রথমত, আবেদন এলেই রোহিঙ্গা সন্দেহ নয়, দ্বিতীয়ত, তিনটি ক্যাটাগরিতে আবেদন ভাগ করা, তৃতীয়ত বয়স্কদের মধ্যে যেসব আবেদনকারীর পিতা, মাতা বেঁচে নেই তাদের আবেদন বিশেষ কমিটির মাধ্যমে নিষ্পত্তিকরণ।

জানা গেছে, রোহিঙ্গারা সমতলে ছড়িয়ে পড়ায় ২০১৯ সালে নির্বাচন কমিশন চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৩২টি উপজেলা/থানাকে বিশেষ এলাকা ঘোষণা করে ইসি। ওই ৩২টি উপজেলা/থানার ভোটারযোগ্য ব্যক্তিদের নিবন্ধনের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে ‘বিশেষ কমিটি’ গঠন করা হয়। ওই কমিটির যাচাইবাছাই এবং সুপারিশ প্রাপ্তির পর সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটার নিবন্ধন সম্পন্ন হয়।

বিশেষ এলাকাগুলো হলোকঙবাজার সদর উপজেলা, চকরিয়া, টেকনাফ, রামু, পেকুয়া, উখিয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া। বান্দরবানের সদর, রুমা, থানচি, বোয়াংছড়ি, আলীকদম, লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা। এছাড়াও রাঙামাটির সদর, লংগদু, রাজস্থলী, বিলাইছড়ি, কাপ্তাই, বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি ও বরকল এবং চট্টগ্রামের বোয়ালখালী, পটিয়া, আনোয়ারা, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগড়া, বাঁশখালী, রাঙ্গুনিয়া ও কর্ণফুলী উপজেলাকে বিশেষ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এসব এলাকায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) আহ্বায়ক ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে গঠিত ১৫ সদস্যের বিশেষ কমিটির কাজও নির্ধারণ করে দিয়েছিল ইসি।

কর্মকর্তারা বলছেন, বিশেষে কমিটির মাধ্যমে ভোটার হতে গেলে ভাইবোন, পিতামাতা, দাদাদাদী, মামা, ফুফু, খালা ইত্যাদির তথ্য; বাড়ির জমির দলিলসহ বিভিন্ন ধরণের প্রমাণপত্র দাখিল করতে হয়। এতে রোহিঙ্গা বা ভিনদেশিদের কারণে দেশের নাগরিকদেরও সেবা প্রাপ্তি কঠিন হয়ে যায়। তাই এখন থেকে সব আবেদন বিশেষ কমিটিতে না নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। এতে সমতলের মতোই অধিকাংশ আবেদন নিষ্পত্তি হবে।

ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ এ বিষয়ে বলেন, আমরা কয়েকটি সুপারিশ রাখবো। আর এটা কমিশন অনুমোদন দেবে। বাংলাদেশে যারা ওয়ান থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে, এদেশে জন্ম নিয়েছে, তারা সমতলের মতো আমল যোগ্য হবেন। সোজা হিসাব। তিনি বলেন, আমরা আলোচনায় রেখেছি, তিনটা ক্যাটাগরির আবেদন থাকবে। ক, খ ও গ। শুধু গ ক্যাটাগরির যেটা থাকবে, ৩৯ শতাংশ আবেদন বিশেষ কমিটিতে যাবে। আর সব সমতলের মতো হবে। ৭০ শতাংশ আবেদন এমনিতেই নিষ্পত্তি হয়ে যাবে। আবেদন পাওয়ার পর প্রথমে বাছাই হবে। যারা এই দেশে পড়াশোনা করেছেন, জন্ম নিয়েছেন, বাবামা সরকারি চাকরি করে বা বাংলাদেশেই আছে, এনআইডি আছে, তার ভাই বোনের সব এনআইডি আছে, তারা এই সমতলের মতোই হবে।

অনলি সি () ক্যাটাগরির যারা, তাদের আবেদন বিশেষ কমিটিতে যাবে। যারা বয়স্ক এবং যাদের বাবা মা বেঁচে নেই, এগুলো বিশেষ কমিটিতে যাবে। এখন কমিশন এটা অনুমোদন দিলে সেভাবে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঘটক সেজে মেয়ের পরিবারকে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়, প্রতারক দম্পতি গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধছোটখাটো মুক্তিযোদ্ধা কোটা রাখা যেতে পারে, মনে করেন খসরু