ভলিবলকে জাগ্রত করাটাই কঠিন চ্যালেঞ্জ দুলাল-জাহেদের সামনে

ক্রীড়া প্রতিবেদক | বুধবার , ১০ জুলাই, ২০২৪ at ৬:৩৯ পূর্বাহ্ণ

একটা সময় ছিল যখন ভলিবল এতদ অঞ্চলের সবচাইতে জনপ্রিয় খেলা গুলোর একটি ছিল। গ্রাম গঞ্জ থেকে শুরু করে শহর পর্যন্ত ভলিবলে মেতে উঠত চট্টগ্রাম। কিন্তু কালের বিবর্তনে যেখানে আরো বেশি জনপ্রিয় হওয়ার কথা ভলিবল সেখানে ক্রমশ বিবর্ণ হয়েছে। যদিও প্রতি বছরই চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থায় ভলিবল লিগ হয়েছে। তাও দুটি। প্রিমিয়ার এবং প্রথম বিভাগ। কিন্তু সে হিসেবে ভলিবল খেলোয়াড় বেরিয়ে আসেনি। চট্টগ্রামের ভলিবল বলতে ভরসার জায়গা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানকার ছেলেরাই চট্টগ্রামের ভলিবলের প্রতিনিধিত্ব করে। অথচ চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার এবং প্রথম বিভাগ লিগে খেলে অনেক গুলো দল। সে লিগ গুলো নিয়েই উঠে নানা প্রশ্ন। কোনমতে একটা লিগ করে তৃপ্তির ঢেকুর তোলাটাই ছিল প্রধান কাজ। এক খেলোয়াড় একাধিক দলের হয়ে খেলা, কারো জার্সি আছেতো প্যান্ট নাই। কখনো খালি পায়ে খেলেছে খেলোয়াড়রা। এরকম নানা অভিযোগ বরাবরই থাকে ভলিবলকে ঘিরে। জাতীয় পর্যায়ে নেই কোন সাফল্য। সব মিলিয়ে একরকম অস্থিতিশীল অবস্থার মধ্য দিয়ে চলেছে চট্টগ্রামের ভলিবল। এবারের সিজেকেএস ভলিবল কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়েছেন সাবেক ভলিবল খেলোয়াড় ওয়াহিদ দুলাল। আর সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তরুণ ক্রীড়া সংগঠক আবু জাহেদকে।

