টানা ভারী বর্ষণের কারণে কক্সবাজারে পৃথক পাহাড় ধসে শিশুসহ ৩ জন নিহত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে কক্সবাজার শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সিকদার বাজার ও এবিসি ঘোনা এলাকা এবং সদরের ঝিলংজার দক্ষিণ মুহুরী পাড়া এলাকায় পাহাড় ধসে এক শিশু ও দুই নারী নিহত হয়েছে। নিহতরা হল– শহরের এবিসি ঘোনা এলাকার মোহাম্মদ করিমের স্ত্রী জমিলা আক্তার (৩০), সিকদার বাজার এলাকার সাইফুল ইসলামের ছেলে নাজমুল হাসান (৫) এবং সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের দক্ষিণ মুহুরী পাড়া পাতাবুনিয়া এলাকার বজল আহমদের স্ত্রী লায়লা বেগম (৩৫)।
কক্সবাজার সদর থানার ওসি মো. রকিবুজ্জামান স্থানীয়দের বরাতে বলেন, বুধবার মধ্যরাত থেকে কক্সবাজারে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। টানা ভারী বর্ষণের কারণে বিভিন্নস্থানে পাহাড় ধসের ঘটনাও ঘটছে। বৃহস্পতিবার ভোরে সিকদার বাজার এলাকায় সাইফুল ইসলামের বাড়ির উপর আকস্মিকভাবে পাহাড় ধসে পড়ে। এতে মাটির দেওয়াল ভেঙে সাইফুলের ঘুমন্ত শিশু চাপা পড়ে। পরে স্থানীয়রা খবর পেয়ে মাটি সরিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন। অন্যদিকে ভোরে শহরের এবিসি ঘোনা এলাকায় পৃথক পাহাড় ধসের ঘটনায় জমিলা আক্তার নামের এক নারীর মৃত্যু হয় বলে জানান ওসি।
জমিলার পরিবারের উদ্বৃতি দিয়ে ওসি বলেন, ভোরে জমিলা আক্তার রান্না ঘরের পাশে এবং তার স্বামী আরেক কক্ষে ঘুমিয়ে ছিলেন। ভোরে আকস্মিক পাহাড় ধসে জমিলা মাটি চাপা পড়েন। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্য চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। অপরদিকে গতকাল বিকাল সাড়ে ৩ টায় কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা ইউনিয়নের দক্ষিণ মুহুরী পাড়ার পাতাবুনিয়া এলাকায় পৃথক পাহাড় ধসের ঘটনায় লায়লা বেগম নামের আরেক নারীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানান ওসি।
নিহত লায়লা বেগমের স্বজনদের বরাতে তিনি বলেন, দুপুরে খাবার খাওয়ার সময় লায়লা বেগম ছেলে জোনায়েদকে কোলে নিয়ে পাহাড়ের মাটি ভাঙছে কিনা দেখতে বেড়ার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছিল। এসময় আকস্মিক পাহাড় ধসে বসতবাড়ির উপর মাটি চাপা পড়ে। এতে তার স্বামী ও অপর ২ মেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে পারলেও লায়লা বেগম ও এক শিশু সন্তান মাটির নিচে চাপা পড়ে। পরে স্থানীয়রা শিশুটিকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করতে পারলেও তার মা ঘটনাস্থলেই মারা যায়। এ ছাড়া কক্সবাজার–টেকনাফ মেরিনড্রাইভ সড়কের হিমছড়ি এলাকায় পাহাড় ধসে সকাল থেকে যান চলাচলে ব্যাহত হয়।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আবদুল হান্নান জানান, বুধবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত কক্সবাজারে ৩৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ৩ জুলাই উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৃথক পাহাড় ধসে দুই জনের মৃত্যু হয়। গত ১৯ জুন উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও আশপাশের এলাকায় পাহাড় ধসে ৮ জন রোহিঙ্গা ও দুই জন স্থানীয় নিহত হয়। এ ঘটনার দুদিন পর গত ২১ জুন ভোরে কক্সবাজার শহরের বাদশাঘোনা এলাকায় পাহাড় ধসে ঘুমন্ত স্বামী–স্ত্রী নিহত হয়।