ওয়াহিদ দুলাল বললেন আসলে রাতারাতি এসব ঠিক করা সম্ভব নয়। সময় নিয়ে এগুতে হবে। চেষ্টা করতে হবে নতুন কিছু করার। সেটা অবশ্যই সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। একটা সময় ছিল যখন চট্টগ্রামের খেলোয়াড়রা ঢাকা মাতাতো। এখন ঢাকা থেকে খেলোয়াড় এনে চট্টগ্রামের লিগ খেলাতে হয়। তাই সত্যিকার অর্থে ভলিবল শুধু নয়, যেকোন ইভেন্টে উন্নতি করতে হলে খেলোয়াড় তৈরির বিকল্প কিছু নেই। আর খেলোয়াড় মাটি তৈরি করা যাবেনা। নিতে হবে সঠিক পরিকল্পনা। তিনি বলেন আমরা একটা বুলি সব সময় শুনি প্রশিক্ষনের মাধ্যমে খেলোয়াড় সৃষ্টি করা হবে। কিন্তু সে বুলি বুলিতেই থেকে যায়। সে প্রশিক্ষণ আর হয়না। আবার যখন বছর ঘুরে লিগের কথা উঠে তখন কোনভাবে জোড়াতালি দিয়ে কিছু লোককে দলের দায়িত্ব দিয়েই সব সারা হয়। সত্যিকার অর্থে খেলাটির উন্নয়ন কিংবা খেলোয়াড় সৃষ্টির বিষয়টি আড়ালেই থেকে যায়। তাই যতি সত্যিকার অর্থে খেলোয়াড় সৃষ্টি করতে হয় তাহলে সময় নিয়ে পরিতল্পনা গ্রহন করতে হবে। হয়তো তড়িৎ সাফল্যের কথা ভুলে যেতে হবে। যেহেতু এখন সবাই চেষ্টা করছে নিজেদের ইভেন্টকে সজাগ করতে তাই আমাদেরকেও সে পথে এগুতে হবে। খেলোয়াড় সৃষ্টির পথটা বের করতে হবে। তিনি বলেন এবারের কমিটিতে অনেক সাবেক ভলিবল খেলোয়াড় রয়েছে। পাশাপাশি যারা দীর্ঘ দিন ধরে চট্টগ্রামের ভলিবলের জন্য কাজ করছে তারা রয়েছে। তাই সবাই মিলে একটি সঠিক পরিকল্পনা গ্রহন করতে পারলে ভলিবলকে জাগ্রত করা সম্ভব। তবে স্বল্প মেয়াদে ফল আশা করলে হবেনা। সময় নিয়ে কাজ করতে হবে। স্কুল কিংবা উপজেল পর্যায় থেকে কাজ শুরু করতে হবে। নাহয় আয়োজনের তৃপ্তির ঢেকুর তোলা যাবে কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হবেনা। জাতীয় পর্যায়ে সবশেষ ২০২১ সালে রানার্স আপ হয়েছে। বরাবরই বিভাগীয় পর্যায়ে গিয়ে থমকে যায় চট্টগ্রামের ভলিবলের দৌড়। তাই সময় এসেছে সত্যিকার অর্থে ভলিবলকে নিয়ে ভাবার। এবারের সিজেকেএস ভলিবল কমিটির সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তরুন আবু জাহেদকে। তবে এই তরুণ কাজ করতে মুখিয়ে আছেন। তার ভরসা হচ্ছে কমিটির চেয়ারম্যান এবং সিনিয়র কর্মকর্তাদের অভিজ্ঞতা। সে সবকে কাজে লাগাতে চান জাহেদ। তিনি বলেন কমিটিতে অনেকেই আছেন যারা ভলিবলের জন্য নিবেদিত। তাদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি নতুন কি করা যায় সেটা ভাবতে হবে। আসলে এখন আর বসে থাকার সময় নেই। স্ব স্ব ইভেন্টকে এগিয়ে নিতে হলে সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন আমার মনে হচ্ছে আগামী চার বছরে সাব কমিটি গুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা চলবে। কে কত ভাল করতে পারে। কে কিভাবে সাফল্য আনতে পারে। তাই আমাদেরকেও সেভাবে পরিকল্পনা নিয়ে এগুতে হবে। কারন শেষে যখন মূল্যায়নের বিষয় আসবে তখন কেউ পিছিয়ে থাকতে চাইবেনা। তরুন এই সম্পাদককে নিয়ে কমিটির চেয়ারম্যান ওয়াহিদ দুলালও আশাবাদি। তার মধ্যে কাজ করার প্রচন্ড আগ্রহ রয়েছে। সবকিছু নির্ভর করবে একটি সভা করে কি পরিকল্পনা গ্রহন করা যায় তার উপর।

এবারের ভলিবল কমিটিতে ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়েছে এস কে শামসুল আলম, মোহাম্মদ শোয়াইব, ফরিদ আহমেদ, সাইফুল্লাহ চৌধুরী এবং ইসমাইল কুতুবীকে। তিনজন যুগ্ম সম্পাদক হলেণ জাফর ইকবাল, শামীশ আহমেদ এবং এম এ মুছা বাবলু। এছাড়া সদস্যরা হলেন কুতুব উদ্দিন চৌধুরী, মোহাম্মদ জাফর, সেলিম হক, আবদুর রাজ্জাক মাসুদ, ফরহাদ হোসেন চৌধুরী, ফয়সাল হাবিব, প্রনব দেব দাশ, শহীদুল ইসলাম, জ্বিলহাজ উদ্দিন, মিরাজ উদ্দিন, মাহবুবা শিপু, সাইফুল্লাহ মুনির, এমদাদুল হক এবং মোহাম্মদ ইকবাল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঘর গোছালো ফিরিঙ্গি বাজার লাকি স্টার এবং কিষোয়ান
পরবর্তী নিবন্ধআরজুর সিনেমা ‘গবেট’